বাংলাদেশের ৭১ এর ইতিহাসে স্বর্ণয়ক্ষরে লেখা থাকবে মুক্তিযুদ্ধের ৬নং সেক্টর বুড়িমারী পাটগ্রাম লালমনির হাট

সফিকুল ইসলাম হাতীবান্ধা লালমনিরহাট :​

মহান মুক্তিযুদ্ধ কালীন ৬নং সেক্টর ছিল পাটগ্রাম উপজেলা বুড়িমারী। তখন রংপুর জিলা ছিল যুদ্ধকালীন পাটগ্রাম মুক্ত ছিল এখনে মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদার বাহিনীদের ঢুকতেই দেয়নি। প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলে ছিলেন। এই ইতিহাস নতুন​ প্রজন্মর কাছে অজানা তাই নতুন প্রজন্ম ইতিহাস কে সম্পর্কে জানাবার আমার কাছে যেন দায় মনে হয়েছে। কারণ আমার রক্তে যে মুক্তিযোদ্ধার রক্ত তাই নিজের কাছে আমার দায়বদ্ধতা তাইতো বাবার কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাস শুনেশুনে আমি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরের কাছে তুলে ধরতে চাই।​ আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা​ তার কাছে থেকে মুক্তিযোদ্ধের ৬নং সেক্টর সম্পর্কে যানতে পাই এখন আমার বাবা বেচে নেই কিন্তু তার রেখে যাওয়া ইতিহাস কেন দিন ভুলবার নয় এখন বুড়িমারীতে নতুন স্নৃতিস্মম্ভ তৈরী করা হয়।এর উদ্ভদন করেন মাননীয় সংসদ মাটি ও মানুষের নেতা সফল সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা​ জনাব মতাহার হোসেন হাতীবান্ধা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফজলুল হক ও পাটগ্রাম উপজেলা কমান্ডার এ এইস​ সালাউজ্জামান আরো আনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা।এই স্মৃতিস্থাম্ভ টির ইতিহাস তারা বেচে না থাকলে হইতো আমরা দেখতে পেতাম না সেটি নিমার্ন হত লালমনিরহাট বড়বাড়িতে পাটগ্রাম বুড়িমারি নাম কেটে ততকালীন বি,এন,পি জামাত চার দলীও সরকার এর উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু স্মৃতিস্তম্ভ তার বাড়ী বড়বাড়িতে নিয়ে গেছে সেখান তার ছবি সম্বলিত নিমার্ন ডিজাইন তৈরি করেছে এই রকম জঘনতম কাজ করে মুক্তিযুদ্ধ সঠিক ইতিহাস কলঙ্ককর করতে চেয়েছিল। এরপর আওয়ামী সরকার গঠন করার পর আমাদের জননেতা মোতাহার হোসেন​ এম পি বুড়িমারীতে নিয়ে স্থাপন করেন। এবং সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্ম জানতে পারে।

মুক্তিযোদ্ধার কিছু তত্ত্ব​ :
ভারতীয় তালিকায় কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২৫০ জন আর বিভিন্ন বাহিনীর হয়ে যুদ্ধে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা আরো শতাধিক। কিন্তু হাতীবন্ধা উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা বর্তমানে গেজেট ভুক্ত আছেন  ৩৩৫ জন।আরো প্রকৃয়াধিন আছে অনেকেই  বর্তমানে  এ উপজেলায় দালাল এর অভাব নেই সাধারণ মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের ওয়ারিসরা  কোননা কোন ভাবে নানান বন্চনায় ভুক্তভোগী। এবং পাটগ্রাম উপজেলায় বর্তমানে গেজেট ও সনদভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৬৬ জনে। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির জন্য আবেদন জমা আছে আরো প্রায় ৪০০ জনের। এই উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচিত সহকারী কমান্ডার জাহাঙ্গীর আলমের মতে, সাবেক উপজেলা কমান্ডার অবৈধ উপায়ে নানা সুবিধা নিয়ে বিপুলসংখ্য অমুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছেন। এখানে ও একেই চিত্র।
ঝিনাইদহ জেলায় ১৯৯০ সালের দিকে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল এক হাজার ১০০ জনের মতো। কিন্তু এখন এই জেলায় ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই হাজার ২৯ জন, ভাতা বন্ধ আছে আরো কয়েক শ জনের। সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরউদ্দিনের মতে, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্ত করার কারণেই মুক্তিযোদ্ধার এমন সংখ্যাবৃদ্ধি। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা একটা গর্বের ডাক। মুক্তিযোদ্ধারা জতীয় বীর। কিন্তু এটা এখন কলুষিত হয়ে গেছে। যেখানেই যাই সেখানেই বদনাম। অমুক্তিযোদ্ধাদের ভিড়ে আসল মুক্তিযোদ্ধারা অসহায়। সমাজের মানুষ জানল না অথচ এখন দেখছে অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারাই এখন অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা বানাচ্ছেন।
এভাবে বেড়েই চলেছে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা। বর্তমানে দেশে সনদপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই লাখের বেশি। মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির জন্য আছে আরো এক লাখ ৩৬ হাজার আবেদন। অথচ মুক্তিযুদ্ধ সংশ্লিষ্ট বিশিষ্টজন ও গবেষকদের মতে, মুক্তিযোদ্ধার প্রকৃত সংখ্যা কোনো অবস্থায়ই এক লাখ থেকে দেড় লাখের বেশি হওয়ার কথা নয়। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরির জন্য শিগগির শুরু হবে উপজেলা পর্যায়ে যাচাই-বাছাই।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এ পর্যন্ত জাতীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের চারটি খসড়া ও একটি চূড়ান্ত তালিকাসহ মোট পাঁচটি তালিকা প্রণয়ন হয়েছে। প্রতিবার তালিকা করার সময় বেড়েছে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরি করতে গিয়ে প্রতিবারই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্ত করার কারণে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের মতে, মুক্তিযোদ্ধার প্রকৃত সংখ্যা এক লাখ ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখের বেশি হবে না। বারবার তালিকা করে বিষয়টিকে হাস্যকর করে ফেলা হয়েছে। এটি এখন ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক সামছুল আরেফিনের মতে, ‘মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরির ব্যাপারে শুরুতেই ভুল হয়েছে। সেই ভুলের মাসুল আমরা দিচ্ছি, দিয়েই যাব। মুক্তিযোদ্ধার সঠিক তালিকা তৈরি এখন দুরূহ কাজ। কোনো কোনো এলাকায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতৃত্বে চলে এসেছেন। এখন তাঁদের দিয়ে কিভাবে সঠিক তালিকা হবে।’

ভারতীয় তালিকা :

মুক্তিযুদ্ধকালে ভারতের বিভিন্ন ট্রেনিং ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে যেসব মুক্তিযোদ্ধা রণাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের একটি তালিকা প্রস্তুত করে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট। মেজর জেনারেল (অব.) আমিন আহম্মদ চৌধুরী ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে এই তালিকাটি করেন। জানা যায়, ভারতের ট্রেনিং ক্যাম্পে যাওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা চার পৃষ্ঠার একটি ফরম পূরণ করেছিলেন। নাম-ঠিকানাসংবলিত এই ফরম ১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে। এই ফরমগুলো দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টারে (ইবি আরসি) বস্তাবন্দি অবস্থায় ছিল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ে ‘৮৩ সালে ওই ফরমগুলো কল্যাণ ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে। পরে ফরমগুলো থানাওয়ারি ভাগ করে ২৭৮টি বই বানানো হয় এবং তার ভিত্তিতে একটি তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এই তালিকায় ৬৯ হাজার ৫০৯ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম লিপিবদ্ধ হয়। এটিই এখন ভারতীয় তালিকা হিসেবে পরিচিত।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবদুল আহাদ চৌধুরী জানান, ইবি আরসিতে ফরমগুলো দীর্ঘদিন ফাইলবন্দি থাকার কারণে কিছু ফরম নষ্ট হয়ে গেছে এবং কিছু ফরম পোকায় খেয়ে ক্ষতি করেছে। ফলে ওগুলোর পাঠোদ্ধার সম্ভব না হওয়ায় কিছু মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকাভুক্ত হয়নি।
যাচাই-বাছাই ছাড়া প্রথম দুই তালিকা : এরশাদ সরকারের আমলেই ১৯৮৬-৮৭ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম সম্মিলিত খসড়া তালিকা প্রণয়ন করা হয়। একটি জাতীয় কমিটির প্রণীত ‘জাতীয় তালিকা’য় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এক লাখ দুই হাজার ৪৫৮ জন বলে উল্লেখ করা হয়। কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁদেরই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় বলে জানান আহাদ চৌধুরী।
১৯৯৩-৯৪ সালে বিএনপি সরকারের আমলে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) তৎকালীন মহাপরিচালক আ জ ম আমিনুল হককে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের আহ্বায়ক করা হয়। তিনি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনের জন্য একটি ভোটার তালিকা করেন। এই তালিকায় প্রায় ৮৮ হাজার জন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।

যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রথম তালিকা :

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথম যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তৎকালীন নির্বাচিত চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবদুল আহাদ চৌধুরীর নেতৃত্বে উপজেলা পর্যায়ে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে যে তালিকা প্রণয়ন করা হয় সেটি এখন মুক্তিবার্তার ‘লাল বই’ হিসেবে পরিচিত। ১৯৯৭-২০০০ সালে প্রণীত ওই তালিকায় এক লাখ ৫৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হন। এই তালিকাটি নিয়ে বিতর্ক কম বলে এটিকে ‘যৌক্তিক’ মনে করে সংশ্লিষ্ট মহল।
এই তালিকা প্রণয়ন প্রসঙ্গে আহাদ চৌধুরী বলেন, সে সময় মুক্তিযোদ্ধাদের একটি নির্ভুল তালিকা প্রণয়নের জন্য প্রথমেই প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনে একটি নীতিমালা তৈরি করা হয়। ছয় লাখ ফরম ছাপিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন কমান্ডের মাধ্যমে গ্রাম পর্যায়ে ‘মুক্তিযোদ্ধা দাবিদার’দের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এতে জমা পড়ে প্রায় চার লাখ ফরম। মুক্তিযোদ্ধা দাবিদারদের তালিকা মুক্তিবার্তায় ছাপা হতে থাকে। তালিকা প্রকাশের আগে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, তালিকার কারো ব্যাপারে আপত্তি থাকলে ৩০ দিনের মধ্যে অভিযোগ জানাতে। এই ফরমের ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা ও কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে প্রতিটি থানায় যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়। প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে এক লাখ ৮৬ হাজার ৭৯০ জনের তালিকা নিয়ে প্রকাশিত হয় ‘সবুজ বই’। আরেক দফা যাচাই-বাছাইয়ের পর হয় ‘লাল বই’।
এই তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়া সম্পর্কে আহাদ চৌধুরী বলেন, লাল বইয়ের তালিকায় ভারতীয় তালিকার মুক্তিযোদ্ধা, নিয়মিত বাহিনীর যোদ্ধা, মুজিব বাহিনী, ন্যাপ-কমিউনিস্টদের গেরিলা বাহিনী, দেশের অভ্যন্তরের আঞ্চলিক বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা—সবাই অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফলে তালিকা দীর্ঘ হয়েছে।

জোট সরকারের আমলের সর্ববৃহৎ তালিকা :

২০০২ সালে সে সময়ের মন্ত্রিপরিষদ সচিব সা’দত হুসাইনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্তকরণের মাধ্যমে গেজেট প্রকাশের জন্য ১৫ সদস্যের একটি জাতীয় কমিটি করা হয়। জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জেলা কমিটি এবং ইউএনওর নেতৃত্বে উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়। এরশাদের জাতীয় তালিকা, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ভারতীয় তালিকা, ১৯৯৩ সালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভোটার তালিকা ও মুক্তিবার্তার লাল বই—এই চারটি তালিকার মধ্যে অন্তত দুটি তালিকায় যাঁদের নাম আছে, তাঁদের সরাসরি চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আর যাঁদের শুধু একটি তালিকায় নাম ছিল, তাঁদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো তালিকায়ই নাম ছিল না—এ রকম হাজার হাজার লোক এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। এই প্রক্রিয়ায় জাতীয় কমিটির অনুমোদনে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়ায় দুই লাখ ১০ হাজার ৫৮১ জন। যাচাই-বাছাই ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধার দীর্ঘ তালিকা প্রকাশিত হওয়ায় এই তালিকাটি সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম অভিযোগ করেন, এই তালিকায় ৫২ হাজারের মতো ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হয়েছেন।

গেজেট ও সনদধারী মুক্তিযোদ্ধা ২ লাখ ৩০ হাজার :

২০১৩ সালের ১০ জুন জাতীয় সংসদে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম জানান, সারা দেশে দুই লাখ পাঁচ হাজার ৪৮২ জন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। এর মধ্যে ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দেড় লাখ। তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি সরকারের আমলে যে তালিকা হয়েছে ৫২ হাজারের মতো ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হয়েছেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের অনলাইন ডাটাবেইস তৈরির উদ্যোগ নেন।
এক লাখ ৭৭ হাজার মুক্তিযোদ্ধার তথ্যসংবলিত খসড়া ডাটাবেইসের ওয়েবসাইট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ প্রতিমন্ত্রী জানান, এই ডাটাবেইসে দুই লাখ চার হাজার মুুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রকাশ করা হবে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত অনলাইন ডাটাবেইসে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দুই লাখ ৩০ হাজার জনের তথ্য সংযুক্ত করা হয়। যাঁরা সনদ পেয়েছেন এবং যাঁদের নামে গেজেট হয়েছে কেবল তাঁদেরই এ ডাটাবেইসে যুক্ত করা হয় বলে জানা যায়। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারাও এতে ঢুকে পড়েছেন এবং ওই প্রকল্পে আর্থিক অনিয়ম হয়েছে এমন অভিযোগে অনলাইন ডাটাবেইস প্রজেক্টটি আর এগোয়নি।
তালিকাভুক্তির আশায় আরো এক লাখ ৩৬ হাজার! : আওয়ামী লীগ সরকারের চলতি মেয়াদে ২০১৪ সালে বর্তমান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক দায়িত্ব পাওয়ার পর মাঠ পর্যায়ে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেন। ২০১৪ সালের ১৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত জামুকার ২৫তম সভায় মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা ও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির জন্য ১০টি ক্রাইটেরিয়া নির্দিষ্ট করা হয়।
এগুলো হচ্ছে—যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ট্রেনিং ক্যাম্পে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যাঁদের নাম ভারতীয় তালিকায় রয়েছে; মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মুক্তিবার্তায় যাঁদের নাম রয়েছে; মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে যাঁরা ভূমিকা রেখেছেন; পুলিশ, আনসার ও সেনাবাহিনীর সদস্য হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন; মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত এমএনএ ও এমপিএ; মুজিবনগর সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী; বীরাঙ্গনা; স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী-সাংবাদিক; মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহদানকারী খেলোয়াড়, সাহিত্যিক এবং মেডিক্যাল টিমের ডাক্তার।
মুক্তিযোদ্ধার তালিকা চূড়ান্তকরণ উদ্যোগের অংশ হিসেবে এখনো যাঁরা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হননি তাঁদের অনলাইনে আবেদন করতে বলা হয়। ৩১ অক্টোবর ২০১৪ পর্যন্ত এক লাখ ৩৬ হাজার আবেদন জমা পড়ে। আদালতে মামলার কারণে এই যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি মামলা নিষ্পত্তি হওয়ায় উপজেলা পর্যায়ে যাচাই-বাছাই আবার শুরু হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
বর্তমানে দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধার জন্য সম্মানীভাতা বরাদ্দ হচ্ছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা হিসেবে এক লাখ ৭৭ হাজার ৫৭৭ জনের অর্থ ছাড় করা হয়েছে। যদিও ২০১৫ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা হিসেবে এক লাখ ৮০ হাজার ২৫৭ জনের অর্থ ছাড় করা হয়।

মুক্তিযোদ্ধার প্রকৃত সংখ্যা :

বিভিন্ন সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়ন করা হলেও মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা নিয়ে বিতর্কের অবসান হয়নি, বরং বিতর্ক বেড়েই চলেছে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরি করতে গিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যতবার তালিকা হয়েছে ততবারই তালিকায় নামের সংখ্যা বেড়েছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধা ট্রাস্ট প্রণীত ভারতে ট্রেনিংপ্রাপ্ত সাধারণ মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৬৯ হাজার ৫০৯ জন। এরশাদের শাসনামলে ‘৯৬ সালে প্রণীত প্রথম সম্মিলিত তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এক লাখ দুই হাজার ৪৫৮ জন। ১৯৯৩-৯৪ সালে বিএনপি সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের নির্বাচনের জন্য প্রণীত তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় ৮৮ হাজার। ১৯৯৭-২০০০ সালে প্রণীত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ‘লাল বই’ তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এক লাখ ৫৪ হাজার। ২০০২ সালে জোট সরকারের গঠিত জাতীয় কমিটির অনুমোদিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল দুই লাখ ১০ হাজার ৫৮১ জন।
তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যাচ্ছে, নির্ভুল তালিকা হিসেবে স্বীকৃত ভারতীয় তালিকা থেকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ‘লাল বই’ তালিকা পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। আবার ‘৮৬ সালের প্রথম সম্মিলিত তালিকা থেকে ২০০২ সালের তালিকায় সংখ্যা হয়েছে দ্বিগুণ। এরপর ২০১৪ সালের অনলাইন ডাটাবেইসে মুক্তিযোদ্ধার সনদধারী কিংবা গেজেটভুক্ত হিসেবে এই সংখ্যা আরো বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৩০ হাজার।
সর্বশেষ তালিকাভুক্তির আশায় থাকা এক লাখ ৩৬ হাজারের মধ্যে তালিকাভুক্তির সুযোগ পেলে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়াবে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ, যা হবে ভারতীয় তালিকার পাঁচ গুণ এবং প্রথম সম্মিলিত তালিকার সাড়ে তিন গুণ। স্বাধীনতার পর ৪৫ বছরে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এভাবে বেড়েই চলেছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কোনো অবস্থায় এত বিপুলসংখ্যক হতে পারে না।
ভারতীয় তালিকা হিসেবে পরিচিত মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের তালিকাটি মুক্তিযোদ্ধাদের নির্ভুল তালিকা হিসেবে স্বীকৃত।
কিন্তু এই তালিকায় ভারতের বিভিন্ন ট্রেনিং ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নামই তালিকাভুক্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্য মতে, কিছু ফরম নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কিছু মুক্তিযোদ্ধার নাম ভারতীয় তালিকা থেকে বাদ পড়ে থাকতে পারে।
মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমীন আহম্মদ চৌধুরীর জীবদ্দশায় দেওয়া সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, ভারতের ৮২টি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে মোট এক লাখ ৩২ হাজার এফএফ প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। আর সামরিক বাহিনীর যোদ্ধার সংখ্যা ছিল ১৭ হাজারের কিছু বেশি। এর বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধরত বিভিন্ন বাহিনীর সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি হবে না।
এদিকে, ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ গেরিলা বাহিনীর তিন হাজার ৪৯১ জন মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভুক্ত হওয়ার জন্য জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে এক সঙ্গে আবেদন করেছিলেন।
গবেষকদের মতে, মুজিব বাহিনীর সংখ্যা ছয় হাজারের মতো। তবে বাহিনীসংশ্লিষ্টদের দাবি এই সংখ্যা ১১ হাজারের মতো।
মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের সংগঠন সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম গঠিত হওয়ার পর ‘মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধকৌশল ও সামরিক শক্তি বিন্যাস’ শিরোনামে একটি নথি প্রকাশ করে। এসব নথি থেকে জানা, ১৯৭১ সালে প্রবাসী সরকার গঠিত হওয়ার পর কলকাতার ৮ নম্বর থিয়েটার রোডের বাড়িতে মুক্তিযুদ্ধের পরিকল্পনা নির্ধারণে ১১ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত একটি কর্মশালা হয়। এতে গোটা দেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে পরিকল্পনা ঠিক করা হয়। এই সেক্টরগুলোতে সেক্টর বাহিনীর (সেনা, নৌ, বিমান, ইপিআর, পুলিশ) মোট সদস্য করার পরিকল্পনা করা হয় ১৮ হাজারের কিছু বেশি। আর গেরিলা সদস্য নিয়োগের পরিকল্পনা করা হয় মোট এক লাখ ৪৩ হাজার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এত নিয়োগ সম্ভব হয়নি।
৩ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ও মুক্তিযুদ্ধের এস ফোর্সের কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) কে এম সফিউল্লাহর দেওয়া তথ্য মতে, প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে কয়েক হাজার কম হবে। কারণ, প্রতিটি বাহিনীতে যেসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, পরে তার চেয়ে কম মুক্তিযোদ্ধা এসব বাহিনীতে ছিল। তাঁর ধারণা, ১১টি সেক্টরের অধীন নিয়মিত বাহিনী ও গেরিলা মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কোনোভাবে দেড় লাখের বেশি হবে না।
কে এম সফিউল্লাহ জানান, মুক্তিযুদ্ধের পর সেক্টর কমান্ডাররা নিজ নিজ বাহিনীর সদস্যদের সনদ দিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে এ সংখ্যা ছিল এক লাখ ২৮ হাজার থেকে এক লাখ ৩২ হাজারের কিছু বেশি। তিনি বলেন, স্বাধীনতার এত বছরে অনেক মুক্তিযোদ্ধা মারা গেছেন। কাজেই বছর বছর মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বৃদ্ধির হিসাব কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।
বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী জীবদ্দশায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আশ্চর্য লাগে, সরকার বদলালে মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যাও বেড়ে যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এসব দেখে নিজের কাছে নিজেকে হেয় মনে হয়।’ তাঁর মতে, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কোনোভাবেই এক লাখের বেশি হতে পারে না।
আহাদ চৌধুরীর মতে, ‘লাল বই’ তালিকায় যে এক লাখ ৫৪ হাজার মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হয়েছেন এর মধ্যে ২-৩% ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা থাকতে পারেন। আবার ২-৩% মুক্তিযোদ্ধা থাকতে পারেন যাঁরা তালিকাভুক্ত হননি। তাঁর মতে, মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা এক লাখ ৬০ হাজারের বেশি হওয়ার কথা নয়।
এখানে উল্লেখ্য যে আমার তথ্যের মধ্যে  ভুল হতে পারে  ক্ষমাদৃষ্টিতে দেখবেন।আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান  আমার দায়িত্ব থেকেই লিখেছি আমাদের আগামী  প্রজন্মকে জানানোর  জন্য।

Related posts

Leave a Comment