ইনসানে কামেল

-ডাঃ মৌলভী কাজী আবদুর রহমান

পর্ব-সাত

হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ)-এর সাথে বিবি খাদিজাতুল কোবরার (রাঃ) শুভ বিবাহ এবং কৃতদাস জায়েদ

হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)- এর বংশীয় স্বনামধন্য খোওয়ায়লিদের কন্যা বিবি খাদিজাতুল কোবরা ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমতী, গুণবতী, রূপবতী, ধনবতী ও ব্যবসায়ী এক মহিয়সী নারী। চারিত্রিক মাধুর্য্য ও পবিত্রতা মিলে স্বাভাবিক আচার-ব্যবহারে তাঁর রুচিবোধ, ভদ্রতা ও নম্রতার সমম্বয়ের সৌরভ ছড়িয়ে পড়েছিলো সারা আরব দেশে। লোকে তাঁকে তাঁর নামের পরিবর্তে “তাহেরা” অর্থাৎ বিশুদ্ধ চারিণী বা সতীস্বাধ্বী বলে ডাকতো।
হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কিছুদিন বিবি খাদিজার ব্যবসা বানিজ্য পরিচালনা করেছিলেন। এতে ব্যবসায় বহু লাভ হয়। ব্যবসা কালে হযরতের ন্যায়নীতি, সততা, অসাধারণ প্রতিভা এবং অনুপম চরিত্রিক মাধুর্য্য সম্যক ভাবে অবগত হয়ে বিবি খাদিজা হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)- কে আপন করে নেয়ার জন্য চিন্তা করতে লাগলেন। খাদিজার বয়স তখন ৪০ বৎসর এবং বিধবা। ইতিপূর্বে তাঁর দু’বার বিবাহ হয়েছিলো। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তাদের মৃত্যু হয়। ঐ সব স্বামীর ঔরসে কয়েক জন সন্তানও ছিল। অপর দিকে হযরত মোহম্মদ (সাঃ)- এর বয়স মাত্র ২৫ বৎসর। অবিবাহিত এক সুন্দর যুবক মাত্র।
হযরত খাদিজার মনে কোন শান্তি নেই। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর মতো একজন উত্তম সঙ্গী পাওয়ার আকাঙ্খা তাঁকে ব্যকুল করে তুললো। তাই তিনি সহচরী এবং উভয় পক্ষের আত্মীয়া বিবি নাফিসাকে হযরতের মনের কথা জানতে পাঠিয়ে দেন। হযরত খাদিজা আশা নিরাশার মাঝে দোলায়িত। কিন্তু বুদ্ধিমতি বিবি নাফিসা হযরতের নিকট খাদিজার বিবাহের প্রস্তাবটি এমনই সু-কৌশলে তুলে ধরলেন যে হযরতের মন জয় করে নিল।
নাফিসা কর্মস্থল থেকে ফিরে এসে বিবি খাদিজাকে আশ্বাস দিলেন যে, তিনি রাজি আছেন যদি এতে তাঁর মুরুব্বিগণের কোন আপত্তি না থাকে। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)ও এ সংবাদ পিতৃব্য আবু তালেবকে জানালেন।
আর ঐ দিকে বিবি খাদিজা তার মনের কথা খাজা আবু তালেবকে জানালেন। খাজা আবু তালেব আনন্দ চিত্তে যথা নিয়মে বিবি খাদিজার পিতৃব্য আমর বিন আসাদের নিকট ভ্রাতুপুত্র মোহাম্মদের (সাঃ) বিবাহের পয়গাম পাঠালেন। সকলের সম্মতিক্রমে বিবাহের মোহরানা, দিন তারিখ ঠিক হলো।
নির্ধারিত তারিখে উভয় পক্ষের আত্মীয়-স্বজনদের উপস্থিতিতে বিবি খাদিজার গৃহেই বিবাহের আয়োজন করা হয়। যথাযথ আদর আপ্যায়নের পর খাজা আবু তালেব উপস্থিত ব্যক্তিগণকে সম্বোধন করে খুৎবা দেন। উত্তরে বহু শাস্ত্রবিশারদ ও পন্ডিত ওয়ারাকা বিন নওফল কোরাইশ বংশের সম্মান, প্রতিপত্তি, স্বীকৃতি ও প্রশংসা করতঃ বর্ণিত মোহরে হযরত মোহাম্মদ (সঃ)- এর সাথে বিবি খাদিজার বিবাহের সম্মতি প্রদান করেন। ওয়ারাকার আর্শিবাদ শেষ হলে, বিবি খাদিজার পিতা এবং সহোদর ভাই আমর বিন আসাদ যথা নিয়মে কন্যা সম্প্রদান করেন। আর এ ভাবেই হযরত মোহম্মদ (সাঃ)-এর সাথে বিবি খাদিজাতুল কোবরার বিবাহের কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়।
বিবাহের পর বিবি খাদিজা কৃতদাস জায়েদকে হযরতের সেবার জন্য তাঁর হাতে সমর্পন করে দিলেন। এই দাস প্রথাটি তখন প্রায় পৃথিবীর সব দেশেই চালু ছিলো। কোন প্রকারে কেউ কাউকে ধরে কিংবা হরণ করে নিয়ে আসতে পারলেই সে ধৃতকারীর দাসদাসীতে পরিণত হতো। এই দাস দাসীকে তারা ইচছা মতো যে কোন কাজে ব্যবহার করতো, তাদের উপর জঘন্য পাশব বৃত্তিও চরিতার্থ করতেও পিছপা হতো না। এমনকি গরু-ছাগলের মতো অন্যের নিকট বেঁচা কেনা করতো।
দয়াল নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)- এ বিষয়টি কিছুতেই বরদাশত করতে পারলেন না। তিনি জায়েদকে নিজ সন্তানের মতো গ্রহন করলেন এবং তার প্রতি সে ভাবেই আচার ব্যবহার করতে লাগলেন। মক্কাবাসীগণ বলতো, জায়েদ এবনে মোহাম্মদ অর্থাৎ মোহাম্মদের পুত্র জায়েদ। আর এ ভাবেই হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)- এর আশ্রয়ে জায়েদ অতি আদর ও যতেœর সাথে লালিত পালিত হতে লাগলেন।
অল্প দিনের মধ্যেই জায়েদের চাল-চলন, আচার-ব্যবহার, নম্রতা-ভদ্রতা ও শ্রদ্ধা-ভক্তি রাসুলে পাকের মন জয় করে ফেললো। আর রাহমাতুল্লিল আলামীনের সহচর্য্যে থেকে কিছু দিনের মধ্যেই তাঁর জ্ঞান চক্ষুও খুলে গেলো। সে বুঝতে পারলো মালিকুল মুলক তাকে যার সান্নিধ্যে এনেছেন তার তুলনা তিনিই। এ ভীষণ বড় পাওয়া। একজন মানুষের জীবনে এর চাইতে ভাল আর কিছুই পাওয়ার নাই। তিনি দোজাহানের মুক্তি ও শান্তির নিশ্চিত প্রতিক!
(চলবে———–)

Related posts

Leave a Comment