মেহেরপুরে পুকুর-নদী ভাড়া দিয়ে পাট জাগ, বাজার মূল্যে উৎপাদন খরচ উঠছে না, বিপাকে চাষীরা

আমিরুল ইসলাম অল্ডাম, মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি:

মেহেরপুরে পুকুর নদী, খাল বিল ভাড়া দিয়ে পাটের জাগ দিচ্ছে চাষীরা । বর্তমান পাটের বাজার মূল্যে উৎপাদন খরচ উঠছে না চাষীদের।নিরুপায় হয়ে খাল বিল পুকুর নদী এমমনকি আবাদি জমিতে বিঘা প্রতি দেড় হাজার টাকা থেকে ১৮ শ’ টাকা পর্যন্ত ভাড়া দিয়ে পাট জাগ দেয়া হচ্ছে। পানির অভাবে পাট জাগ দিতে না পারায় বিপাকে পড়েছে মেহেরপুরের পাট চাষীরা । বুষ্টি না হওয়ায় খাল বিল পুকুর নদী খালে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় সেচের মাধ্যমে পাট জাগ দিচ্ছে চাষীরা ।
এমতাবস্থায় লোকসানের আশঙ্কা করছে কৃষকরা এবছর মেহেরপুরের পাট চাষ হয়েছে প্রায় ২২ হাজার হেক্টর জমিতে ।যা গত বছরের তুলনায় দেড় হাজার হেক্টর বেশী। চাষ বেশী হলেও পানির অভাবে জাগ দিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে চাষীদের। অনেক এলাকায় স্যালো ইঞ্জিন চালিত মেশিন ও মোটরের সাহায্য পানি দিয়ে পাট জাগ দিচ্ছে। এতে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে।কারন সার ও ডিজেলের দাম অনেক বেশী। পাট চাষী ভবানীপুর গ্রামের
আব্দুল হান্নান বলেন, এবছর বর্ষাকালে ঠিকমত বৃষ্টির পানি না হওয়ায় মেশিনে পানি দিয়ে পাট জাগ দিতে হচ্ছে।ইতোমধ্যেই জমিতে রস না থাকায় পাট ক্ষেত মরে যাচ্ছে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পানি না থাকায় রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট জাগ দেয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পাট জাগ দেয়া নিয়ে সমস্যা পাশাপাশি পাটের দাম নিয়েও চাষীরা শঙ্কায় রয়েছে ।
উপজেলার জোড়পুকুরিয়া গ্রামের পাট চাষী নাসিরউদ্দীন জানান, পাট চাষ লাভজনক ভেবে এবছর পাট চাষে চাষীরা বেশী আগ্রহ দেখিয়েছে। মাঠে শুধু পাট আর পাট ,চারিদিকে শোভা পাচ্ছে।কিন্তু পানির অভাবে জাগ দিতে না পারায় চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বেশী টাকা খরচ করে পাট কাটা ও ভাড়া জমিতে পানি দিয়ে পাট জাগ দেয়া হচ্ছে।

চাষিরা জানান, বিদ্যুৎ, ডিজেল ও সারের দাম ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকায় অনেক কৃষকই বোরো ধান চাষ না করে তুলনামূলক সাশ্রয়ী পাট চাষের দিকে ঝুঁকেছিলেন। বিগত বছরে পাটের বাজার খারাপ থাকলেও এবছর শুরুতেই পাটের বাজার দর সন্তোষজনক । এসব কৃষক জানান, চাষে সর্বসাকুল্যে খরচ কম হলেও পাট কাটা, আঁশ পচানো (জাগ দেয়া)এবং রোদে শুকানো পর্যন্ত অনেক খরচ এবং পরিশ্রম। বর্তমান পাটের বাজার মূল্য মনপ্রতি ১৮ শ’ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। তা ছাড়া এখানে কাজ করা একজন দিনমজুরকে ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা করে মজুরি দিতে হয়।
এত খরচের পর এই বাজারমূল্য আরও বাড়ানোর জন্য আহবান জানান তাঁরা।
এব্যাপারে গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার লাভলী খাতুন জানান, এবছর পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এবার পাটের বর্ধন বা উচ্চতা আশানুরুপ হয়েছে। কারন হিসাবে জানা গেছে, পাট চাষের শুরুতে প্রাকৃতিক বৃষ্টি থাকলেও বর্তমানে পানিপানি না থাকায় অনেকেই জমিতে সেচ দিয়ে পাট চাষ করেছেন। প্রথম দিকে আবহাওয়ার তাপমাত্রা কিছুটা বেশী থাকায় পাটের বর্ধন ভাল হয়নি। তবে কোন কোন মাঠে পাটের উচ্চতা খুব ভালো হয়েছে।
এবার পাটের বাজার মূল্য কিছুটা কম।গত বঝর পাট চাষ হয়েছিল ৯ হাজার হেক্টর জমিতে। সেকারনে অনেক চাষী পাট পরিপক্ক না হতেই কেটে জাগ দিচ্ছে। আমাদের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষনিক তদারকি করছেন এবং পাট জাগে পরামর্শ দিচ্ছেন। উদ্দেশ্য ঐ জমিতে আগাম ধান চাষ করবে। আমরা সব সময়ই আধুনিক প্রযুক্তিতে আবাদ করার জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করে আসছি। কৃষকরাও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছেন। তবে প্রাকৃতিক বিপর্যায় ঘটলে এবং সার ডিজেলের দাম বৃদ্ধি হলে আগামীতে পাট চাষ কম হতে পারে।

 

Related posts

Leave a Comment