শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাবার প্রেক্ষিতে এবার বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে ১০০ কোটি ডলার করে ঋণ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক বাজারে চড়া জ্বালানি মূল্য এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব যেভাবে অর্থনীতিতে পড়ছে, তা মোকাবেলার জন্য এ অর্থ দরকার বলে বাংলাদেশের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টির কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।
এর আগে গত ২৪ জুলাই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর আগাম ব্যবস্থা হিসেবে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে তিন বছরের জন্য ৪৫০ কোটি ডলার ঋন চেয়েছে।
আইএমএফকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, কোভিড-১৯-এর কারণে ২০২০ সাল শুরুর আগে থেকেই বিশ্ব অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর প্রভাব মোকাবেলায় ঠিক সময়ে প্রণোদনা প্যাকেজ প্রণয়ন করে সেগুলো সফলভাবে বাস্তবায়িত করেছে বাংলাদেশ। প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর কারণে রফতানি খাত প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছে এবং কৃষি, উৎপাদনশীল খাত ও সেবা খাত কার্যকরভাবেই ফিরে এসেছে। তবে এখন সময় একটু খারাপ (ক্রিটিক্যাল টাইম) বলে জরুরি ভিত্তিতে লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রাখা ও বাজেট সহায়তা বাবদ বাংলাদেশের অর্থের দরকার।
ঊল্লেখ্য, সম্প্রতি আমদানি মূল্য বৃদ্ধি এবং প্রবাসী আয় কমে যাবার কারণে দেশে ডলারের চরম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে পতন হচ্ছে টাকার মান। মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি ১০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বিপরীতে বাজার থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকার মতো তুলে নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী সদ্যসমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ দিন রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার। জুনে শেষ হওয়া অর্থবছরে দেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে রেকর্ড পরিমান ৩৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার।
সাইফুল হক
আন্তর্জাতিক অর্থ সংস্থগুলোর কাছ থেকে ঋণ চাওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক অর্থনীতির ছাত্র কমরেড সাইফুল হক রেডিও তেহরানকে বলেন, দেশের অর্থনীটির চরম সংকটময় অবস্থায় কোরামিনের মত আরো ঋণ নিয়ে বাঁচার শেষ চেষ্টা করছে সরকার। ঋণ পাবার শর্তের মধ্যে দুর্নীতি এবং সুশাসনের দিক্গুলিকেও বিবেচনায় আনা হবে ফলে চাইলেই কাঙ্ক্ষিত ঋণ মিলবে এমন নিশ্চয়তা নেই। তাছাড়া, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থ বছর থেকে মেগা প্রজেক্টের ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ এবং নতুন ঋণের চাপ সামাল দেওয়া বাংলাদেশের জন্য সহজ হবে না।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সরকার ও এডিবির মধ্যে মহামারী থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য আড়াইশ মিলিয়ন ডলার ঋণসহায়তাসহ চারটি প্রকল্পের ব্যাপারে প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়েছে। এছাড়া আরেকটি প্রকল্পে সিলেট অঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর পুনর্নির্মাণের জন্য আড়াইশ মিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী সরকার।
এদিকে. নিয়মিত সফরের অংশ হিসেবে গত ১৪ জুলাই আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরে আসে। সফরকালে সরকারপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। আইএমএফের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রাহুল আনন্দ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। সফরকালে দলটি অর্থ মন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ইআরডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সফর শেষে ২২ জুলাই ঢাকা ত্যাগ করে আইএমএফ প্রতিনিধি দল।
আইএমএফ থেকে ঋণের বিষয়ে এর আগেও আলোচনা হয়েছিল। তবে বেশকিছু শর্তের কারণে সে আলোচনা আর এগোয়নি। সংস্থাটি বরাবরই বাজেট ভর্তুকি কমিয়ে আনার পরামর্শের পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো ও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার শর্ত দিয়ে এসেছে।-পার্সটুডে