ইনসানে কামিল

ডাঃ মৌলভী কাজী আবদুর রহমান

পর্ব-দশ

হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর আধ্যাত্মিক ধ্যান এবং নবুয়ত লাভ

 

বিবাহর পর হতেই আল্লাহর হাবীবের মন ক্রমান্নয়ে আধ্যাÍিক খেয়াল ও ধ্যানে নিমগ্ন হতে থাকে। আকাশ, জমিন এবং বিচিত্র দুনিয়ার জীব-জন্তু, গাছ-পালা, নদ-নদী, ফল-ফুলসহ সৃষ্টির এই বিচিত্র সমাহারকে সৃষ্টি করেছেন (?) কে এদের পরিচালক, কে তার পালন কর্তা- এ সব নিয়ে তিনি দিনরাত ভাবতে লাগলেন। ভাবতে লাগলেন- সৃষ্টির অপূর্ব মাধুরী নিয়ে। কত কৌশল, কত হেকমত, কত নিপুনতার ছোঁয়া ছড়িয়ে আছে প্রতিটি সৃষ্টির মাঝে। কত বিচিত্র, কত বিরাট তাঁর জ্ঞানের ভান্ডার।
সত্যিই তো! কে তিনি? এবং কি উদ্দেশ্যে তিনি এ সব সৃষ্টি করেছেন? কি তাঁর পরিচয়?
এভাবে রাত দিন চিন্তার সমুদ্রে তিনি সাঁতার কাটতে লাগলনে। এ চিন্তার কুল নাই, কিনার নাই। যেন এক মহাসমুদ্র। তবু ধৈর্য্য হারালেন না তিনি। ক্রমান্বয়ে আরও বেশী ভাবতে লাগলেন, চেষ্টা করতে লাগলেন সঠিক পথের সন্ধান পেতে। আর তাঁকে এ সন্ধান খুঁজে পেতেই হবে। কাজটা যত কঠিনই হোক না কেন তাঁকে জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত খুঁজে দেখতেই হবে- অদৃশ্য থেকে কে এ সব করছেন?
এদিকে আল্লাহর আশেক মোহাম্মদ মোস্তাফা (সাঃ)- এর কথা-বার্তা, চাল-চলন, আচার-ব্যবহার, ধ্যান-ধারণায় বুদ্ধিমতি বিবি খাদিজা অনুভব করতে লাগলেন- তাঁর স্বামীর অবস্থা, তিনি কি ভাবছেন, কিসের চিন্তা করছেন, কিসের সন্ধানে ফিরছেন সারা দিন।
এই ভাবে অতিবাহিত হলো আরো ক’টি বৎসর।
কিন্তু হযরতের বয়স যখন ৩৫ বৎসরের কোঠায় উপনীত হলন তখন-তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে গেলো। সম্পূর্ণভাবে ভাবান্তর দেখা দিলো তাঁর কর্মকান্ডে। মনে হলো, তিনি সর্বক্ষণ কি যেন দেখছেন, কি যেন শুনছেন অথচ কিছুই বুঝতে পারছেন না, আয়ত্বে আনতে পারছেন না কিছুই।
ভাবের আবেশ যখন আরো গভীর হয়ে উঠেলো তখন লোকালয় ছেড়ে নিভৃতে অতি নির্জনে গিয়ে ধ্যানে মগ্ন হয়ে থাকা তাঁর কাছে অতি প্রিয় বলে মনে হতে লাগলো।
মক্কা শরীফ হতে তিন মাইল দূরে হেরা পর্বত। খুব নির্জন স্থান এটি। নির্জনতা খুঁজতে খুঁজতে তিনি চলে গেলেন সেখানে। তারপর হেরা পর্বতের নিভৃত গুহায় বসে মগ্ন হলেন ধ্যানে।
পূর্ব হতেই স্বামীর প্রতি বিবি খাদিজার ছিলো বিশেষ দৃষ্টি। প্রতিদিন তিনি স্বামীর প্রয়োজনীয় পানি ও খাদ্য পৌঁছে দিতেন সেখানে। এভাবে বেশ কিছু দিন চলার পর আল্লাহর প্রেমিকের অন্তর ও বাহিরে দয়াময় আল্লাহর নুরের জ্যোতি প্রকাশিত হলো। অন্তরে মহা শক্তিধর রাব্বুল আলামীনের পরিচয়- “মারেফাতে এলাহী” মিলে গেলো।
মোহাম্মদ (সাঃ)- এর বয়স যখন চল্লিশ পূর্ণ হলো তখন তাঁর নিকট আল্লাহ পাকের দূত হযরত জিব্রাঈল আমিন আল্লাহর হুকুম নিয়ে উপস্থিত হলেন। আল্লাহর দোস্তকে সালাম জানিয়ে রাব্বুল আলামীনের প্রেরীত ওহীয়ে নবুয়ত ও রেসালাত পৌঁছে দিলেন এবং পবিত্র কোরআন হতে পাঠ করে শুনালেন আল্লাহ পাকের বিধান নামা।

কোরআন পাক নাজিল

হযরত জিব্রাঈল আমীন এসে আল্লাহর প্রিয় হাবীব মোহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে আল্লাহ পাকের পবিত্র বাণীর ৫টি আয়াত পড়ে শুনালেন-

১। (সুরা আলাক পারা ৩০ আয়াত )-
অর্থাৎ “আপনার সেই প্রভুর নামে পাঠ করুন যিনি (সমস্ত কিছু) সৃষ্টি করেছেন।”

হযরত বললেন- আমি পড়তে জানিনা। জিব্রাঈল (আঃ) হযরতকে আলিঙ্গন করতঃ আবার বললেন- পাঠ করুন। হযরত পূর্বের মতোই বললেন- আমি পড়তে জানিনা। হযরত জিব্রাঈল (আঃ) আবার আলিঙ্গন করলেন। এভাবে তিনবার আলিঙ্গন করলেন।
শেষবারে আল্লাহর হাবীব আল্লাহর মেহেরবাণীতে কোরআনে কারীমের এই আয়াত শরীফ হুবুহু পাঠ করলেন। তারপর হযরত জিব্রাঈল (আঃ) আরও ৪টি আয়াত পাঠ করে শুনালেন আল্লাহর হাবীবকে।

অর্থাৎ

২।“যিনি মানুষকে জমাট বাঁধা রক্তের টুকরা (আলাক) হতে সৃষ্টি করেছেন।”

৩।অর্থাৎ “আপনি পাঠ করুন (কোরআন)। আর আপনার প্রভু অতিশয় দয়ালু।”

৪।“তিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।”

৫। (লেখনীর সহায়তা ব্যতীত) মানুষকে ঐ সকল বিষয়ের শিক্ষা দিয়েছেন, যে সব সে জানত না।

এইভাবে মোট ৫টি আয়াত নাজিল হওয়ার পর বেশ কিছুদিন পর্যন্ত ওহী বন্ধ থাকে। এতে আল্লাহর হাবীব বিশেষ ভাবে চিন্তা, উদ্ধেগ ও অধৈর্যের মধ্যে দিয়ে দিনগুলি গুজরাণ করতে লাগলেন।
এরই মধ্যে হঠাৎ একদিন হযরত জিব্রাঈল (আঃ) এসে সালাম বাদ নিম্ন লিখিত আরও কয়েকটি আয়াতে কারীমা শুনিয়ে (নাযিল) গেলেন-

“হে সংস্কারক! (বস্ত্রাচছাদিত) উঠ (দাঁড়াও প্রস্তুত হও) এবং মানুষগণকে তাদের পাপের অবশ্যম্ভাবী কুফল সম্বন্ধে সতর্ক করে দাও। স্বীয় প্রভুর মহত্ত ঘোষণা কর এবং নিজ নিজ পরিচছদগুলিকে রুচি সম্মত কর, সকল কলুষতাকে বর্জন কর। অধিকতর প্রত্যুপকারের আশায় উপকার কর না। সত্য প্রচারে তোমাকে অবশ্যই অত্যন্ত কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হবে, তুমি তাতে ধৈর্য্য হারাবে না বরং তোমার প্রভুর জন্য ধৈর্য্য ধারণ করে থাকো।”

আল্লাহ পাকের দেয়া এই পবিত্র কালাম “কোরআন” মজিদ মানুষ জাতির জীবন বিধান। এতে রয়েছে হেদায়েত ও জীবন পরিচালনা করার নিখুঁত ও নির্ভেজাল নির্দেশ, যার কোন পরিবর্তন নেই। এর পরিবর্তন কখনই হবে না- কেউ করতে পারবে না। পবিত্র কালামের শেষ আয়াত নাজিল হয় রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর শেষ বিদায় হজ্জের সময়। সেদিন আল্লাহ পাক ঘোষণা করেন:-

আল-ইয়াওমা আকমালতু লাকুম দীনুকুম ওয়াআত্মামতু আলাইকুম নিয়মাতি ওয়া রাদী তুলাকুমুল ইসলামা দীনা।- (সুরা মায়েদা পারা ৬, আয়াত ৩)

“আজ আমি তোমাদের জন্য ইসলামকে ধর্মরূপে মনোনীত করে আমার সকল নিয়ামত দ্বারা পূর্ণ করে দিলাম।”

অর্থাৎ মানুষের ইহকাল ও পরকালের চরম উন্নতির জন্য যে বিধানের আবশ্যক ছিলো তা মোহাম্মদ (সাঃ)-এর দ্বারা আজ আমি পূর্ণ করে দিলাম।

এ আইন চিরস্থায়ী, এ বিধান চিরস্থায়ী। দুনিয়া যত দিন থাকবে এ আইন ততদিন বলবৎ থাকবে মানুষের উপর। এই বিধানের উপরই মানব জাতিকে চলতে ফিরতে হবে। ইচছা করলেই যে কেউ খুশী মতো এ আইনের কোন পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা সংশোধন করতে পারবে না। আল্লাহর দুনিয়ায়, আল্লাহর জমিনে, আল্লাহর রাজত্বে যা কিছু আছে সব তাঁর গোলাম। একমাত্র আল্লাই সবার মনিব। তাই মানুষকে চলতে হবে মনিবকে মান্য করে, তাঁর ফর্মাবদ্দারী করে। আর তা হতে হবে বিনা দ্বিধায়, বিনা কৈফিয়তে। এর বিপরীত কোন কাজ তো দূরের কথা চিন্তা বা কল্পনা পর্যন্ত মনে স্থান দেয়া যাবে না। করলে ঈমান থাকবে না। বেঈমান কাফের হয়ে যাবে। তাই বন্ধুর প্রতি আল্লাহর কি কঠোর নির্দেশ-

“উঠ! আর দেরী করো না, তোমার উপর যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা পালন কর। আমার হুকুম পালন কর। কাজ আরম্ভ কর। নিজ কর্তব্য স¤াপাদনে তৎপর হও। বিশ্ববাসিকে আমার হুকুম জানিয়ে দাও। আমার নির্দেশ সকল জানিয়ে দাও। তাদের জানিয়ে দাও- সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিজিক দাতা, হায়াত ও মউতের মালিক, সুখ শান্তি দেনেওয়ালা এবং সৃষ্টির মধ্যে এই যে দৃশ্য (অদৃশ্য) যা কিছু সব তাঁর অধীন। এ ছাড়া মানুষ ও জ্বীন জাতিকে তিনি কেন বা কি উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন, কেন তাদের মৃত্যু ঘটবে এবং মৃত্যুর পর কি ঘটবে- এ সব কথা জানিয়ে দাও। জানিয়ে দাও- পাপ পুণ্যের কথা, এর সুফল এবং কুফলের কথা, বেহেশত এবং দোজখের কথা, এক কথায় কি জন্য এ সব সৃষ্টি করা হয়েছে তার বিস্তারিত সংবাদ তাদেরকে জানিয়ে দাও। বুঝিয়ে দাও সব কিছু। আর সে সাথে স্বীয় প্রভুর বড়ত্ব, মহত্ব ও তৌহিদের বাণী তাদের নিকট পৌঁছে দাও। আর দেরী করো না। বিশ্রাম চলবে না, কাজ আরম্ভ কর।
নিজ দেহ ও পোষাক পরিচছদের পবিত্রতা আনয়ন কর ও রুচি সম্মত কর এবং সকল প্রকার অপবিত্রতা বর্জন কর, “নফসের এসলাহ কর” । দেলের পবিত্রতা হাসেল কর। ঈমান ও একীন মজবুত কর। মানুষের উপকার কর, তাদের নিকট হতে প্রত্যুপকারের আশায় কোন উপকার করো না।
আর এই সত্য প্রচার করতে গিয়ে তোমাকে অবশ্যই অত্যন্ত কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হবে। ভীষণ বিপদে পড়তে হবে (যাতে সাধারণ লোক তোমাকে সাহায্য করতেও পারবে না), এরূপ অবস্থায় তুমি কিন্তু ধৈর্য্য হারাতে পারবে না। তোমার প্রভুর জন্য ধৈর্য্য ধারণ কর। নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত শক্তিশালী (ধৈর্য্যশীল), হেকমতওয়ালা ও মদদগার।”

প্রভুর নির্দেশ পেয়ে হযরত মোহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) শতবাঁধা বিপত্তি, শত অত্যাচার-অবিচার, অপমান, তিরস্কার, লাঞ্ছনা বিনা দ্বিধায় সহ্য করে আল্লাহর তৌহীদের ঘোষণা, একত্ববাদের প্রচার অরম্ভ করে দিলেন। আল্লাহর মনোনীত ইসলাম ধর্মের মূলমন্ত্র-

“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ)”

অর্থাৎ নেই কোন মাবুদ বা ইলাহ (পূজ নেকী লায়েক) আমার এবাদত পাওয়ার যোগ্য কিংবা আমি যার এবাদত করতে পারি, এমন আর কেউ নেই এক আল্লাহ ব্যতিত। মোহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর প্রেরীত নবী ও রাসুল (বার্তা বাহব)”-
সাসুলুল্লাহ এই পবিত্র কালেমার ঘোষণা দিতে লাগলেন। প্রচার করতে লাগলেন আল্লাহর মহিমা, আল্লাহর গুণগান (সিফাত সকল) ।

বিশ্ববাসিগণকে আহবান করে তিনি আরো প্রচার করতে লাগলেন-

“হে মানুষেরা! তোমরা শুন, তোমরা জেনে নাও- এ বিশ্বে যা কিছু দেখছো, যা কিছু আছে বা হবে, তার একজন সৃষ্টি কর্তা, পালন কর্তা, বিধান দাতা নিশ্চয় আছেন, যিনি এক- “লাশারিকালাহ”। তিনি অদৃশ্য, অমর, সকল কিছুর উপর মহা শক্তিশালী। তিনি যা ইচছা করতে পারেন। তিনি “হও” বললেই সব হয়ে যায়। তাঁর কাজে কারও সাহায্যের দরকার হয় না। তাঁর কাজে বাঁধা দেবার শক্তি কারো নেই। তাঁর উপর কোন শক্তি নাই। সকল ক্ষমতা এবং শক্তির উৎস তিনি, তিনিই একমাত্র আরাধ্য মাবুদ-মানুষের এবাদত পাওয়ার যোগ্য।
তাই চন্দ্রের পূজা করা, সূর্যের পূজা করা, পাহাড় পর্বতের পূজা করা, নিজ হাতে তৈরী মূর্তিকে নিজের প্রভু বলে মনে করা, গরু-বাছুরের পূজা করা, কবর পূজা করা, মাজার পূজা করা, পীরের পূজা করা, বৃক্ষের পূজা করা, বস্তুর পূজা করা ইত্যাদি সকল গায়রুল্লার পূজা-অর্চনা করা বেয়াকুফী আর নাদানী ছাড়া আর কিছুই নয়। কাজেই এসব মোনাফেকী, জালেমী ও শেরেকী ত্যাগ করা উচিত। অন্তরের জ্ঞান দিয়ে প্রকৃত সত্যকে উপলব্দি করা উচিত- আমরা কি করছি, আসলে কি করা উচিত। চিন্তা করা উচিত- আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কি উদ্দেশ্য নিয়ে মানুষ সৃষ্টি করেছেন!
মানুষ যাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছে, তাকেই আবার সৃষ্টিকর্তা রূপে পূজা করা কতই না মূর্খতা! শুধু তাই নয়! জীব-জানোয়ার, পাহাড়-পর্বত ইত্যাদি যার কিছুই আপনা আপনি সৃষ্টি হয়নি, কেউ না কেউ সৃষ্টি করেছেন, তাকে প্রভু জ্ঞানে আল্লাহর আসনে বসিয়ে সৃষ্টি কর্তা, পালন কর্তা ও ইজ্জত দাতা হিসাবে মানুষ কিভাবে পূজা করতে পারে? ধিক! শত ধিক ঐ সব মানুষকে- তাদের মূর্খতা ও অজ্ঞতার জন্য।
সৃষ্টি কর্তার দেয়া বিবেক বুদ্ধি খাঁটিয়ে কিছু সময় এ সকল বিষয়ে চিন্তা করলে নিশ্চয়ই আসল-নকল, সত্য-মিথ্যা, ভাল-মন্দ বুঝতে সহজ হবে। সৃষ্টি কর্তার আসল পরিচয় ও সন্ধান পাওয়া যাবে। আর এরই নাম “মারেফাতে ইলাহী ”।
আল্লাহ পাক তাঁর হাবীবের নিকট এই সংবাদ আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, বিশ্ববাসিগণের নিকট আল্লাহর বানী পৌঁছাতে গেলে তাকে কত কঠিন বিপদের সম্মুখীন হতে হবে, কত অসহনীয় অত্যাচার সইতে হবে।

আসমানী কিতাব সমূহ এবং সংশ্লিষ্ট নবীগণের নাম

দুনিয়ার সু-পথ ভোলা মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য মহান আল্লাহ পাক নবী ও রাসুলগণের উপর ওহী বা প্রত্যাদেশের মাধ্যমে যুগপযোগী শরিয়তের কিছু বিধান পঠিয়েছেন যার সমষ্টিকে আসমানী কিতাব বলে। সর্ব মোট ১০৪ টি আসমানী কিতাবের সন্ধান পাওয়া যায়। তন্মধ্যে কিছু ছহীফা ও কিছু কিতাব। এই কিতাবগুলোর মধ্যে ৪টি প্রধান। সর্ব শেষ নাজিলকৃত কিতাবটি পূর্ণাঙ্গ এবং এটি কোরআন মজিদ নামে পরিচিত। এই চারটি কিতাব যে সব নবী ও রাসুলগণের উপর নাজিল করা হয়েছে তাঁরা হলেন-
১। হযরত দাউদ (আঃ)- এর উপর যাবুর শরীফ।
২। হযরত মুসা (আঃ)- এর উপর তাওরাত শরীফ।
৩। হযরত ঈসা (আঃ)- এর উপর ইঞ্জিল শরীফ।
১। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর উপর পবিত্র কোরআন শরীফ।
পবিত্র কোরআন মজিদ শরীয়তের পূর্ণ বিধান সম্বলিত ইসলামের একটি পূর্ণাঙ্গ দলিল। যার পরে দুনিয়াতে আর কোন আসমানী কিতাব আসেনি এবং আর কখনও আসবে না। এই পবিত্র গ্রন্থে ১১৪টি সুরা, ৬২৩৬টি আয়াত ও ৭৭৯৩৪টি শব্দ আছে। সমস্ত কোরআনে ৩০টি পারা এবং ৫৫৪টি রুকুতে বিভক্ত। এগুলোর মধ্যে ৮৬টি মক্কী এবং ২৮টি মাদানী। মক্কী সুরার আয়াত সংখ্যা ৪৬০২৩টি এবং মাদানী সুরার আয়াত সংখ্যা ১৬৩৪টি । মোট তেইশ বৎসরের এই পবিত্র কেতাবটি নাজিল হয়।
(চলবে………….)

Related posts

Leave a Comment