শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:
রাজধানীর গুলশান-২-এর তাহের টাওয়ার শপিং সেন্টার। নিচতলায় আছে বেশ কয়েকটি মানি এক্সচেঞ্জ। এগুলোর একটি ‘স্ট্যান্ডার্ড ফরেন এক্সচেঞ্জ’। মানি এক্সচেঞ্জটির দরজা খুলে ঢুকতেই চোখে পড়ল ডলারের দরসংবলিত ডিসপ্লে বোর্ড।
তাতে লেখা ইউএস ডলার ক্রয় ১০৬, বিক্রি ১০৮ টাকা। প্রতি ডলার কিনতে কত লাগবে—জানতে চাইলে মানি এক্সচেঞ্জটির কর্মী সুমন চন্দ্র হাওলাদার জানালেন, ‘ডলারের রেট ১২০ টাকা। ’ বোর্ডে লেখা দামের চেয়ে এত বেশি কেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটাই দাম, এর কমে দিতে পারব না।’
ডলারসংকটের মধ্যেও কারসাজি করে ডলার বিক্রি করে বাড়তি মুনাফা করছে এমন অনেক মানি এক্সচেঞ্জ, যা ডলারের সংকটকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। রাজধানীর গুলশান ও পল্টন এলাকার কয়েকটি মানি এক্সচেঞ্জ ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। কেউ কেউ বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও গোয়েন্দা সংস্থার অভিযানের ভয়ে এই পথ বেছে নিয়েছে কিছু মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান।
গুলশানে গতকাল ডলার কিনতে এসেছিলেন জিয়াউল হক। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বেশি দামেও ডলার দিতে মানি এক্সচেঞ্জগুলো টালবাহানা করছে। ডলার কিনতে এলেই বলছে ডলার নেই। আবার কখনো কখনো বলছে পরে ফোন দেন। তারা ঘোষিত দাম তো মানছেই না; একটি মানি এক্সচেঞ্জ আমার কাছে ১১৯ টাকা করে নিয়েছে প্রতি ডলার।’
সূত্র জানায়, ডলারসহ বিদেশি মুদ্রা কেনাবেচায় শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে একাধিক চক্র। এই চক্রটি রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল, পল্টন, গুলশান এলাকায় এক্সচেঞ্জ হাউসের সামনে অবস্থান নিয়ে বেশি দামে ডলার বেচছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেলেই সটকে পড়ে তারা। কিছুক্ষণ পরই আবার ফিরে আসছে একই স্থানে।
গতকাল বৃহস্পতিবার খোলাবাজার বা কার্ব মাকের্টে এক ডলার কিন?তে গ্রাহক?কে গুনতে হচ্ছে? ১১৯ থেকে ১২০ টাকা।
জানতে চাইলে গুলশান-২-এর এএসএন মানি এক্সচেঞ্জের পরিচালক সলিম উল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশে মাত্র ২৩৫টি মানি চেঞ্জার বৈধ, আর ৬০০-র বেশি মানি চেঞ্জার অবৈধ, যাদের বিরুদ্ধে নিয়ম না মেনে লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। এসব অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ অনিয়ম করছে।’
বাংলাদেশ মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. হেলাল শিকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের প্রত্যেক সদস্য যার যার বোর্ডে যে দাম থাকবে সেই দামেই বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচা করবে। এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরিংয়ে ধরা পড়লে তার লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে। যারা এমন অনিয়ম করেছে তাদের বিরুদ্ধেই বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবস্থা নিয়েছে। আমরাও অনিয়ম বরদাশত করব না। যদি কেউ অনিয়মে জড়িত থাকে আমরাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে সুপারিশ করব। ’ তিনি বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠানই এখনো লাইসেন্স নবায়ন না করে ব্যবসা করছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তারা সুযোগ পেলেই ডলারের দাম বাড়িয়ে দেয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, দেশে ডলার আসার চেয়ে দেশ থেকে যাচ্ছে বেশি। এ কারণে খোলাবাজারে প্রতি ডলারের দাম ১২০ টাকায় উঠেছে। তাই বিদেশে যাওয়ার সময় ক্যাশ ডলার বহনে নিরুৎসাহিত করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’