গোপন কক্ষের ‘ডাকাত’ ঠেকাবে ব্যালট ইউনিটের আঙুলের ছাপ!

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

ঘুরেফিরে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের পরিকল্পনা থেকে বেরুতে পারছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য দেড় লাখ ইভিএম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে ইভিএমের গোপনকক্ষের ভোট ‘ডাকাত’ নিয়ে উদ্বিগ্ন কমিশন (ইসি)। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান ইভিএমের সুরক্ষা আরো বাড়াতে হবে। ভোট ডাকাতকে একমাত্র প্রতিরোধ করতে পারবে ‘ব্যালট ইউনিটে ফিংগার সংযোজন’। ফিংগার সংযোগ করলে এক জনের ভোট কোনোভাবেই অন্যজনের দেওয়া সম্ভব নয়।
ইভিএম যাচাইয়ের জন্য নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছে কমিশন। বৈঠক শেষে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ইসি। যদিও এ পর্যন্ত ১৮টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বেশির ভাগ দল আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার জন্য মতামত দিয়েছেন। আবার কিছু দল ইভিএমের সুরক্ষা বৃদ্ধির পরামর্শও দেয়। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ইভিএম ব্যবহারের ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে ইভিএম কারোর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে না।
ইসির কর্মকর্তারাও বলছেন, ইভিএমের ব্যালট ইউনিটের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গোপন ভোটকক্ষে সংরক্ষিত ব্যালট ইউনিটে এক জনের ভোট দিতে পারেন অন্যজন। বর্তমান ইভিএমের এটিই বড় দুর্বলতা হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। দুই লাখ টাকা দামে ক্রয়কৃত ইভিএমের কন্ট্রোল ইউনিটে ফিংগারপ্রিন্টের ব্যবস্থা থাকলেও ব্যালট ইউনিটে তা নেই। ফলে কেন্দ্র দখল হয়ে গেলে জাল ভোট পড়তে পারে উন্নত প্রযুক্তির ইভিএমেও।
ইভিএমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইসির কাছে সংরক্ষিত ইভিএমের ব্যালট ইউনিটে নতুন করে ফিংগার সংযোজন করা সম্ভব নয়। তবে কমিশন চাইলে নতুন করে ব্যালট ইউনিট প্রস্তুত করে ফিংগারপ্রিন্ট সংযোজন করা যেতে পারে।
গত ১৯ জুন ইসির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন বাংলাদেশ কংগ্রেসের মহাসচিব অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম। তিনি ইত্তেফাককে বলেন, আমাদের ইভিএমে কোনো পেপার ট্রেইল না থাকার কারণে প্রদত্ত ভোটের অডিট করা সম্ভব নয়। ভোটাররা নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরেছেন কি না, তা নিশ্চিত হতে পারেন না। এছাড়া ইভিএমের ব্যালট ইউনিটে ফিংগার সংযোজন থাকলে এক জনের ভোট কোনোভাবেই আরেক জনের দেওয়া সম্ভব নয়।
অবশ্য ইসি বলছে, ইভিএমের ব্যালট ইউনিট সম্পূর্ণ সুরক্ষিত ও ত্রুটিমুক্ত। যদি কোনো ব্যক্তি ভোটকেন্দ্র বা গোপন কক্ষ দখল করে, সেক্ষেত্রে প্রিজাইডিং অফিসার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবেন। এছাড়া অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির ক্ষেত্রে কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করার বিধানও রয়েছে। কিন্তু বিগত বিভিন্ন নির্বাচনের সময় সারা দেশে শতাধিক প্রিজাইডিং-সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ভোটে অনিয়মে যুক্ত থাকার কারণে গ্রেফতার হয়েছিলেন।
এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ ইত্তেফাককে বলেন, এটি সত্য যে বিগত সময়ে বেশ কয়েকজন নির্বাচনি কর্মকর্তা গ্রেফতার হয়েছিলেন। তারপরও তাদের ওপর আস্থা রাখতে হবে। কেননা নির্বাচনি দায়িত্বের জন্য তাদের বিকল্প নেই। বুথ দখল করে ইভিএমে জাল ভোট হতে পারে। যাতে কেন্দ্র দখল না হয় সেদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বলেন, ভোটকেন্দ্রের গোপনকক্ষে এক জন করে ডাকাত ও সন্ত্রাসীরা দাঁড়িয়ে থাকেন আর ভোটাররা এলেই বলেন, ‘আপনার ভোট হয়ে গেছে, চলে যান’। ইভিএমের জন্য এটাই বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, এ ধরনের সন্ত্রাসী-ডাকাতদের অপতত্পরতা ছাড়া ইভিএমে সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানে আর কোনো চাপ নেই। তবে আগামী দিনে কোনো নির্বাচনে এরকম কিছু হবে না। কেননা প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা থাকবে, সাংবাদিকদের অ্যালাউ করা হবে। কোথাও এরকম কিছু হলে সঙ্গে সঙ্গে ভোট বন্ধ করে দেওয়া হবে।-ইত্তেফাক

Related posts

Leave a Comment