আতঙ্কে দিনযাপন করছেন স্বামী! তেঁতুলিয়ায় স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীর লিখিত অভিযোগ

মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় নানান সমস্যা নিয়ে স্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রাম আদালতে স্বামীর একাধিক লিখিত অভিযোগ উঠেছে। এতে আতঙ্কে দিনযাপন করছেন স্বামী আবু তাহের। আবু তাহের উপজেলার দেবনগড় ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সিপাহীপাড়া গ্রামের ফয়জুল হকের ছেলে। অপরদিকে তাঁর স্ত্রী তানিয়া বেগম একই উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের গনাগছ গ্রামের জহিরুল হকের মেয়ে।
জানা যায়, গত ২০১৬ সালে জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ তাদের উভয়ের মধ্যে ইসলামী শরীয়ত সম্মতভাবে বিবাহ হয়। বিবাহের পর ৭ বছরের মোছাঃ আফিয়া ও দেড় বছরের মোঃ আব্দুল্লাহ সন্তান জন্ম লাভ করেন। বিবাহের প্রায় সাড়ে ৭বছর পর তাদের সংসারে নেমে আসে অশান্তির ছায়া।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আবু তাহেরের সহিত তার স্ত্রীর যেকোনো সময় ঝগড়া হলে প্রায় সময় আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে বিষ পান ও ফাঁস লাগানোর চেষ্টা করেন। ফাঁস লাগানোর দায়ে আবু তাহের গত ২০২২ সালের জুলাই মাসের ২০ তারিখ স্ত্রীকে বিবাদী করে দেবনগড় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। লিখিত অভিযোগের পর চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও স্বাক্ষীগণের উপস্থিতিতে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মধ্যে একটি স্থানীয় আপোষ নামা হয়।
এরপর উভয়ের মধ্যে খুব ভালোভাবেই ঘর-সংসার চললে আপোষ নামার ১বছর ১মাস ১০দিন পর আবু তাহেরের স্ত্রী চলতি সালের গত সেপ্টেম্বর মাসের ২১ তারিখ দিবাগত রাতে সোয়ার বিছানা থেকে তার বাপের বাড়িতে পালিয়ে যায়। পরে আবু তাহের তাঁর স্ত্রীসহ ৫জনের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদে আবারো একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। লিখিত অভিযোগে জানা যায়, আবু তাহেরের স্ত্রীকে অন্যান্য বিবাদীরা আত্মগোপনে
রেখে গুম মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিল। পরবর্তীতে তাদের পরিকল্পনা ভেচকে যায়।
আবু তাহের জানান, তাঁর স্ত্রী শেষ বারের মতো যখন চলতি সালের গত সেপ্টেম্বর মাসের ২১ তারিখ দিবাগত রাত অনুমান ৩টায় দেড় বছরের সন্তানকে রেখে সোয়ার বিছানা থেকে পালিয়ে যায়। তখন রেখে যাওয়া দুধের সন্তানকে তেঁতুলিয়া মডেল থানায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাঁর স্ত্রীর হাতে
তুলে দেয়। এরপর স্ত্রীর বিরুদ্ধে শেষ বারের মতো ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ জানালে গ্রাম আদালতকে তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর ফন্দিতে গত মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সকাল ১১টায় তার বাড়িতে প্রবেশ করে সোয়ার ঘরে থাকা আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। এরপর বাড়িতে থাকা তাহেরের মা ও আশপাশের লোকজন এসে তানিয়াকে সামলানোর চেষ্টা করে। পরে তানিয়ার ফুফু মাজেদা বেগম তানিয়াকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। তানিয়া ফুফুর বাড়িতে যাওয়ার পর গ্রাম পুলিশ তার হাতে কাটা দাগ দেখতে পায়।
স্ত্রী তানিয়া বেগম জানান, তার উপর অত্যাচার করায় তিনি তার বাপের বাড়িতে চলে যায়। গত মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) ছেলে সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়িতে গেলে বটির আঘাতে তার হাত কাটা যায়। মেয়ের বাবা জহিরুল ইসলামের কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি তার মেয়ের অত্যাচারের বিষয়ে
জানিয়ে অন্যান্য প্রশ্নের কোনো সদুত্তোর না দিয়ে মুঠোফোনে কথা বলা বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
এদিকে সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসির কাছ থেকে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) মারধরের বিষয়ে কোনো ঘটনা ঘটেনি। তানিয়া তাহেরের বাড়িতে এসেছিল এবং বাড়ির লোকজনদের সঙ্গে কিছু কথা কাটাকাটি হয়। তবে তাকে কোনো মারধর করা হয়নি।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য ফেরদৌস আলী বলেন, তিনি গত মঙ্গলবারের ঘটনায় ঘটনাস্থলে যাননি। তিনি বলেন, ছেলের পরিবার তানিয়ার উপর অত্যাচার করেন। পার্শবর্তী আরেক ইউপি সদস্য আইবুল হক বলেন, মেয়েটি এর আগে ফাঁসি লাগাতে ও বিষ পান করতে গিয়েছিলেন। এ নিয়ে অনেক বিচার সালিশ হয়েছে।
মেয়ের বাপের বাড়ি এলাকার ভজনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাহের আলী বলেন, তিনি বিষয়টি অবগত আছেন। তবে কোনো লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। ৩নং ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ আবুল কালাম বলেন, তানিয়ার ফুফু মাজেদা তাহেরের বাড়ি থেকে তানিয়াকে নিয়ে আসার পথে আমি উপস্থিত হয়। এরপর তানিয়ার ফুফুর বাড়ি থেকে তানিয়ার একটি চিৎকার শুনতে পায় পরে দেখি তানিয়ার হাতে কাটার দাগ। এ ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ ছলেমান আলী বলেন, এর আগে আবু তাহেরের স্ত্রী তার বাপের বাড়িতে গেলে অভিযোগের ভিত্তিতে একটি আপোষ নামা করে দেন। পরবর্তীতে জানতে পারেন আবার মেয়েটি গভীর রাতে তার বাপের বাড়িতে চলে যায়। মেয়ে বাপের বাড়িতে চলে যাওয়ার ব্যাপারে প্রথমে মেয়ের বাবা বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে সিসি ক্যামেরার কথা বললে মেয়ে পক্ষ বিষয়টি স্বীকার করেন। এরপর আবু তাহের চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দাখিল করলে মেয়ের বাবা সালিশী ডাকে সারা দেয়নি এবং তাহেরের স্ত্রী তার বাপের বাড়িতেই ছিল বলে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন। গত মঙ্গলবার      (৭ নভেম্বর) তাহেরের স্ত্রী গ্রাম আদালতকে না জানিয়ে স্বামীর বাড়িতে গেলে খবর পেয়ে গ্রাম পুলিশকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়।

মোবাঃ ০১৭৪৩৭৪০৭১০

Related posts

Leave a Comment