ঠাকুরগাঁওয়ে শিল্পায়ন ও সম্ভাবনময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নানা সমস্যা

মোঃ শফিকুল ইসলাম দুলাল,ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ

ঠাকুরগাঁও জেলা একটি সম্ভাবনাময় জনপদ। এ জনপদে রয়েছে বেশ কয়েকটি ছোট, মাঝারী, বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান। এ সকল প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন থেকে নানা রকম প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যা নিয়ে চলছে। দেশ ও দেশের বাহিরে জেলার পরিচিতি ও কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের রয়েছে গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা। এ সকল প্রতিষ্ঠানে একদিকে যেমন হাজারও মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে তেমনি এ সকল প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন পন্য ও সেবা দেশ ও দেশের বাহিরে রপ্তানী করে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তবে এ সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে বিভিন্ন সিন্ডিকেট চক্র সক্রিয় রয়েছে। যাদের কাজ হলো শিল্পায়নকে বাধাগ্রস্থ করা। গুরুত্বপুর্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঠাকুরগাঁও চিনিকল, রেশম কারখানা, কোর্ল্ড ষ্টোরেজ ও আলু শিল্প, সবুজ বিপ্লব চা বাগান, বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ইএসডিও, বিসিক শিল্প নগরী, বিসিক খাদ্য প্রক্রিয়াজতকরণ অঞ্চল, কাজী ফার্মস গ্রুপ।

ঠাকুরগাঁও চিনিকল :-

শহরের অদূরে রোড এলাকায় ১৯৫৬ সালে জেলার একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিগত ৬৪ বছর ধরে এই কারখানায় উৎপাদন চালু রয়েছে।

রেশম কারখানা :-

১৯৭৫-৭৬ সালে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএস গোবিন্দনগর এলাকায় ৩ দশমিক ৩৪ একর জমির উপর কারখানাটি স্থাপন করে। ২০০২ সালে কারখানাটি বন্ধ হয়ে সে অবস্থায় রয়েছে। শুরু থেকেই সেখানে ২ শতাধিক শ্রমিক নিয়মিত কাজ করতেন। কারখানা বন্ধ হওয়ার পর শ্রমিকেরা পেশা পরিবর্তন করেন। কিন্তু বর্তমান সরকার পুনরায় কারখানাটি সচল করার সিদ্ধান্ত নেয়।

কোর্ল্ড ষ্টোরেজ ও আলু শিল্প :-

এক সময় ঠাকুরগাঁওয়ে কোল্ড ষ্টোরেজ ছিল না। ওই সময় জেলার কৃষকেরা তেমন একটা আলু চাষ করতো না। পরবর্তিতে বেশ কয়েকটি কোল্ড ষ্টোরেজের কারনে আলু উৎপাদন দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। জেলায় বর্তমানে প্রায় ১৮টি কোল্ড ষ্টোরেজের বদৌলতে আলু চাষীর সংখ্যা বেড়েছে। জেলার আলু দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানী হচ্ছে। এতে করে কোল্ড ষ্টোরেজগুলিতে হাজারও মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে আলুর পাশাপাশি অন্যান্য ফসলও ষ্টোর করার ফলে অসময়ে ওই সকল ফসল জনসাধারণের অনেক কাজে আসে। বলতে গেলে বর্তমানে এটি জেলার প্রধান শিল্পে পরিনত হয়েছে।
তবে আলু, কোল্ড ষ্টোরেজকে নিয়েও সিন্ডিকেট চক্র পেছনে লেগেই রয়েছে। এ চক্রের কাজই হচ্ছে শিল্পায়নকে বাধাগ্রস্থ করা। নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য শিল্পের মালিকদের কাছ থেকে সুযোগ-সুবিধা গ্রহন করা। একটু এদিক-ওদিন হলে আবার ওই চক্রটি বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়িয়ে আলু ও কোল্ড ষ্টোরেজের মালিকদের বিপদে ফেলতে সদা প্রস্তুত রয়েছে। তার পরও এ শিল্পের বদৌলতে ঠাকুরগাঁও জেলার আলূ চাষীরা তাদের উৎপাদিত পন্যের ন্যার্য্য মূল্য পাচ্ছেন এবং সাধারণ মানুষজন এই ফসল স্বল্প মূল্যে পাবেন এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

সবুজ বিপ্লব চা শিল্প :-
ঠাকুরগাঁওয়ে বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে চায়ের বাগান করছে কৃষকেরা। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তৎকালীন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কামরুল আহসানের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ দল জেলার রানীশংকৈল, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সীমান্তবর্তী জমির মাটির গুনাগুন পরীক্ষা করে। পরে ওই মাটি চা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী বলে জানালে বানিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়। পরে চা শিল্পের উন্নয়নে গ্রিনফিল্ড টি এস্টেট কোম্পানী নিজ উদ্যোগে একটি চা ফ্যাক্টরী স্থাপন করেন। ২০১০-১১ অর্থবছর থেকে চা উৎপাদনের চুড়ান্তভাবে কাজ শুরু করে কোম্পানীটি।

ইএসডিও :-
ঠাকুরগাঁওয়ে শিল্পায়নে বেসরকারী এ উন্নয়ন সংস্থা ইএসডিও’র রয়েছে গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা। এ সংস্থাটি ১৯৮৮ সালে দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের কল্যাণে যাত্রা শুরু করে। এটি বর্তমানে একটি জনগনকেন্দ্রিক সংগঠনে পরিনত হয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও কর্মসূচী বাস্তবায়নের ফলে হাজারও মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে নারীদের ক্ষমতায়নে এ সংস্থা ইতোমধ্যে সুনাম কুড়িয়েছে দেশ-বিদেশে। ৪৯টি জেলার অধিনে ২৮৩টি উপজেলা জুড়ে কাজ করছে সংস্থাটি। যার প্রধান কার্যালয় ঠাকুরগাঁওয়ে।

বিসিক শিল্প নগরী :-
১৯৮৭ সালে জেলাকে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য স্থাপনের পর থেকেই জমে উঠেছে নগরীটি। বর্তমানে সেখানে কোন প্লট ফাকা নেই। নতুনকরে জেলার খাদ্যজাত পন্য সামগ্রীর প্রক্রিয়ার বিষয় চিন্তা করে বিসিক খাদ্য প্রক্রিয়াজতকরণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। প্রকল্পটি একনেকে পাশ হওয়ার পর থেকে কার্যক্রম ধীরে ধীরে এগিয়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলের খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের সাথে জড়িতরা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।

কাজী ফার্মস :-
ঠাকুরগাঁওয়ে কাজীর রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এ অঞ্চলের ভুট্টা চাষীরা এ প্রতিষ্ঠানের ফলে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। ফিড মিল, বড় বড় মুগরীর ফার্মগুলিতে জেলার হাজারও মানুষের কর্মসংস্থার সৃষ্টি হলেও সিন্ডিকেট পাটির দখলে পরে প্রতিষ্ঠানটি। পরে বেশ কয়েকটি মুরগীর ফার্মে নিজেদের ভাগ বসাতে চান সিন্ডিকেট পাটির সদস্যরা। এ সময় সিন্ডিকেট পার্টির সদস্যদের অত্যচারে জেলার প্রধান কার্যালয় ও কয়েকটি বড় বড় মুরগীর ফার্ম জেলা থেকে সরিয়ে নেয় কোম্পানীটি।

শেষে বলা যায়, এ সকল সিন্ডিকেটের ফলে প্রতি বছর অনেক আলু চাষী, কোল্ড ষ্টোরেজ শিল্প, ভুট্টা চাষী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। ১৯৯৬ সালে ইপিজেড ঠাকুরগাঁওয়ে করার সিদ্ধান্ত হলেও কিন্তু উশৃংখল মানুষ হতে দেয়নি, ফলে ইপিজেডটি নীলফামারী জেলায় স্থাপন করা হয়। তারাই আজকে কোল্ড ষ্টোরেজ শিল্পের পেছনে কাজ করছে এবং এ শিল্প তথা আলু চাষীকে ধ্বংস করার জন্য উঠেপরে লেগেই রয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে জেলায় নতুন করে কোন শিল্প বিনিয়োগে কেউ উৎসাহিত হবেন না বলে আশংকা প্রকাশ করছেন উদ্যোক্তারা। তার পরও কৃষি বৈজ্ঞানিক চেতনার আলোয় উদ্ভাসিত হবে জেলা এবং কৃষি ও শিল্পে উন্নয়নে সমৃদ্ধ হবে জেলা এই প্রত্যাশা সবার।

Related posts

Leave a Comment