পুলিশ কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা নতুন আইজিপির

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

বর্তমান পরিস্থিতিতে রমজানে কঠোরভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশের নতুন ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। যাতে কোনোভাবে পণ্যের মূল্য না বাড়ে। পণ্যের কালোবাজারি রোধ এবং খাদ্যে ভেজাল দেয়া বন্ধে মোবাইল কোর্ট বসানোসহ কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
পাশাপাশি লকডাউন নিশ্চিতে অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রয়োজনীয় চলাচল বন্ধ এবং এ ধরনের প্রবণতা বন্ধে কথা বলেছেন তিনি। আসন্ন রমজানে যেন কোনোভাবেই ফুটপাতে ইফতার তৈরি ও বিক্রি না হয়, কিংবা কেউ ইফতারসামগ্রী বিতরণ করলে যেন সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা হয়, সে বিষয়ে পুলিশকে তৎপর থাকতে বলেন আইজিপি।
আসন্ন রমজান উপলক্ষে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা ও করোনা সংক্রমণের সময়ে করণীয় তুলে ধরে এসব নির্দেশনা দেন আইজিপি।
বুধবার বিকালে পুলিশ সদর দফতরে আয়োজিত এ ভিডিও কনফারেন্সে সব রেঞ্জ, মেট্রোপলিটন, বিশেষায়িত ইউনিট ও জেলা পুলিশের কর্মকর্তাদেরকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
আইজিপি বলেন, ত্রাণ বিতরণে কোনো ধরনের অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না। রিলিফ ও টিসিবি পণ্য এবং ভিজিএফ ও ওএমএস সুবিধা যেন জনগণের কাছে যথাযথভাবে পৌঁঁছায় সে জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করতে হবে।
তিনি বলেন, রমজানে পণ্যের পরিবহন স্বাভাবিক রাখতে হবে। বর্তমানে অনেক জেলায় ত্রাণ নিয়ে ট্রাক যাচ্ছে। আসার সময় ওই ট্রাকগুলো খালি ফিরে আসছে। ওই খালি ট্রাকগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহণের ব্যবস্থা করতে হবে।
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন অসহায় মানুষদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অথবা ইফতার বিতরণের নামে যেন জনসমাগম না করেন সেটি নিশ্চিত করতে হবে। তবে, ত্রাণ বিতরণে তাদেরকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। রমজানে যেন কোনোভাবেই ফুটপাতে ইফতার তৈরি ও বিক্রি না হয় সে ব্যাপারে তৎপর থাকতে হবে। রমজানে ধর্মাচার বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করতে হবে।
আইজিপি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক প্রান্তিক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়তে পারে। অনেকে অপরাধে জড়িয়ে পড়তে পারে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বাড়তে পারে। এ ধরনের অপরাধ দমনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কেউ যেন ধর্মীয় উসকানি, গুজব এবং করোনা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে, সে বিষয়ে তৎপর থাকতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। জঙ্গিরা যেন কোনোভাবেই কোনো তৎপরতা চালাতে না পারে, সে ব্যাপারে তৎপর থাকতে হবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতেও যেসব গার্মেন্টস মালিক শ্রমিকদের বেতন দিচ্ছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানান আইজিপি। আর যারা এখনও বেতন দিতে পারেননি, তাদেরকে শ্রমিকদের বেতন দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কোনো গার্মেন্টস চালু করলে যথাযথভাবে সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু করার পরামর্শ দেন ড. বেনজীর আহমেদ।
হাওরে ধান কাটার শ্রমিক পাঠানোর জন্য বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে আইজিপি বলেন, হাওরে হয়তো আরও শ্রমিক পাঠানোর প্রয়োজন হতে পারে। তিনি শ্রমিকদের যাতায়ত নির্বিঘ্নে করার জন্য শ্রমিকবাহী গাড়ির সামনে ব্যানার এবং গাড়িতে শ্রমিকদের তালিকা ও সংশ্লিষ্ট ইউনিটের কর্মকর্তাদের নাম ও মোবাইল নাম্বার রাখার নির্দেশনা প্রদান করেন।
আইজিপি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে পুলিশ অনেক ভালো কাজ করছে, পুলিশের অনেক অর্জন রয়েছে। এ অর্জন কোনোভাবেই ম্লান হতে দেয়া যাবে না। পুলিশকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি নিজেদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশের অন্যান্য হাসপাতালগুলোতেও পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। দেশের ৫টি বিভাগে চিকিৎসার আয়োজন করা হচ্ছে। আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের ঢাকায় যে চিকিৎসা দেয়া হবে, একই চিকিৎসা বিভাগীয় হাসপাতালেও দেয়া হবে। তাদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
যেসব পুলিশ সদস্য কোয়ারেন্টিনে, আইসোলেশনে এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তাদের নিয়মিত খোঁজখবর নেয়ার জন্য ইউনিট প্রধানদের নির্দেশ দেন ড. বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, তাদের প্রার্থনা, বিনোদন ও বই পড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের নয়, তাদের পরিবারেরও খোঁজখবর নিতে হবে, যেন তারা নিজেদের একা মনে না করেন। আইজিপি বলেন, এ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যদেরকে নিজেদের সুরক্ষিত রেখে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
আইজিপি বলেন, ইতিমধ্যে সুরক্ষা সামগ্রী ক্রয়ের জন্য বিভিন্ন ইউনিটকে পর্যাপ্ত আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যদেরকে সুরক্ষা সামগ্রী দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখানো যাবে না। তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদের জন্য ভিটামিন সি, ডি এবং জিংক ট্যাবলেট কেনা হচ্ছে। শিগগিরই তা বিভিন্ন ইউনিটে পাঠানো হবে।

Related posts

Leave a Comment