ইনসানে কামিল

ডাঃ মৌলভী কাজী আবদুর রহমান

পর্ব- বার

রাসুলে পাক (সাঃ)- এর অসীম ধৈর্য্য এবং তায়েফবাসির প্রতি ক্ষমা ও দোয়া

 

জ্ঞান ফিরে আসার পরে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) নামাজ পরার ইচছা প্রকাশ করলেন। জায়েদ নবীর দেহের ক্ষত-বিক্ষত স্থান থেকে জমাট বাঁধা রক্তগুলো অতি যতেœর সাথে ধুঁয়ে-মুছে পরিষ্কার করতে লাগলেন। অতি কষ্টে খুলে দিলেন পায়ের দু’খানা জুতা। শরীরের ক্ষত স্থান থেকে রক্ত ঝরে ঝরে পাদুকায় জমে শুকিয়ে শক্ত হয়ে যাওয়ায় তা ভিজিয়ে খুলতে অত্যন্ত কষ্ট হলো। জায়েদ দুঃখে-কষ্টে কেঁদে আকুল হয়ে আল্লাহ পাকের কাছে বলতে লাগলেন:-
“ইয়া আল্লাহ! সবই তোমার খেলা! সবই তোমার ইচছা, তোমার কুদরত! কিন্তু তোমার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষের একি অমানুষিক অত্যাচার! তোমার শ্রেষ্ঠ নবীর প্রতি এ কোন ধরণের ব্যবহার! এত নির্দয় আঘাত ! এত রক্তের প্লাবন! এও কি সহ্য করা যায়! হায়রে নির্দয় মানুষ, এত পাষণ্ড হৃদয় তোদের? হে আল্লাহ ! তুমি কি দিয়ে তৈরী করেছো তাদের? আর কি করেই বা সহ্য করছ এ সব? হে পরোয়ারদিগার! তুমি কি আমার কান্না, আমার আর্তনাদ শুনতে পাচছ!”

জায়েদ কেঁদে কেঁদে হয়রান। দু’চোখের পানিতে তাঁর দেহ সিক্ত হয়ে উঠলো! তাঁর কান্না শুনে, আল্লাহর পিয়ারা হাবীবের কষ্ট দেখে- আকাশ, বাতাস, গ্রহ, তারা, জীব, জন্তু, জিন, ফেরেশতা সবাই কেঁদে কেঁদে তায়েফবাসীর উপর অভিস¤পাত করতে লাগলো।
হায়রে তায়েফবাসী! তোরা এত নিষ্ঠুর, এতো পাষাণ! হাশরের দিন তোরা কি জবাব দিবি আল্লাহর দরবারে? কি উপায় হবে তোদের! ইয়া আল্লাহ! তুমি যা করো, মানুষের ভালোর জন্যই করো। কেননা, তুমি অন্তর্জামী এবং মঙ্গলময়। জায়েদ অতি কষ্টে অসংখ্য রক্তমাখা আঘাত ও জখমগুলো ধৌত করলো। পাক পবিত্র হওয়ার পর আল্লাহর হাবীব (সাঃ) নামাজ আদায় করে বিশ্ব পালক মাবুদ মাওলার শাহী দরবারে দু’হাত তুলে ফরিয়াদ করলেন:-

“ইয়া আল্লাহ! ইয়া রাব্বুল আলামিন! ইয়া গাফুরুর রাহিম! ইয়া রাহমানুর রাহিম! আমি তোমার নিকট কাতরে ফরিয়াদ করছি- এই তায়েফবাসী এবং বিশ্ববাসি আমাকে জানে না, তোমাকে চেনে না। তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত। তারা অজ্ঞান, তারা মুর্খ। আমার কথাগুলি তারা হয়তঃ বুঝতে পারছে না। হয়তঃ বুঝার ক্ষমতাও তাদের হয়নি। আজ তারা না বুঝে আমার দাওয়াতের অবমাননা করছে, বিরক্ত বোধ করছে, সেজন্য তুমি তাদের শাস্তি দিওনা। দয়া করে তাদের অপরাধ ক্ষমা করে দাও। তাদের হেদায়েত দান কর মাবুদ!
হযতঃ আজ তারা তোমার বাণীর মর্মার্থ বুঝতে পারছে না এবং আমার দাওয়াত কে মূল্যায়ন করছে না। এ জন্য তাদের কোন দোষ নেই বরং এ আমারই দুর্বলতা, আমারই অক্ষমতা। আমি তোমার বাণী তাদের নিকট হয়তঃ ঠিকমত পৌঁছাতে পারিনি, বুঝাতে পারিনি। ওগো দয়াময়! এই দুর্বলতার জন্য আমি তোমার সাহায্য প্রার্থনা করছি। হে রাহমানুর রাহীম! হে আমার আল্লাহ! দুর্বলের সহায় ও অগতির গতি বলতে তুমি ছাড়া আর কেউ নেই!
ওগো দয়াময়! আমার সাধনা কি ব্যর্থ হবে? আমার আশা কি তুমি পূর্ণ করবে না, কামীয়াবী করবে না? ইয়া আল্লাহ ! তুমি কি আমাকে এমন শক্রর হাতে সমর্পণ করবে যারা চির দিনই আমার দিক হতে মুখ ফিরিয়ে থাকবে। ওগো বারে ইলাহী! তোমার যদি ইচছা হয় তবে তাই কর! তাই হউক! একমাত্র তোমার হুকুম, তোমার নির্দেশ পালন করাই আমার কাজ। ফর্মাবর্দারী করাই তো গোলামের প্রধান কাজ। তোমার সন্তুষ্টি লাভ করাই আমার ইচছা, আমার কাম্য। তুমি সন্তুষ্ট থাকলে শত দুঃখ-কষ্ট, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা এবং অত্যাচারকেও আমি ভয় পাই না। পাবও না কোনদিন। তোমার হুকুম পালন করতে গিয়ে যত বিপদই আসুক তা আমার জন্য তোমার পক্ষ হতে নেয়ামত বলেই মনে করবো। একমাত্র তুমিই আমার ভরসা, তুমিই আমার কর্ম শক্তি। আমিন, ইয়া রাব্বাল আলামিন!”

হে তায়েফের বর্বর পাষন্ডরা! হে আমার পাঠক ভাই বোনেরা! হে বিশ্ববাসী মানুষেরা! তোমরা শুন, এই মহামানব, উম্মতের কান্ডারি, রাহমাতুল্লিল আলামীন, দয়াল নবী মোহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এত অত্যাচার, এত অপমান, এত লাঞ্ছনা, এত রক্ত ঝরার পরও তোমাদের জন্য আল্লাহর মহান দরবারে কি বলেছেন? কি প্রার্থনা করেছেন? কি চেয়েছেন? একটু ভেবে দেখবে কি?
আল্লাহর হাবীবের প্রার্থনা শেষ হতে না হতেই মহা শক্তিশালী রাব্বুল আলামীনের ক্রোধ এবং গজবের শান উত্তপ্ত হয়ে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর হুকুমে হযরত জিব্রাঈলকে (আঃ) পাঠিয়ে দিলেন। তিনি পিয়ারা নবীর কাছে আগমন করে সালাম বাদ বললেন- “ইয়া রাসুলুল্লাহ! আল্লাহ পাক তায়েফবাসীদের ধৃষ্টতা ও দুর্ব্যবহারজনীত আচরণ লক্ষ্য করে পাহাড় সমূহের খদমতের ভার যে সকল ফেরেস্তাগণের উপর ন্যস্ত এমন একজনকে আপনার নিকট পাঠিয়ে দিয়েছেন। আপনি যা হুকুম করবেন সে তাই করবে।
এমন সময় একজন ফেরেশতা হুজুরের খেদমতে এসে সালাম জানিয়ে আরজ করলেন:-

যদি আপনি আমাকে আদেশ করেন তা হলে এই তায়েফ নগরীর উভয় পাশে থাকা দু’টি পাহাড়কে এমন ভাবে মিলিয়ে দেব যার মাঝে পড়ে তারা সকলে নিস্পেষিত হয়ে যাবে। তাদের কোন চিহ্ন পর্যন্ত থাকবে না। অথবা আপনি ইচছা করলে অন্য যে কোন শাস্তি তাদের জন্য ব্যবস্থা করতে পারেন।

এ কথা শুনে দয়াল নবী উত্তরে বললেন:-

“আমি আল্লাহর দরবারে এই আশা পোষণ করবো যে, তিনি যেন তাদের ক্ষমা করে দেন। কেননা, আজ যদি তায়েফবাসী পবিত্র ইসলাম গ্রহন নাও করে, তবু তাদের বংশধরগণের মধ্য হতে হয়ত একদিন এমন লোক পয়দা হবে, যারা এক আল্লাহর তৌহীদে বিশ্বাস আনয়ন করতঃ আল্লাহর এবাদত করবে।”

আল্লাহর হাবীবের উপর তায়েফবাসীগণ অবর্ণনীয় দুঃখ, যাতনা, অত্যাচার ও নির্যাতনের কিছুই বাদ দেয়নি, তবু আমাদের প্রিয় নবী রাহমাতুল্লীল আলামীন প্রতিশোধ স্পৃহা পরায়ন না হয়ে নিজ গুণে সব অপরাধ ক্ষমা করে মহান আল্লাহর দরবারে দু’হাত তুলে তাদের প্রতি রহমত, বরকত ও হেদায়েত নসীব করার জন্য প্রার্থনা করেছেন। আমাদের পিয়ারা নবীর মহত্ব এখানেই। এ জন্যই তিনি মহান, তিনি শ্রেষ্ঠ।

রাসুলে পাক (সাঃ)-এর দোয়ার তাৎপর্য, মক্কা বিজয়ের পর তায়েফবাসির আÍসমর্পণ ও ইসলাম গ্রহণ

 

পবিত্র মক্কা বিজয়ের পর আল্লাহর হাবীব (সাঃ) চল্লিশ হাজার মুসলিম বাহিনী নিয়ে প্রবল প্রতাপশালী রোম সম্রাটের মোকাবিলার উদ্দেশ্যে সিরিয়া যাত্রা করেন। এই সংবাদ পেয়ে রোমক সৈন্য বাহিনী ভয়ে মুসলমানদের সাথে জিজিয়া কর দেয়ার শর্তে সন্ধি স্থাপন করে ফিরে গেলো। তাবুক অঞ্চলের খ্রীষ্টান জনগণ নবীজির অনুপম চরিত্র-মহিমা দর্শনে মুগ্ধ হয়ে মুসলিম জনতার কাতারে সামিল হয়ে গেলো।
নবীজি তায়েফ নগরী অবরোধ করলেন। কিন্তু কয়েকদিন তায়েফ নগরী অবরোধ করে রাখার পর হঠাৎ কি চিন্তা-ভাবনা করে তিনি তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেন। তিনি তায়েফ নগরীর অবরোধ তুলে নিয়ে তাদের জন্য দোয়া করে মদিনায় চলে যান।
এ সময় তায়েফের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি মুসলিম বাহিনীর সাথে মদিনা রওনা হয়ে যান। তার নাম ছিলো ওরাওয়া ইবনে মাসুদ। তিনি হযরত মোহাম্মদের হাতে ইসলাম গ্রহন করে কিছু দিন মদিনায় হযরতের সহচর্য্যে অবস্থান করে ইসলামের কিছু জরুরী বিষয় শিক্ষা লাভ শেষে দেশে ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রাসুলে পাকের এজাজাত প্রার্থনা করেন- আয় হুজুর! আমার স্বজাতি আজ অজ্ঞতা এবং অন্ধ বিশ্বাসে আচছন্ন হয়ে আছে। আপনি অনুমতি দিলে আমি তাদের নিকট উপস্থিত হয়ে ইসলামের দাওয়াত দিতে পারি। হুজুর গম্ভীর স্বরে বললেন- সে তো ভাল কথা ! কিন্তু আমার আশঙ্কা হচেছ তোমার স্বজাতিরা তোমাকে হত্যা করে ফেলবে। উত্তরে ওরাওয়া বললেন- তারা আমাকে অত্যন্ত ভালবাসে।
তারপর ওরাওয়া দেশে ফিরে গেলেন এবং তার স্বজাতির নিকট ইসলামের দাওয়াত পেশ করতে লাগলেন। এতে স্বজাতির লোকেরা অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর উপর নিষ্ঠুর নির্যাতন শুরু করে দিলো।
একদিন আপনজনদের মধ্য হতেই একজনের একটি তীক্ষè ও শানিত শর তার বক্ষ ভেদ করে গেলো। ওরাওয়া উচচ স্বরে আল্লাহু আকবার বলতে বলতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন। রাসুলের বাণী সত্যে পরিণত হলো। তিনি শহীদ হয়ে গেলেন। কিন্তু তার রক্ত দান, তার সাধনা, তার ইসলাম প্রচারের বাসনা জীবিত রয়ে গেলো। আল্লাহর হাবীবের দেহের রক্ত ও দোয়া এবং তায়েফের সন্তান ওরাওয়া শহীদ হওয়াকে আল্লাহ পাক তায়েফবাসীর হেদায়াত লাভের উছিলা করে দিলেন।
ওরাওয়াকে মেরে ফেলায় সমগ্র তায়েববাসীর মধ্যে হাহাকার পড়ে গেলো। অনেকেই বলতে লাগলো- ওরাওয়া অত্যন্ত সৎ, জ্ঞানী ও গুণী লোক ছিলেন। তিনি মদীনায় গিয়ে যা শুনেছেন, যা জেনেছেন এবং যা জ্ঞান দ্বারা উপলব্দি করতে পেরেছেন, যা মানুষের জন্য সত্যই মঙ্গলজনক- তাই নিজে গ্রহন করে আমাদের জন্য নিয়ে এসেছেন। ওরাওয়া আমাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন। নিশ্চয়ই মোহাম্মদ (সাঃ)- এর ইসলাম একটি সত্য ধর্ম, আল্লাহ পাকের মনোনীত ধর্ম। প্রতিটি মানুষকেই এই ধর্মের দীক্ষা নেয়া উচিত। ওরাওয়ার মতো একজন সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ ও মহান ব্যক্তিকে এভাবে হত্যা করা ঘোরতর অপরাধ ছাড়া আর কিছুই নয়।
আর একদল বলছে-
ওরাওয়া তো সত্য কথাই বলছেন। মানুষের হাতের তৈরী এই কাঠ, পাথরের গড়া ঠাকুর ও দেবতাগুলির যা ক্ষমতা আছে- তা তো আমারা মক্কা বিজয়ের সময়ই দেখেছি। যারা মক্কা বিজয়ের সময় নিজেদেরকেই রক্ষা করতে পারে নাই তারা তায়েফবাসিদের রক্ষা করবে কি করে?
তায়েফ নগরীর আনাচে কানাচে সকলের মাঝে এই আলোচনাটি দিন দিন ওরাওয়ার পক্ষে একটা ইসলামি আন্দোলনে পরিণত হলো।
সত্যই আল্লাহ পাকের হেকমত ও কুদ্রত বুঝার সাধ্য কারো নেই!
আস্তে আস্তে তায়েফের নেতৃস্থানীয় লোকদের অন্তরে আল্লাহ পাকের দ্বীনের হেদায়েতের আলো এসে পড়তে লাগলো। একদিন সকলে পরামর্শ করে পাঁচ জনের একটি দল গঠন করে মদীনায় পাঠিয়ে দিলো। তাদের নেতৃত্বে রইলেন শাফিক গোত্রের প্রধান নায়ক আবদে য়্যালিলক।
নবম হিজরীর রমজান মাসে আবেদ য়্যালিল তার সঙ্গীদের নিয়ে মদীনায় রাসুলে পাকের দরবারে উপস্থিত হলেন। হযরত এই অভ্যাগত মূর্তিপূজকগণকে স্বসম্মানে গ্রহন করে মসজিদের নিকটই থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন।
প্রতিনিধিগণ কয়েক দিন যাবৎ রাসুলে পাকের নিকট নানাবিধ ধর্মতত্ত্ব অবগত হন এবং কোরআনে পাকের তেলোয়াত শ্রবণ করেন। আল্লাহ পাকের অহদানিয়াত, রাবুবিয়াত ও সিফাত সম্বন্ধে যতটুক সম্ভব অবগত হয়ে সাহাবাগনের সঙ্গে সম্মিলিত ভাবে চিন্তার আদান প্রদান করে আলা­হর রাসুলের স্বর্গীয় মহিমার পরিচয় পেয়ে ইসলাম গ্রহনের জন্য প্রস্তুত হন। তারপরও অজ্ঞানতার অন্ধকারে নিমজ্জিত এই ব্যক্তিগণ তাদের গত জীবনের আরাধ্য দেবদেবী ও ঠাকুরদের ভয়ে ভীত হয়ে তাদের শক্তি সম্বন্ধে নানা প্রশ্ন করতে লাগলো। রাসুলে পাক (সাঃ) বললেন- তোমরা নির্ভয়ে ইসলাম গ্রহন কর। ঐ বারাহ বা দেবদেবীর মূর্তিগুলো যে কত অচল তা অচিরেরই তোমরা দেখতে পাবে। আমি তোমাদের মিথ্যা আশংকা দূর করার জন্য তোমাদের সঙ্গে লোক পাঠিয়ে দেবো।
তখন এই পাঁচ জন কলেমা তৈয়েবা ও কলেমা শাহাদাত পাঠ করে ইসলাম ধর্মে দিক্ষিত হলেন। রাসুলে পাক (সাঃ) তাদের বললেন- মনে রাখবে, আল্লাহ পাক শুধু মাত্র তাঁর এবাদত করার জন্যই মানুষ জাতিকে সৃষ্টি করে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন।
মানুষের প্রধান কাজ আল্লাহ ও তার রাসুলের পায়রুবী করা, একমাত্র আল্লাহকেই ভয় করে চলা। আর কাউকে ভয় না করা। সাথে সাথে মনে রাখতে হবে, নামাজই হলো ধর্মের শ্রেষ্ঠ খুঁটি এবং শ্রেষ্ঠ এবাদত।
এই প্রতিনিধি দল দেশে ফেরার সময় রাসুলে পাক (সাঃ) হযরত মুগিরা ও সুফিয়ানকে তাঁদের সঙ্গে দিলেন। তাঁর মূর্তিগুলোকে ধ্বংস করতে চাইলে তায়েফবাসিরা ভয়ে চুপসে গেলো। তাদের কপালে না জানি কি আছে, এই আশঙ্কায় নারী পুরুষ সবার মধ্যে নানা প্রকার আলাপ-আলোচনা, হট্রগোল ও কাঁন্নাকাটি শুরু হয়ে গেলো।
কিন্তু হযরত মুগিরার লৌহ মুদগর তাদের বড় দেবতা ‘রাব্বার’ মস্তকে পতিত হলে শয়তান কাঁদতে কাঁদতে পলায়ন করলো সেখান থেকে। আর দেবতাও খান খান হয়ে ভেঙ্গে পড়লো জমিনের উপর। সঙ্গে সঙ্গে তায়েফ নগরে উদিত হলো ইসলামের নতুন সূর্য। “আল্লাহু আকবার”- ধ্বনি ছড়িয়ে পড়লো নগরের সর্বত্র।
হে পাঠক বৃন্দ! এবার একটু চিন্তা করে দেখুন, দয়াল নবীর দয়ার কথা, তাঁর ধৈর্য্যরে কথা, তাঁর সহ্যের কথা। দুনিয়াতে এমন ক্ষমার, এমন দয়ার, এমন সহ্যের দ্বিতীয় কোন নজীর দেখাতে পারবে কি? অবশ্যই নয়! কোথাও না, কখনও না। সম্ভবও নয়।
হ্যাঁ, দয়াল আল্লাহর দরবারে রয়েছে দয়ার পাহাড়! তিনি সকল দয়া-মায়ার ধারক, খোদ মালিক। মালিকুল মুলক। তাঁর কোন শরিক নাই। তুলনা নাই। তিনি রাব্বুল আলামিন, তিনি বড় মেহেরবান। আর তাঁর দয়ার বরকতেই আমরা আজ এমন একজন দয়ালু নবীর উম্মত হতে পেরেছি। আল্হামদুলিল্লাহ! নিশ্চয় সমস্ত প্রশংসা সে আল্লাহর জন্য।
আল্লাহ তাঁর দোস্তকে সব বিষয়ে নিজে শিক্ষাদান করেছেন। কথা-বার্তা, চাল-চলন, আচার-ব্যবহার, রীতি-নীতি, আদব-কায়দা, মায়া-মহব্বত, ন্যায়-নীতি, ভাল-মন্দ, খাওয়া-দাওয়া, হালাল-হারাম, ধর্ম-কর্ম, ন্যায়-নিষ্ঠা ও ফর্মাবর্দারী, এক কথায় সব বিষয়ে সর্বোতভাবে তিনিকে আল্লাহ পূর্ণতা দান করেছেন। তাঁর জীবন অত্যন্ত পবিত্র, সকল ত্র“টি হতে মুক্ত। যাকে বলে নির্দোষ। এক জাররা পরিমাণ ত্র“টি-বিচ্যুতি দেখানোর ক্ষমতা দুনিয়ার কোন মানুষের নেই। স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাঁর এই দোস্তের প্রশংসা করে বলেছেন:-
-অর্থাৎ “হে দোস্ত! নিশ্চয়ই আপনার আখলাক (চরিত্র) অত্যন্ত পবিত্র, অত্যন্ত সুন্দর।”
(চলবে———–)

Related posts

Leave a Comment