ইনসানে কামিল

– ডাঃ মৌলভী কাজী আবদুর রহমান

হালাল উপার্জনের উপকারিতা এবং হারাম উপার্জনের কুফল

 

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। আল্লাহ পাক মানুষকে যেমন সুন্দর আকৃতি বা দৈহিক সৌন্দর্য দিয়ে তৈরী করেছেন, তেমনি তাকে উন্নত বিবেক-বুদ্ধি, আÍা ও স্বাধীন ভাবে চলার শক্তি দান করেছেন।
দেহ সুস্থ রাখার জন্য যেমন জীবিকার প্রয়োজন, ঠিক তেমনি আÍার কল্যাণ ও হালাল জীবিকার জন্য হালাল উপার্জন অপরিহার্য। এ মর্মে মহান আল্লাহ বলেছেন-

“তোমরা উত্তম ও পবিত্র বস্তু খাও, যা আমি তোমাদের জীবিকা রূপে দান করেছি।”
(সুরা আল-বাকারা: ১৭৭)

হালাল উপার্জন কি?

হালাল উপার্জন মানে বৈধ উপার্জন। আল্লাহ ও রাসুলের নির্দেশিত ও অনুমোদিত পন্থায় যে আয় উপার্জন করা হয় তাকে হালার উপার্জন বলে।

হালাল উপার্জনের গুরুত্ব :-

হালাল উপার্জনের মধ্যে মানুষের কল্যাণ নিহিত। আর হারাম উপার্জনে রয়েছে অকল্যাণ। আল্লাহ পাক জ্বিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য। আর দুনিয়ার অন্য সব কিছু সৃষ্টি করেছেন মানুষের উপকারের জন্য। আল্লাহর ইবাদত করা যেমন মানুষের কর্তব্য, তেমনি হালাল উপার্জন বা হালাল রুজি অন্বেষণ করাও মানুষের একান্ত কর্তব্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক নির্দেশ দিয়েছেন-

“সালাত সমাপ্ত হয়ে গেলে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর জীবিকা অন্বেষণ কর” (সুরা আল-জুমআ)

এ ব্যাপারে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন-

“হালাল রুজি অন্বেষণ করা ফরজের পরেও একটি ফরজ।”

ইসলাম অলসতা, কর্মবিমুখতা ও কুঁড়েমি আদৌ পছন্দ কওে না। নীচের হাদিসটি তার উজ্জ্বল প্রমাণ। মহানবী (সাঃ) বলেছেন-

“তোমাদের ফজরের সালাত আদায় শেষ হয়ে গেলে রুজির অনুসন্ধান না করে ঘুমিয়ে পড়বে না।”

হযরত উমর (রাঃ) বলেছেন- “তোমাদের কেউ যেন জীবিকার্জনের চেষ্টায় নিরুৎসাহ হয়ে বসে না থাকে।” তিনি কায়িক শ্রমের প্রতি উৎসাহ প্রদান করে আরও বলেছেন-

“দু’হাতের উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাদ্য কেউ কোনদিন খায় নি।” (বোখারী)

হালাল উপার্জন যেমন কায়িক শ্রম দ্বারা হতে পারে, তেমনি তা চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বানিজ্য দিয়েও হতে পারে। এ সম্বন্ধে মহানবী (সাঃ) বলেছেন-

“তোমাদের জীবিকা দশ ভাগের নয় ভাগই আছে ব্যবসার মধ্যে।”

ব্যবসা বানিজ্য অবশ্যই সৎ ভাবে করতে হবে। এ মর্মে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন-

“সৎ, বিশ্বস্ত, মুসলিম ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন শহীদদের সাথে থাকবেন।”

চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বানিজ্য ছাড়া হালাল উপার্জনের আরও অনেক উপায় আছে। পশুপালন, হাঁস-মুরগীর খামার, মৎস্য চাষ, বৃক্ষ রোপণ, ছোট-বড় ও মাঝারি ধরণের নার্সারি, কুটির শিল্প ইত্যাদির মাধ্যমে আÍকর্মসংস্থান ও হালাল উপার্জনের ব্যবস্থা করা যায়। এতে যেমন আÍকর্মসংস্থানের মাধ্যমে হালাল উপার্জনের ব্যবস্থা হয়, তেমনি দেশ ও জাতির উন্নতি হয়।

হারাম উপার্জনের কুফল:-

হারাম উপার্জন হালাল উপার্জনের বিপরীত। ন্যায়-নীতি ও হীন মানবতা বিরোধী ক্ষতির পন্থায় আয় উপার্জনকে হারাম উপার্জন বলে। প্রতারণা, ছল-চাতুরী, দ্রব্যে ভেজাল, ওজনে হেরফের করা, চুরি, ডাকতি, সুদ, ঘুষ ও ছিনতাই- এ সব কিছুই হারাম উপার্জন।
অন্যায় ও অবৈধ ভাবে কিছু হাসিল করার জন্য কাউকে অবৈধ ভাবে কিছু দেওয়াকে ঘুষ বা উৎকোচ বলে। ঘুষ অবৈধ প্রতারণা মূলক অন্যায় উপার্জন। তাই ইসলামে ঘুষকে হারাম করেছে। মহানবী (সাঃ) বলেছেন-

“ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহীতা উভয়েই জাহান্নামী।”

অন্য এক হাদিসে আছে-

“রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ঘুষ দাতা, ঘুষ গ্রহীতা এবং এর লেনদেনকারী দালালদের প্রতি অভিশাপ দিয়েছেন। সুদ, ঘুষ, প্রতারণার মাধ্যমে উপার্জন করা শয়তানী কাজ।”

আল্লাহ পাক বলেছেন-

“হে মানব সম্প্রদায়! দুনিয়ায় যা কিছু আছে তা থেকে হালাল পবিত্র বস্তু গ্রহণ কর, আর শয়তানের অনুসরণ করবে না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শক্র।”
হারাম উপার্জনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করলে তার ইবাদত কখনও কবুল হয় না। এ ব্যাপারে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন-

“হারাম খাদ্যে পরিপুষ্ট যে মাংস, নরকাগ্নিই তার উত্তম স্থান।”

(চলবে——–)

 

Related posts

Leave a Comment