ইনসানে কামিল

কুফরী কালাম

– ডাঃ মৌলভী কাজী আবদুর রহমান

আল্লাহকে অস্বীকার করার নাম কুফরী। দৈনন্দিন জীবনে যে সব কথা আর কাজের মধ্য দিয়ে আমরা যে ভাবে কুফরীকে হাত ছানি দেই তার কয়েকটি নমুনা তুলে ধরা হলো-
১) যদি কেউ আল্লাহ ও তার রাসুলকে (সাঃ) অবজ্ঞা করে কোন কথা বলে তবে সে কাফের হবে।
২) যদি কেউ নামাজ রোজাকে ফরজ বলে স্বীকার করে কিন্তু আলস্য বশতঃ তা পালন না করে তবে সে কঠিন গুনাহগার ও ফাসেক হবে, কিন্তু কাফের হবে না। কিন্তু যদি ফরজ বলে স্বীকার না করে অথবা বলে যে নামাজ রোজা করে কি হবে অথবা তোমার রোজা নামাজে নিয়ে তুমি থাকো আমার এতে দরকার নেই- তবে সে কাফের হবে।
৩) যদি কেউ কোরআন শরীফের কোন আয়াতের মন গড়া অর্থ করে এবং তা নিয়ে হাসি তামাসা করে তবে সে কাফের হবে।
৪) যদি কেউ নবী মোহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে শেষ নবী এবং তার পর আর কোন নবী দুনিয়ায় আসবে না বলে বিশ্বাস না করে তবে সে কাফের হবে।
৫) যদি কেউ কোন আলেমকে তার লম্বা জুব্বা-জামা দেখে ঠাট্রা বিদ্রোপ করে বলে যে এসব জুব্বা জাব্বার জন্যই তাকে দেখতে পারি না বরং তারাই দেশের কাপড়ের দাম বাড়িয়েছে, গরীবের সর্বনাশ করেছে, তবে সে কাফের হবে।
৬) যদি কেউ কোন আলেমকে দেখে ঠাট্রা করে বলে যে ঐ দেখ আলামতারা বা আইন-গাইন আসছে তবে সে কাফের হবে।
৭) যদি কেউ পবিত্র কোরআন শরীফ বা আরবী শিক্ষা সম্বন্ধে বলে যে, এ সব ভিক্ষার বিদ্যা শিক্ষা করে কি হবে- তবে সে কাফের হবে।
৮) যদি কেউ ঠাট্রা করে বলে যে, ক্ষুদার জ্বালায় আমার পেট কুলফুআল্লাহ পড়ছে তবে সে কাফের হবে।
৯) যদি কেউ (দ্বীনের) ওয়াজ নসিহতের মজলিসে যেতে অস্বীকার করে বলে যে ওয়াজ শুনে কি হবে, আলেমগণ তো কত কথাই বলে কিন্তু পালন করা সম্ভব নয়, এরূপ বললেও সে কাফের হবে।
১০) যদি কেউ বলে যে, আল্লাহর বিচার নেই অথবা বলে যে আল্লাহর চক্ষু নেই আমার একটা মাত্র ছেলে তাও তাঁর সইলো না, আমারটাই তাঁর চোখে পড়লো আর কাউকে দেখলো না, আল্লাহর প্রতি এরূপ দোষারূপ করলেও সে কাফের হবে।
১১) যদি কেউ বলে যে, আল্লাহ আমার প্রতি জুলুম করেছে, অবিচার করেছে অথবা বলে যে আমার বেলায়ই আল্লাহর যত কৃপনতা, এরূপ বললেও সে কাফের হবে।
১২) যদি কেউ বলে যে নামাজ পড়ে কি হবে, তুমি এতোদিন ধরে নামাজ পড়ছো তার কোন চিঠি পেয়েছো? এরূপ বললেও সে কাফের হবে।
১৩) যদি কেউ বলে যে, আখেরাতের আশায় বসে থেকে কোন লাভ নেই, আখেরাতে কি পাব না পাব তার বিশ্বাস কি? তার চেয়ে ভাল দুনিয়াতে যে ভাবে যা নগদ লক্ষী পাও তা নিয়ে ফুর্তি কর। এরূপ বললেও সে কাফের হবে।
১৪) যদি কেউ জেনে শুনে সওয়াবের আশায় সুদ ও ঘুষের টাকা মসজিদে দান করে তবে সে কাফের হবে।
১৫) যদি কেউ দাঁড়িওয়ালা লোককে সাইনবোর্ড ওয়ালা বলে ঠাট্রা বিদ্রুপ করে অথবা বলে যে দাঁড়ি রেখে কি হবে- দাঁড়ি তো ছাগলেরও আছে, এভাবে একজন মুসলমানকে অপমান করলে সে কাফের হবে।
১৬) যদি কেউ বলে যে হজ্জ্ব করে কি হবে, হাজীগণ আরো বেশী পাজি হয় তবে সে কাফের হবে।
১৭) যদি কেউ পবিত্র কোরআন শরীফ পড়ার সময় উহার সুরে সাথে কোন বাঁশী, হারমুনিয়াম, বেহালা, সারিন্দা, তবলা, লাউ বা অন্য কোন বাদ্যযন্ত্র দ্বারা সুর মিলায় তবে সে কাফের হবে।
১৮) যদি কেউ বলে যে আল্লাহর আশায় বসে থাকবো না বরং নিজের মনে যা চায় তাই করবো অথবা আল্লাহ যা করেছে তা তো দেখলামই এবার নিজেই দেখবো কি করা যায়, তবে সে কাফের হবে।
১৯) যদি কেউ বলে যে আমাকে খোদার ভয় দেখাবেন না, খোদাকে ভয় করে দেখেছি, এতে ঠকা ছাড়া জিতা নেই তবে সে কাফের হবে।
২০) যদি কেউ বলে যে, মানুষ তো দূরে কথা আল্লাহ ও জানতে পারবে না, তবে সে কাফের হবে।
২১) যদি কেউ বলে যে, সে যদি আল্লাহও হয় কিংবা আল্লাহর খালাতো ভাইও হয়, তবু তাকে আমি খাতির করবো না, তবে সে কাফের হবে।
২২) যদি কেউ বলে যে, দাঁড়ি রেখে কি হবে? দাঁড়ির মধ্যেই যত শয়তানের আড্ডা- তবে সে কাফের হবে।
২৩) যদি কেউ অন্য কাউকে বলে যে ভাই মদ খাওয়া ছেড়ে দাও, কারণ মদ খাওয়াকে আল্লাহ পাক হারাম করেছেন। তদুত্তরে সে বললো যে, আরে ভাই রেখে দাও তোমার হালাল-হারাম, মদের মতো এমন ভালো জিনিস আমি দেখিইনি, এটাকে ছাড়া যাবে না, খেতেই হবে তবে সে কাফের হবে।
২৪) যদি কেউ বলে যে, আমি কি করবা ভাই! জামানারই দোষ এ জমানায় সরল ও সৎ পথে থাকলে পেট চলবে না। দেখছ না, বাটপারী বদমাশী যারা করে, তারাই বড় লোক হয়, তবে সে কাফের হবে।
২৫) যদি কেউ বলে যে, একজন পুরুষ চার জন মেয়ে বিবাহ করার আদেশটি আমি মোটেই পছন্দ করি না, আল্লাহর এ আদেশ দেয়া ঠিক হয়নি তবে সে কাফের হবে।
২৬) যদি কেউ বলে যে মজ্জাল মিরাছের আইনটি জারী করে আল্লাহ পাক এতিমদের প্রতি জুলুম করেছে তবে সে কাফের হবে।
২৭) যদি কেউ বলে যে, রাখ তোর বেহেশত আর দোজখ, মানুষ মরার পর পুনরায় জীবিত হয়ে বেহেশতে যাবে বা দোজখে যাবে, এ সব কথা আলেমদের মনগড়া কথা মাত্র তবে সে কাফের হবে।
২৮) কেউ বললো- তুমি তাকে ভয় করো নাকি? সে তার উত্তরে বললো- আমিতো দূরের কথা, তাকে দেখে স্বয়ং আল্লাহও ভয় পায়। তবে সে কাফের হবে।
২৯) যদি কেউ বলে যে, তুমি রোজা রাখ না কেন? উত্তরে সে বললো- রোজা রাখবো কেন? আমার কি ভাতের অভাব আছে নাকি? রোজা রাখবে তারা যারা খেতে পায় না। তবে উক্ত ব্যক্তি কাফের হবে।
৩০) যদি কেউ বলে যে, আগে আল্লাহ পাছে তোমার ভরসাতেই আমি এ কাজে হাত দিয়েছি তবে সে আল্লাহর সঙ্গে শরীক করার কারণে কাফের হবে।
৩১) প্রকৃতির খেয়াল খুশীর শিকার হয়ে (অর্থাৎ প্রকৃতিক ঝড়, তুফান, জলোচছাস, টর্নেডো ইত্যাদি হওয়ায়) হাজার হাজার লোখের অপমৃত্যু হয়েছে এরূপ বললেও কাফের হবে।
৩২) মানুষের নাম দয়াময় রাখা বা দয়াময় বলে ডাকা তেমনি ভাবে রহমান, রাহিম, করিম সাত্তার, জলিল ইত্যাদি নাম রাখা ও ডাকা কুফরী। এ ক্ষেত্রে নামগুলি আবদুর রহিম, আবদুর রহমান, আবদুল করিম, আবদুর সাত্তার এবং আবদুল জলিল এরূপে ডাকতে হবে।

(চলবে–)

 

Related posts

Leave a Comment