করোনা ভাইরাস: মহামারির মধ্যেই বন্যায় বিপর্যস্ত বিভিন্ন জনপদ

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

করোনাভাইরাস দুর্যোগের মধ্যে এবার আগাম বন্যায় বাংলাদেশে নয়টি জেলায় তিন লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
বন্যা কবলিত উত্তর এবং উত্তর পূর্বের বিভিন্ন জেলার ক্ষতিগ্রস্ত অনেকে বলেছেন, বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই ভয়াবহ বন্যা মোকাবেলার জন্য তারা প্রস্তুত ছিলেন না এবং তরিতরকারি-শাকসবজিসহ বিভিন্ন শস্য ও চাষ করা মাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
তবে দেশটির বন্যা উত্তরের জেলাগুলোতে এই বন্যা লম্বা সময় থাকতে পারে বলে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র পূর্বাভাস দিচ্ছে।
যদিও দেশের উত্তরের জেলাগুলোর মানুষ প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে কমবেশি বন্যা মোকাবেলা করে থাকেন। কিন্তু এবার তারা প্রস্তুত হওয়ার সময় পাননি।
বর্ষা মৌসুম শুরু হতে না হতেই বন্যা আঘাত হানে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর এবং সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায়।
গত সপ্তাহে রাতারাতি হু হু করে বন্যার পানি এসে এসব জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে দেয়।
শত শত মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে গবাদিপশুসহ বিভিন্ন বাঁধে বা উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের পুরো এলাকাই পানির নীচে তলিয়ে রয়েছে কয়েকদিন ধরে।
এই ইউনিয়নের একজন কাউন্সিলর রাবেয়া খাতুন বলেছেন, তারা যখন করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের মাঝে রয়েছেন, তখন আগাম বন্যা তাদেরকে আরও অসহায় পরিস্থিতিতে ফেলেছে।
“বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি, শাকসবজি সবকিছু ডুবে গেছে। অনেক মানুষ বাড়িঘর ছাড়ি গরু-বাছুর নিয়া উঁচা জায়গায় বা বাঁধে আশ্রয় নিছে। আমাদের আবাদ পাট, গম, সবজি সব শস্য নষ্ট হয়া গেছে।”
বন্যা কবলিত উত্তরের জেলাগুলোতে নদী ভাঙ্গনের কারণেও একটা বড় জনগোষ্ঠী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

বাংলাদেশ এখন ৯টি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। (ফাইল ছবি)

উত্তর পূর্বে সিলেট সুনামগঞ্জ অঞ্চলে আগাম বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হযেছে মাছ চাষের।
দু’দিন ধরে এই অঞ্চলে পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে।
কিন্তু সুনামগঞ্জ জেলা শহরটিই গত কয়েকদিন পানির নীচে তলিয়ে থাকায় সেখানে রাস্তায় নৌকা চলেছে।
সুনামগঞ্জ থেকে একজন সমাজকর্মী সঞ্চিতা চৌধুরী বলেছেন, এবার আগেই হাওরের ধান কাটা সম্ভব হওয়ায় সেটা তাদের জন্য কিছুটা স্বস্তির। কিন্তু এই বন্যায় তাদের অঞ্চলে মাছ চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
“সুরমা নদীর পানি আমাদের এলাকায় রাস্তা ঘাট সব জায়গায় চলে এসেছে। আমার বাড়িতেও পানি উঠেছে। এইভাবে শহর গ্রাম সব ডুবে গেছে। শহরের রাস্তায় কয়েকদিন নৌকা চললো।”
তিনি আরও বলেছেন, “আমাদের দুর্ভোগেরতো সীমা নেই। দেখেন করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষ সন্ত্রস্ত, তারপর এই বন্যা। মানুষ হতাশার মধ্যে আছে।আমাদের অঞ্চলে মাছ চাষের অনেক ক্ষতি হয়েছে।”
ভারতের উজানে অতিবৃষ্টি এবং সেখান থেকে পাহাড়ী ঢল আসায় দেশে ব্রহ্মপুত্র এবং যমুনা নদীসহ এর অববাহিকায় ১১টি নদীতে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় এই বন্য হয়েছে।

বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকায় অনেক মানুষ উঁচ জায়গায় বা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।

বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূইয়া বলেছেন, দু’দিন ধরে ভারতের আসামে বৃষ্টি কম হওয়ায় সুনামগঞ্জ এবং সিলেট অঞ্চলে পানি কমছে এবং পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
তিনি জানিয়েছেন, ব্রহ্মপুত্র বা যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে এবং উত্তরের জেলাগুলোতে এই বন্যা দীর্ঘ সময় থাকার পূর্বাভাস তারা পাচ্ছেন।
“সুরমা-কুশিয়ারা নদীতে পানি কমতে থাকায় সুনামগঞ্জ এবং সিলেট অঞ্চলে দুই-তিন দিনের মধ্যে বন্যার অনেক উন্নতি হবে এবং স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসতে পারে। তবে আমাদের মুল চিন্তার বিষয় হলো, ব্রহ্মপুত্র এবং যমুনা নদী ও উত্তরের জেলাগুলোতে পানি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আরিফুজ্জামান ভূইয়া বলেছেন, “প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করেছিলাম উত্তরাঞ্চলের বন্যা চলে যেতে পারে। কিন্তু আসলে তা হবে না। এটা হয়তো বৃদ্ধির প্রবণতা থাকবে। ক্ষেত্র বিশেষে এই বন্যা জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।”
বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব সহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মঙ্গলবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বন্যা কবলিত জেলাগুলোর প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আলোচনা করেছেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মহসীন বলেছেন, বন্যকবলিত এলাকার মানুষকে ত্রাণ সহায়তার বিষয়ে তারা আলোচনা করেছেন। তারা একেবারে প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে পর্যন্ত ত্রাণ পৌঁছানোর সব প্রস্তুতি নিয়েছেন।
যদিও সরকারি হিসাবেই দেখা যাচ্ছে, বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে তিন লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছেন।
এসব জেলা থেকে বিভিন্ন শস্য এবং মাছের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যাচ্ছে।
কিন্তু ত্রাণ সচিব জানিয়েছেন, ত্রাণ নিয়ে তাদের বৈঠকে ক্ষক্ষতির তেমন কোন তথ্য আসেনি।
এবার বর্ষা মৌসুমের আগেই দেশের সব এলাকা থেকে ধান কাটা হয়েছে, সেজন্য মানুষের ঘরে খাবার আছে এবং পরিস্থিতি সুবিধাজনক পর্যায়ে রয়েছে বলে সরকার মনে করছে। -বিবিসি

Related posts

Leave a Comment