অর্থের বিনিময়ে চাঁদ রাতে কমিটি গঠন ছাত্রলীগের

নোয়াখালী প্রতিনিধিঃ

ছাত্রলীগের নেতৃত্ব মনে হচ্ছে দিন দিন ভিন্ন পথে প্রবাহিত হচ্ছে, আর সেটা যদি ছাত্র না হয়ে অছাত্রদের হাতে চলে যায়, এমনকি ছাত্রলীগের ত্যাগী ছাত্রদের মূল্যায়ন না করে বিবাহিত ছাত্র কিংবা জামাত শিবিরের ছাত্র-ছাত্রী হয় তাহলে বলার আর কি থাকে, অন্তত এটা বলা যেতে পারে ছাত্রলীগের কমিটি হয় নাই।

তাই দলের হাইকমান্ড মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামিলীগের সভাপতি শেখ হাসিনা একটি কথাই বারবার বলে থাকেন দলে থেকে দলের ক্ষতি করবে এমন কাউকে পাওয়া গেলে কোন প্রকার ছাড় নেই কারণ ওরা আর যাই হোক দেশের ক্ষতি চায়। আর এটাও বলে থাকেন আওয়ামিলীগে অনেকভাবে, নানা কৌশলে জামাত শিবির প্রবেশ করতে পারে তাই সকল নেতা-কর্মীদের চোখ কান খোলা রাখার নির্দেশ দেন।

তারই একটি জলন্ত প্রমাণ দেখা যাচ্ছে নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলা তথা চৌমুহনী পৌর ও কলেজ শাখার ছাত্রলীগের কমিটিতে, যেখানে জামাত শিবিরের ছাত্র, বিবাহিত ছাত্র, অছাত্র এমনকি বেগমগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা নয় এমন ছাত্রও।

যতোদূর জানা যায় নোয়াখালী জেলা বেগমগঞ্জ উপজেলার ছাত্রলীগের কমিটি গত ২০১৭ সালে যেকোনো কারণেই হোক বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ প্রেস রিলিজের মাধ্যমে স্থগিত আদেশ করেছিলো বেগমগঞ্জ উপজেলা সহ চৌমুহনী পৌর ও কলেজ শাখার কমিটি। ততোদিন পর্যন্ত আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে চলছিলো।

কিছুদিন আগে কমিটি হয়ে গেলো রোজা ঈদের আগে অর্থাৎ চাঁদ রাতে, লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে। নোয়াখালী জেলার ছাত্রলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারির মাধ্যমে জানা যায় তারা বলেন এই কমিটি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ জানেন।

সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যদি কোন জেলা উপজেলার কমিটি কোন কারণে স্থগিত করা হয় এবং সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হওয়ার আগেই যদি কেউ একার সিদ্ধান্তের উপর বৃত্তি করে কমিটি করে ফেলেন তাহলে আইন অমান্য করা হয়, যেকারণেই সভাপতি আল নাহিয়ান খানকে বেগমগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি সম্পর্কে জানার জন্য ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে কোনভাবে যোগাযোগ করা যায়নি, তাহলে বিষয়টা ধুয়াশায় রয়ে গেলো। আর যদি কেন্দ্রীয় সংসদ না জানেন নোয়াখালী বেগমগঞ্জ উপজেলা সহ চৌমুহনী পৌরসভা ও কলেজ শাখার কমিটি সম্পর্কে তাহলে এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ মনে করছেন অনেকেই।

আর এদিকে বেগমগঞ্জ উপজেলা সহ চৌমুহনী পৌর ও কলেজ শাখার কমিটিকে নিয়ে একপ্রকার তীব্র নিন্দাই জানালেন প্রায়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের ১নং সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন বিন সাত্তার। তার ফেইসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন

তিনি যেভাবে লিখেছেন ঠিক হুবহু তুলে ধরা হলোঃ

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ,বেগমগঞ্জ উপজেলা শাখা, চৌমুহনী পৌরসভা শাখা, চৌমুহনী সরকারি এম এ কলেজ শাখা কমিটি সম্পূর্ণ অবৈধ কারন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ এই কমিটি প্রেস রিলিজের মাধ্যমে স্থগিত করে রেখেছিল। স্থগিতাদেশ উঠানো বা অধিকতর শাস্তি আরোপ করা একমাত্র কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এখতিয়ার।

কাজেই এই কমিটি সম্পুর্ণ অবৈধ ও অগ্রহনযোগ্য।

এই বিষয়ে কথা হয় বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নোয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডাক্তার জাফরুল্লাহ এর সাথে, তিনি বলেন এই অসাংবিধানিক কমিটিতে যারা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন তারা ছাত্রলীগের নয় তাদের আমি ঠিকমতো চিনিও না তবে এদের দেখা গেছে গত চৌমুহনী পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করতে, জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী খালেদ সাইফুল্লাহর পক্ষে ভোট করতে দেখেছেন।

চৌমুহনী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আক্তার হোসেন ফয়সাল সাহেবের সাথে কথা হলে উনি জানান, চাঁদ রাতের কমিটিতে যাদেরকে সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ও বিভিন্ন পোস্টে নেতা বানানো হয়েছে, তারা বেশির ভাগেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত নয় তারা ছাত্রশিবির থেকে এসেছে, বিবাহিত ও অছাত্রের সংখ্যা বেশি, এবং গত চৌমুহনী পৌরসভা ও বিভিন্ন নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করেছে তারা।

এই নিয়ে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ বরাবর বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও চৌমুহনী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক চিঠি লিখেছেন, এবং উনারা দাবি করেছেন 2017 সালের স্থগিত হওয়া বেগমগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে ছাত্রলীগের রাজনীতিকে সুসংগঠিত করার জন্য।

ঢাকা থেকে নোয়াখালী গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা প্রতিবেদন।

Related posts

Leave a Comment