সিইসি বললেন- আইন ভঙ্গ করেননি এমপি বাহার

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

কুমিল্লা সিটি করপারেশন নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার কোনো আইন ভঙ্গ করেননি, নিয়ম ভঙ্গ করেননি। তাঁকে এলাকা ত্যাগের নির্দেশও দেওয়া হয়নি। কাউকে তাঁর নিজ এলাকা থেকে বহিষ্কার করার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের নেই। এ কথা বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন শেষ হওয়ার পঞ্চম দিনে গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী উনি (বাহাউদ্দিন) অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সংসদ সদস্য কেন, কোনো সাধারণ মানুষকেও তাঁর এলাকা ত্যাগ করার আদেশ দিতে পারে না। আমরাও এমপি বাহাউদ্দিনকে এলাকা ত্যাগ করার কোনো আদেশ করিনি। তাঁকে বিনীতভাবে অনুরোধ করেছিলাম, সেই চিঠি আছে। কিন্তু চারদিকে ছড়িয়ে গেল, আদেশ করার পরও তিনি তা প্রতিপালন করতে পারলেন না—এ কথাটি পুরোপুরি সত্য নয়।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল আরো বলেন, ‘বাহাউদ্দিন সাহেব কোনো আইন ভঙ্গ করেননি, নিয়ম ভঙ্গ করেননি। অভিযোগ আসছিল, তিনি গোপনে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাই তাঁকে অনুরোধ করেছি। অনুরোধ করলে তিনি রাখতেও পারেন, না-ও রাখতে পারেন। বিনীতভাবে অনুরোধ আর নির্দেশ এক করে দেখার সুযোগ নেই। তবে উনি চলে গেলে হয়তো ভালো হতো।’
এর আগে গত ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট দেওয়ার পর এমপি বাহাউদ্দিন বাহার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাকে চিঠি দিয়ে নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে বলে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ভুল করেছেন। সিইসির কর্মকর্তারা এভাবে একজন সংসদ সদস্যকে চিঠি দিয়ে সম্মানহানি করতে পারেন না। যে চিঠি আমাকে দেওয়া হয়েছে তা সংসদ সদস্যদের তৈরি করা আইনে নয়, সেটা নির্বাচন কমিশনের করা আইনে। আমি এটা নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেছি। সংসদেও কথা বলব। এটা পরিবর্তন করাব।’
গতকাল সিইসি আরো বলেন, ‘আমরা প্রায় শুনছি তাঁকে (বাহার) নির্বাচন কমিশন থেকে আদেশ করা হয়েছে এলাকা ত্যাগ করার। কিন্তু আমরা তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি, নির্বাচন কমিশন থেকে একজন নির্বাচিত সংসদ সদস্যকে কখনোই এলাকা ত্যাগ করার আদেশ করা হয়নি। আমরা তাঁকে প্রকাশ্যে প্রচারণায় অংশ নিতে দেখিনি। কিন্তু কেউ কেউ বলছেন উনি কৌশলে অংশ নিয়েছেন। আমাদের একটা প্রত্যাশা ছিল, ওনাকে যদি রিকোয়েস্ট করি, তাহলে আর কথা উঠবে না।’
হাবিবুল আউয়াল একজন সাবেক নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, ‘বলা হয়েছে, নির্বাচনী এলাকায় এক প্রভাবশালী মন্ত্রী গিয়েছিলেন, তাঁকে এক ঘণ্টার মধ্যে এলাকা ত্যাগ করাতে পেরেছিলাম। হয়তো তিনি পেরেছেন, সেটা ভিন্ন কথা। সে ক্ষেত্রে সেই মন্ত্রী ছিলেন বহিরাগত। আর বাহাউদ্দিনের ওটা স্থায়ী ঠিকানা। একজন মানুষ তাঁর বাড়িতে থাকতে পারবে না তা তো নয়। ’

ভোটের ফলাফল পাল্টে যাওয়ার তথ্য গুজব

কুমিল্লার ভোটের ফলাফল ঘোষণার সময় বিশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, “আমরা রাত ৮টা পর্যন্ত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছি, কোনো বিপর্যয় দেখিনি। সিসিটিভির মাধ্যমে আমরা কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি দেখছিলাম। কিন্তু একটা টেলিফোনে ফলাফল পাল্টে গেল—এমন একটি কথা শোনা যাচ্ছে। শেষ মুহূর্তে একটা ফোনে ফলাফল পাল্টে যায়—এটা একেবারে অসম্ভব। একটা বা দুটো টেলিফোন আমি নিজেও করেছিলাম। আমাদের রিটার্নিং অফিসার আমাকে খুব বিপর্যস্ত অবস্থায় ফোন করে বললেন, ‘আমি বিপদে পড়েছি’। আমি সেখানে প্রচণ্ড শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। আমি ভাবলাম, তাঁকে মারধর করা হচ্ছে। আমি এরপর ডিসি-এসপিকে ফোন করেছিলাম। তাঁরা তখন জানালেন, তাত্ক্ষণিক বিষয়টি দেখছেন। এরপর রিটার্নিং অফিসারকে বললাম, সমস্যা হবে না। পরে তিনি জানালেন, পুলিশ এসেছে, মানুষ সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। উচ্ছৃঙ্খল ঘটনাটা মাত্র ১৫ মিনিট ছিল। কোনোভাবেই ২০ মিনিটের বেশি দীর্ঘ হয়নি। এরপর তিনি স্বাচ্ছন্দ্যে ফলাফল ঘোষণা করলেন, সেটা আমরা দেখেছি।”
সিইসি বলেন, ‘একটা ফোনে পাল্টে গেল, এটা একজন বলার পর হাজার মানুষ বলল। মেশিনের ফল অথবা হাতের ফল আমরা ওয়েবসাইটে তুলে দিয়েছি। এতে ফল ঘটনা ঘটেনি। ’
ফলাফল ঘোষণার সময় রিটার্নিং অফিসারের টয়লেটে যাওয়া প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘ন্যাচারাল কলিং হলে যেতেই পারেন। এটাকে বড় করে দেখার কিছু নেই। আমি শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি, আপনারাও খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন, পাঁচ মিনিটে ফলাফল পাল্টানো সম্ভব না। ’
সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়ের সময় নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান (অব.), বেগম রাশিদা সুলতানা, মো. আলমগীর, নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ূন কবীরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Related posts

Leave a Comment