ইনসানে কামিল

– ডাঃ মৌলভী কাজী আবদুর রহমান

তাওয়াক্কুল (আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা)

যে কাজে তদবীর করা চলে সেখানে যথারীতি তদবীর করা (চেষ্টা করা) এবং ফলাফলের ভার সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর উপরে ন্যস্ত করে সন্তুষ্ট থাকার নামই তাওয়াক্কুল। তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ্। আল্লাহ পাক এরশাদ করেছেন-

“তোমরা যদি মুমিন হও, তবে আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হও। আল্লাহ পাক তাদেরকে ভালবাসেন যারা আল্লাহর প্রতি পূর্ণ নির্ভরশীল।”

আল্লাহর হাবীব বলেছেন-

“যখন তুমি কিছু চাও, এক আল্লাহর কাছে চাও এবং সাহায্য প্রার্থনা কর, তবে (সাহায্যের জন্য) এক আল্লাহর দরবারেই প্রার্থনা কর।”

মানুষ মাত্রই অভাবগ্রস্ত্র ও অক্ষম। সর্বদা তারা অন্যের মুখাপেক্ষী। তারপরও সে যদি কোন মানুষর বা অন্য কারোর মুখাপেক্ষী না হয়ে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহ পাকের মুখাপেক্ষী হয় এবং আল্লাহ পাক যখন যে অবস্থায় রাখেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকে তবে তাকেই তাওয়াক্কাল বা নির্ভরশীলতা বলা হয়।
নিজকে ইচছা পূর্বক বিপদে ফেলা এবং তকদীরে যা আছে হবে- আমার এ সব নিয়ে চিন্তা করা কিছু নেই, এ রকম ভাবা অন্যায়। বিপদ হয় হোক বা বিপদে পড়ার আগে কিংবা পরে বিপদ থেকে আÍরক্ষার চেষ্টা না করা শরীয়ত বিরোধী কাজ।
আল্লাহর মারেফাতের অর্থই হলো আল্লাহর সকল সিফাত ও কর্মশক্তি সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করা। আল্লাহ যে সর্বশক্তিমান, তিনি যে যা ইচছা তাই করতে পারেন এবং আমাদের শান্তি ও অশান্তির দেয়ার মালিক তা অবশ্যই দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করা, পাশাপাশি আমাদের প্রতি আল্লাহ পাকের যে নির্দেশ রয়েছে সেটা পালন করাই যে আমাদের একমাত্র কাজ- এ সম্বন্ধে ভাল ভাবে উপলব্দি করাই তাওয়াক্কুলকারীর নিদর্শন। যে সকল কাজের দ্বারা দুনিয়া ও আখেরাতে আমার উপর বিপদ আসার সম্ভাবনা রয়েছে তা হতে দূরে থাকার জন্য তিনি পূর্বেই সাবধান করে দিয়েছেন, সুতরাং ঐ সব হতে হুঁশিয়ার থাকা আমার নিজ দায়িত্ব, আর বিপদে পরে গেলে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহ পাক যা করার জন্য নির্দেশ দান করেছেন তা পালন করাও আমার দায়িত্ব।
নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের উপরই আল্লাহর দয়া, আল্লাহর রহমত নির্ভর করে। তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর মদদের পূর্ণ বিশ্বাস করা মোমেন লোকের প্রধান কাজ। তাওয়াক্কুলের তিনটি রোকন। যথা:- মারেফাত, হাল ও আমল।

মারেফাত:-
আল্লাহর পরিচয় জেনে তাঁর উপর এই পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করা যে আমার জীবন-মরণ (এই দেহ-মন) সব কিছুই আল্লাহর হাতে সমর্পিত। তাই, তাঁর বিধানের বাইরে এক কদমও চলব না, কোন কথা বলব না, কোন কিছু দেখব না, কোন কিছু স্পর্শ করবো না এবং, কোন কিছু ভাবব না, যেমন করেছিলেন আল্লাহর হাবীব ছাইয়েদিনা হযরত মোহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ)। তিনি আল্লাহর হুকুম না পেয়ে কিছুই করেননি, কিছুই বলেননি।
হযরত ইব্রাহীম (আঃ)- এর কথাও এখানে উল্লেখ করার মত। তিনি আল্লাহর উপর পূর্ণ তাওয়াক্কুলের মাধ্যমে নিজকে সমর্পণ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন-“আমি আমাকে স¤পর্ণরূপে সমর্পন করেছি আল্লাহতে, কিছুই রাখিনি নিজের জন্য। আমি যার এবং যা করলে তিনি খুশী হবেন তাই যেন ঘটে, এরই নাম আÍসমর্পণ।”

ফেরেশতাগণকে বললেন- “যার ক্ষমতায় নমরূদ সৃষ্টি, আমি স¤পূর্ণরূপে সমপর্ণ করছি তাঁর ইচছার উপর। তিনি আমার জন্য যা পছন্দ করেন, যে কাজে তিনি সন্তুষ্ট হন তাই হোক। আল্লাহর সন্তুষ্টিই আমার তৃপ্তি, আমার জীবনের সার্থকতা এবং কামীয়াবী।”

এখানে এটাই লক্ষ্য করা বিষয়, তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতার কি লাভ! নমরুদের অগ্নিকুন্ড জ্বলছে দাউ দাউ করে আর হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তাওয়াক্কুল নিয়ে বসে আছেন ফুলের বাগানের আরামদায়ক পরিবেশে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-

“কুল্না ইয়ানারুকুনি বারদাও ওয়া ছালামুন আলা ইব্রাহীম। আমি আগুনকে বললাম- হে আগুন! তুমি ইব্রাহীমের জন্য আরাম বা শান্তিময় হয়ে যাও)।”

আল্লাহর হাবীব ফরমায়েছেন-

“বান্দা যদি সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীল হয় তবে এমন ভাবে তার রুজি মিলবে, যেমন ভাবে মিলে থাকে পাখীদের জন্য। যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা রাখে তার যাবতীয় প্রয়োজন ও অভাব অভিযোগ আল্লাহ পাক নিজ দায়িত্বে পূর্ণ করে থাকেন। আর যারা দুনিয়ার কোন আশ্রয় অবলম্বন করে, আল্লাহ পাক তাদেরকে দুনিয়ার হাতেই সমর্পণ করে থাকেন।”

অতএব আমাদের প্রত্যেকের উচিত একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, সর্বময় মালিক পরওয়ারদিগারের উপর নির্ভরশীল হওয়া। আসুন আমরা সকলে আল্লাহর ক্ষমতা, রহমত ও বরকতের উপর একীনকে মজবুত করে অন্তর হতে বলি- “তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ”।
(চলবে——–)

Related posts

Leave a Comment