ইনসানে কামিল

– ডাঃ মৌলভী কাজী আবদুর রহমান

তকদীর বা ভাগ্য

রাসুলে মাকবুল (সাঃ) বলেছেন-
“রাব্বুল আলামীন কলমকে সৃষ্টি করে হুকুম দিলেন- হে কলম! তুমি লিখ। তখন কলম বললো- ইয়া আল্লাহ! আমি কি লিখবো? আল্লাহ পাক বললেন- তুমি কিয়ামত কাল পর্যন্ত প্রতিটি বস্তুর তকদীর লিখ।” কলম তাই করল।

আল্লাহর হাবীব আরো বলেছেন-
“আসমান ও জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বৎসর পূর্বে আল্লাহ পাক প্রত্যেক মাখলুকের তকদীর নির্ধারিত করে রেখেছেন। তকদীরের উপর বিশ্বাস করার অর্থ ভাল-মন্দ, শুভ-অশুভ, রিজিক-দৌলত, হায়াত-মউত, কবরের ছওয়াল জওয়াব, পুনুরুত্থান (পূণর্জীবন), হিসাব-নিকাশ, শান্তি-ক্ষমা, বেহেশত-দোজখ, নবীর শাফায়াত, মিজান, হাশর ইত্যাদি সবই সত্য। সব কিছুই তাঁর ইচছায় হয়েছে, হচেছ এবং হবে। সব কিছুর পরিকল্পনা তিনি পূর্বে থেকেই নির্ধারিত করে লিখে রেখেছেন। তারই নাম তকদীর।

রাব্বুল আলামীন যার তকদীরে যা লিখে দিয়েছেন- তাই হবে, তাই ঘটবে। এর ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি, ঘটছে না বা ঘটবেও না, ঘটতে পারে না। তকদীরকে বুঝা বড়ই কঠিন। তবে তকদীরের উপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করে আল্লাহর নির্দেশিত হুকুমগুলি জেনে বুঝে নবী করীম (সাঃ)- এর তরিকায় প্রতিপালন করলে তকদীরকে বুঝার ক্ষমতা অন্তরে পয়দা হয়।

তকদীর সম্বন্ধে এলেম শিক্ষা করা ফরজ। তকদীরকে পূর্ণ বিশ্বাস করাও ফরজ। তবে তকদীর নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ভাল নয়। এতে ঈমান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর আল্লাহ পাকের সৃষ্টি বা অস্তিত্ব (সত্তা) সম্বন্ধে কেউ যদি চিন্তা করে জানার চেষ্টা করে, আলোচনা করে, তবে শেষ পর্যন্ত সে ঈমান হারিয়ে ফেলতে পারে। কেননা, উহার কোন দলিল মিলবে না। তাই এই বিষয়ে চিন্তা না করাই উচিত। মনে রাখতে হবে- “লা দলীলা-ইল্লাল্লাহ”।
অর্থাৎ কোন দলিল ছাড়াই বিশ্বাস করতে হবে, মেনে নিতে হবে- আল্লাহ এক এবং তাঁর কোন শরিক নাই।

হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ফরমায়েছেন- “আমার উম্মতের মধ্যে যারা তকদীরে বিশ্বাস করে না তারা মাজুসী বা অগ্নি উপাসক সমতুল্য, এই সকল লোকেরা রোগগ্রস্ত হলে তোমরা তাদেরকে দেখতে যেও না। তাদের মৃত্যু হলে তোমরা তাদের জানাজায় উপস্থিত হবে না।” (মেশকাত শরীফ)

কেউ যদি ওহুদ পাহাড় সম স্বর্ণের মালিকও হয় এবং তার সমস্তই আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেয় তবু আল্লাহ তার এই দান কবুল করবেন না, যতক্ষণ না সে তকদীরের ভাল মন্দের উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে।

আল্লাহ পাক বলেছেন-
“হে নবী ! আপনি বলুন, আমাদের জন্য আল্লাহ পাক যা নিদৃষ্ট করে রেখেছেন তা ছাড়া আমরা কখনও অন্য কিছুর ভাগী হতে পারি না।”

(কারণ) তিনি আমাদের কর্ম বিধায়ক। তিনিই সকলের সকল কর্মের সৃষ্টিকারী এবং কাকে কি কি কাজ করতে হবে তার নির্দেশ ও বিধান দাতা।

আল্লাহর হাবীব ফরমায়েছেন-
“যখন তোমাদের কোন কিছু চাইতে হয় তখন কেবল আল্লাহর কাছেই চাও এবং যখন সাহায্য প্রার্থনা কর তখন এক আল্লাহর নিকটই প্রার্থনা করে।” (তিরমিজি শরীফ)

মোট কথা, আল্লাহর বিধানের উপর আমাদের সকলকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। তিনি আমাদের তকদীরে কি লিখে রেখেছেন তা মানুষের জানার ক্ষমতার বাইরে। তকদিরের খবর কেবল তিনিই জানেন। তিনি দুনিয়াতে আমাদের জন্য যে সকল কর্ম নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন আমাদেরকে বিনা বাক্যে বেহুদা তর্ক না করে ঠিকভাবে সে সকল কর্ম করতে হবে। অন্যথা করা মহা অন্যায়, মারাত্মক ভুল।

কিছু কিছু কাজের ক্ষেত্রে আল্লাহ পাক সীমার ভেতরে মানুষকে ইচছা ও এখতিয়ার শক্তি প্রদান করেছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর প্রতি বিশ্বাস রেখে নির্ধারিত সীমানায় নিজ ইচছা ও এখতিয়ার শক্তিকে ব্যবহার করতে হবে। আবু খাজামা তার পিতার নিকট হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসুলুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন- ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! আমরা রোগে-শোকে যে তাবিজ-তুমার ব্যবহার করি, রোগ ব্যধিতে ঔষধপত্র ব্যবহার করি, এ সব থেকে বাঁচার জন্য বাছ-বিছার ও সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা করি তাতে কি তকদীর পরিবর্তন হতে পারে?

উত্তরে আল্লাহর হাবীব বলেছেন-

“এ সকল সব কাজও তকদীরের অন্তর্ভূক্ত।”

আল্লাহর হাবীবের এই জবাবের সারমর্ম এই যে, দয়াময় আল্লাহ আমাদের জন্য রোগ-ব্যধির সৃষ্টি করেছেন, আবার তিনিই এ সব রোগ দূর করার জন্য তদবীর শিখিয়ে দিয়েছেন। কোন রোগের কোন ব্যবস্থা, কোন রোগের কোন ঔষধ এবং এই ঔষধ খাওয়ার বিধি-ব্যবস্থা কি তাও তিনি ণির্ণয় করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয় ঔষধে রোগ সারানোর শক্তিও তিনিই দান করেছেন। কাজেই সব কিছু ঐ তকদিরের অন্তর্ভূক্ত।

এই ভাঙ্গা-গড়া, ভাল মন্দের বিধানও তকদীর। আর এই বিধানের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে তা নিঃসন্দেহ চিত্তে, বিনা দ্বিধায়, শ্রদ্ধার সাথে পালন করে চলার নামই তকদীরে বিশ্বাস।

আমরা আল্লাহর গোলাম। তাঁর ফর্মাবর্দ্দারী করা আমাদের কাজ । একমাত্র তিনিই আমাদের ভরসা, তিনিই একমাত্র ইলাহ।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে-

“আত্ তাকদিরু লা ইয়া রুদ্দ- অর্থাৎ তকদীর অখন্ডনীয়।”

তকদীরে যা আছে তাই ঘটবে, যা হবার তাই হবে। তবে, আমার জন্য আল্লাহ পাক যা করতে হুকুম প্রদান করেছেন, আল্লাহর তৌফিক নিয়ে আমি তা নিরলস ও নিখুঁত ভাবে পালন করবো। আয় আল্লাহ! আমাদের জ্ঞান দাও, এলেম দাও, এমন তৌফিক দাও যাতে তকদীরের উপর কায়েম থাকতে পারি।

(চলবে——–)

Related posts

Leave a Comment