বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফি নির্ধারণ করে দেবে সরকার

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের অনিয়মের লাগাম টানতে উদ্যোগী হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে নতুন একটি নীতিমালা প্রণয়ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই নীতিমালার আলোকে টিউশন ফি আদায়সহ সব বিষয়ে নির্দেশনা থাকবে। আর এই নীতিমালা অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও বিধান যুক্ত করা হবে।
তথ্য অনুযায়ী, দেশের বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইচ্ছেমতো টিউশনসহ অন্যান্য ফি নির্ধারণ এবং তা আদায় করছে। কোথাও টিউশন ফি ৩০০ আবার কোথাও ৩ হাজার। কোথাও আরো অনেক বেশি। ফলে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার বাড়তি ফি পরিশোধ করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন অভিভাবকরা।
সরকার শিক্ষার উন্নয়নে নানা সুযোগ-সুবিধা দিলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধরনের উচ্চ ফির কারণে শিক্ষাগ্রহণ এখন ব্যয়বহুল। বিভিন্ন সময়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত বেতনসহ অন্যান্য ফি আদায় বন্ধে নির্দেশনা জারি করে সরকার। কিন্তু তাতেও কাজ হয় না। এ কারণে শিক্ষা আইনের খসড়ায়ও প্রতিষ্ঠানের ফি আদায়ে লাগাম টেনে ধরার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
আবার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে অর্থ আদায় হয়, তাও খরচ করা হয় ইচ্ছেমতো। ব্যয়ের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানছে না। কোথাও কোথাও আদায়কৃত অর্থের বেশির ভাগও প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং পরিচালনা কমিটি নানা কৌশলে ভাগবাঁটোয়ারা করে নিয়ে থাকেন। এবার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতার লক্ষ্যে ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয় ও ব্যয়-সংক্রান্ত নীতিমালা ২০২২’ প্রণয়ন করতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নীতিমালায় সব ধরনের শিক্ষাব্যয় নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। সব ধরনের লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে করতে হবে। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি সভাও করেছে। প্রাথমিকভাবে একটি খসড়াও তৈরি করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আদায়কৃত অর্থের জবাবদিহিতা তৈরিতে এই নীতিমালা করা হবে। এমপিওভুক্ত ও নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেতন, ভর্তি ফি, সেশন ফি ও বোর্ড পরীক্ষার ফরম পূরণ ফিসহ যাবতীয় আয় ও ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে নীতিমালাটি হচ্ছে।
নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সব ধরনের ফি ও বেতনের অর্থ আদায় করতে হবে। কোনোভাবে তাদের কাছ থেকে নগদ অর্থ আদায় করা যাবে না। আদায়কৃত সব অর্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ তহবিলে জমা রাখতে হবে। প্রতি বছর অডিট করাতে হবে। নীতিমালা জারির পর কেউ সেটি অমান্য করলে সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান অনুমোদন, পাঠদান স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তি বাতিলের সুযোগ থাকবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি বিদ্যালয়) ও নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ফৌজিয়া জাফরিন সাংবাদিকদের বলেছেন, বেসরকারি এমপিওভুক্ত ও নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কত টাকা টিউশন ফি নেওয়া যাবে তা এই নীতিমালার মাধ্যমে ঠিক করে দেওয়া হবে। কবে নাগাদ এ নীতিমালা বাস্তবায়ন হতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘আশা করছি আগামী বছর থেকে এটির বাস্তবায়ন শুরু হবে।’
এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা আইনের যে খসড়া প্রণয়ন করেছে, সেখানে এ-সংক্রান্ত ধারায় বলা হয়েছে, বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের সব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বেতন ও অন্যান্য ফি সরকার অনুমোদিত হতে হবে। অনুমোদন ছাড়া কোনো রকম বেতন বা অন্যান্য ফি গ্রহণ করা যাবে না। এই বিধানের ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ক্ষেত্রেও ফি নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা বলা আছে।

Related posts

Leave a Comment