শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:
ঢাকায় অবস্থানরত নাইজেরিয়ার কয়েকজন নাগরিকের প্রতারণার মাধ্যমে ২৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬ কোটি টাকার বেশি জমা করার তথ্য পাওয়া গেছে। পরে তারা এসব টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নেন। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধু সেজে বাংলাদেশিদের কাছে উপহার পাঠানোর নামে এসব টাকা হাতিয়ে নেন নাইজেরিয়ার নাগরিকরা।
তবে ওই ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো খোলা হয় বাংলাদেশিদের নামে। এদের কেউ কেউ জানেনও না তাদের নামে ব্যাংকে টাকা জমা হয়েছে। আবার কেউ কেউ কমিশনের বিনিময়ে নাইজেরিয়ান প্রতারক চক্রকে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করার সুযোগ দিয়েছেন।
৩০ এপ্রিল আদালতে ১৩ নাইজেরিয়ানসহ মোট ২১ জনের বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এসআই নিউটন কুমার দত্ত দীর্ঘ অনুসন্ধান করে এ অভিযোগপত্র জমা দেন। রাজধানীর পল্লবী থানায় ২০২০ সালে এ-সংক্রান্ত দুটি মামলা হয়েছিল।
সিআইডির তদন্তে বলা হয়- অভিযুক্তরা তাদের ব্যবহৃত ডিজিটাল ডিভাইসে ফেক ফেসবুক অথবা হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট খুলে আমেরিকান সেনা কর্মকর্তার ছবি ব্যবহার করে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে চ্যাটিং করেন। নাইজেরিয়ান চক্র ডলারের ছবিসহ গিফট প্যাকেটের ছবি, গিফট প্যাকেট কুরিয়ারে বুকিংয়ের স্লিপের ছবি, বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর পাঠিয়ে টাকা চেয়ে এসএমএস করেন। এ চক্রের সদস্য রাহাত আরা খানম তুর্না ওরফে ফারজানা মহিউদ্দিন পলাতক নাসিমার সরবরাহ করা মোবাইল দিয়ে কাস্টমস কমিশনার (ভ্যাট) পরিচয়ে ট্যাক্স বাবদ বিভিন্ন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে টাকা চেয়ে নেন। এভাবে ২৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিতে নাইজেরিয়ার নাগরিকদের সহায়তা করেন। এসব অ্যাকাউন্ট থেকে মোট ৬ কোটি ২৬ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫ টাকা ৭৩ পয়সা নাইজেরিয়ান চক্রটি তুলে নেয়।
এ চক্রের ২১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়। তারা হলেন- সি জে এননাদিকা ক্লিমেন্ট চাকেঙ্গু, ক্লেতাস আচুনা, ওনিয়েকুলভে টিমেটি চিনঙ্গে, রাহাত আরা খানম, একেনে উইজডম, চিগোজি, ইভুন্দে গ্যাব্রিয়েল আবিন্না, সেলেস্টাইন প্যাট্রিক আবিয়াজুলু, মরদি এননামদি কলিন্স, ওরদু চুকউদুর স্যামি, এনডুবুয়োকু সোমাইনা, এনজেরেম প্রেসাস ইকমে, নোওক উইজডম চিকওয়াদো এবং ফ্যাংক জ্যাকব, বোরহানউদ্দিন, শরীফুল ইসলাম, সাকিবুল হাসান, আনিছ মোল্লা, শফিকুল ইসলাম সজীব, মাহবুবুর রহমান ও হামিদুর রহমান। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নিউটন কুমার দত্ত বলেন, নাইজেরিয়ান আসামিদের থেকে জব্দ ডিজিটাল ডিভাইস সিআইডির আইটি ফরেনসিকে পরীক্ষা করা হয়।
যেসব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করা হয় : এবি ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় সাকিবুল হাসান নামে এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ১৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯২ টাকা ৫০ পয়সা। একই শাখায় সাকিব এন্টারপ্রাইজ নামের অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ৬ লাখ ১২ হাজার ৫২০ টাকা। ঢাকা ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় সাকিবুল হাসানের অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। ব্যাংক এশিয়ার এমসিবি শেখ মুজিব রোড শাখায় সাকিবুল হাসানের অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ৫ লাখ ২০ হাজার ৩৫৯ টাকা। একই ব্যক্তির ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে থাকা অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ৭৬ লাখ ৩৯ হাজার ২০৮ টাকা। সিটি ব্যাংকে আনিস এন্টারপ্রাইজ নামে থাকা অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ১৯ লাখ ৬৪ হাজার ১৫০ টাকা। প্রিমিয়ার ব্যাংকে আনিছ মোল্লা নামে এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ১৩ লাখ ৩৫ হাজার ১ টাকা ৬৭ পয়সা। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে আনিছ মোল্লার অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ৬৮ লাখ ৭২ হাজার ৭১৯ টাকা। একই ব্যাংকে আবির এন্টারপ্রাইজের নামে থাকা অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ৩২ লাখ ৩ হাজার ৯২৫ টাকা। সিটি ব্যাংকে হামিদুল এন্টারপ্রাইজ নামে থাকা অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ১৬ লাখ ৩৯ হাজার ৪০১ টাকা ৭৭ পয়সা। একই ব্যাংকে হামিদুর রহমান নামে অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ১৪ লাখ ১৬ হাজার ২০৫ টাকা। ইউসিবি ব্যাংকে হামিদুল এন্টারপ্রাইজ নামে থাকা অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে হামিদুর রহমানের অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ৪৭ লাখ ৩০ হাজার ৬০৩ টাকা ৩৯ পয়সা। একই ব্যাংকে হামিদুল এন্টারপ্রাইজ নামে থাকা অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ৪১ লাখ ৩৯০ টাকা। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে হামিদুর রহমানের আরেক অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ১৪ লাখ ৪৩ হাজার ৩৫৮ টাকা ৫৯ পয়সা। ইসলামী ব্যাংকে হামিদুল এন্টারপ্রাইজ নামে থাকা অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ৮ লাখ ১৪ হাজার ৯১১ টাকা। একই ব্যাংকে হামিদুর রহমানের অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ১০ লাখ ৪৫৬ টাকা ৬৮ পয়সা। সিটি ব্যাংকে শফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ৫১ হাজার টাকা। একই ব্যক্তির ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ৭৪৫ টাকা ৭৪ পয়সা। একই ব্যাংকের আরেকটি অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ১০ লাখ ৬৯ হাজার ৯২৪ টাকা ৩৫ পয়সা। আরেকটি অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৫৭০ টাকা। সিটি ব্যাংকের জনসন রোড শাখায় মাহবুবুর রহমান নামে এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ৬ লাখ ৪ হাজার ৫০০ টাকা। একই ব্যক্তির ইসলামী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ১৪ লাখ ৫ হাজার ৯৯৮ টাকা ৫ পয়সা। সিটি ব্যাংকে শরিফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ৪৬ লাখ ৩৩ হাজার ৬৪২ টাকা। ইসলামী ব্যাংকে শরীফুল ইসলাম নামে আরেক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ৩০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৭ টাকা ২০ পয়সা। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে বোরহান উদ্দিন নামে এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ৩৬ লাখ ৮৮ হাজার ২১০ টাকা ২৮ পয়সা। একই ব্যাংকে আতাউর রহমান নামে আরেক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ৬৪ লাখ ৩২ হাজার ৭৯৬ টাকা ৪১ পয়সা। ২০২০ সালের ২২ জুলাই রাজধানীর পল্লবী থেকে নারীসহ ওই নাইজেরিয়ানদের গ্রেফতার করে সিআইডি।-বাংলাদেশ প্রতিদিন