পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় চুড়ান্ত উচ্ছেদ নোটিশের এক মাসেও অপসারণ করা হয়নি অবৈধ স্থাপনা

মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় চুড়ান্ত উচ্ছেদ নোটিশের এক মাসেও অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনা অপসারণ না করে বহাল তবিয়তে আছে। উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের ভজনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে শ্রেণিভুক্ত ২নং খতিয়ানের জমিতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিরেকে দোকানঘর নির্মাণ করে অবৈধ দখলে রাখা হয়েছে নোটিশ সূত্রে জানা গেছে। এতে ওই বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ নষ্টসহ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধ স্থাপনা গত ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সারিয়ে নেওয়ার নোটিশ দেওয়া হলেও দখলদাররা (দোকানদাররা) এসব স্থাপনা সরিয়ে নিতে কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করেননি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির সীমানার ভিতরে এবং সীমানা ঘেঁষে সারি সারি পাকা আধাপাকা ২৮টির বেশি দোকানপাঠ রয়েছেন। এই সব দোকানের ময়লা ফেলা হচ্ছে বীরমুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমানের সমাধির পূর্বপার্শ্বে বিদ্যালয়টির অফিসের ঠিক পিছনে। বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্টসহ ময়লার ভাগারে পরিণত করছেন অবৈধভাবে নির্মিত এইসব দোকানপাঠ গুলো।
জানা যায়, উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের বামনপাড়া গ্রামের মৃত আজিজুল হকের ছেলে আব্দুর রহিমের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২০২২ সালের অক্টোবর মাসের ১৭ তারিখ সহকারী কমিশনার(ভূমি) (অ.দা.) অবৈধভাবে নির্মিত দোকান ঘরের জমি সাত দিনের মধ্যে অপসারণ করার জন্য নোটিশ প্রদান করলে তা তোয়াক্কা করেননি দোকানদারগণ। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, তেঁতুলিয়া বিষয়টি গত ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ২৭ তারিখ অনুষ্ঠিত ভূ-সম্পত্তি জবর দখলের বিষয়ে অভিযোগ গ্রহন এবং তদন্ত সংক্রান্ত কার্যক্রম মনিটরিং কমিটির সভায় উপস্থাপন করেন এবং উচ্ছেদ কেসনথি দাখিল করেন। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এসব অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় মর্মে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) চলতি বছরের গত ২৬ জানুয়ারি অবৈধভাবে নির্মিত দোকান ঘরের জমি সাত দিনের মধ্যে অপসারণ করার জন্য নোটিশ প্রদান করলে তা তোয়াক্কা করেননি দোকানদারগণ। এরপর চলতি বছরের গত ২০ ফেব্রুয়ারি সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট(রাজস্ব শাখা, ভূমি অধিগ্রহন শাখা ও আর এম শাখা) মোঃ জাকির হোসেনকে উচ্ছেদ অভিযানের জন্য নিয়োগ করা হয়। পরে নিয়ুক্ত ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনা তিন দিনের মধ্যে অপসারণ করতে বলা হলে অপসারণ না করে বহাল তবিয়তে আছে।
ওই বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী বেলাল, তাওসিফসহ আরো কয়েকজন জানান, ‘আমাদের ড্রেনের দুর্গন্ধের সঙ্গে ক্লাস করতে হচ্ছে। এই দুর্গন্ধে আমাদের মধ্যে দু’একজন অসুস্থ্য হয়েছিলাম। ক্লাস রুম খুললেই জানালা বন্ধ করে ক্লাস করতে হয়।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, অধিকাংশ দোকান তাঁরা মাসিক ভাড়ায় বিদ্যালয়ের তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি/ সম্পাদক এর কাছ থেকে চুক্তিনামাপত্রে নিয়েছেন। এই মুহূর্তে দোকান উচ্ছেদ করা হলে তাদের মোটা অংকের লোকসানের মুখে পড়তে হবে।
অভিযোগকারী আব্দুর রহিম জানান, তিনি প্রায় ৭/৮বছর বিদ্যালয়টি উত্তর পার্শ্বে দোকান করছিলেন। তাঁর দোকানের মাসিক ভাড়া তুলতেন পুর্ব বামনপাড়া (মালিগছ) গ্রামের মৃত এজার উদ্দিনের ছেলে এনামুল হক। দুই বছর হল দোকানদারী ব্যবসা বাদ দিয়েছেন। ভাড়াটিয়া এনামুল হক যখন ২লাখ টাকা অবৈধভাবে জামানত চেয়েছিলেন তখন দোকানদারী ব্যবসা বাদ দেয়া হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোকবুলার রহমান বলেন, ‘বিদ্যালয়টির যতটুকু জমি থাকা দরকার তার চেয়ে কম রয়েছে। আমরা স্থানীয় সার্ভেয়ার দিয়ে জরিপ করেছি। বিদ্যালয়টির মূল ফটকের পূর্বে বাজারে প্রবেশের রাস্তার দু’ধারের যে দোকানঘর গুলো রয়েছে সেগুলি বিদ্যালয়ের জমির উপর নির্মিত করা হয়েছে এবং বিদ্যালয়ের উত্তর পার্শ্বের দোকান গুলোও বিদ্যালয়ের সীমানায় স্থাপিত করা হয়েছে। উত্তর পার্শ্বের দোকানগুলোর ময়লার স্তুপে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় এবং বর্ষায় দোকানের টিনের চালার পানিতে বিদ্যালয়ের ওয়াল ঘেঁষে অফিসে পানি প্রবেশ করে।’ তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়ের পশ্চিম পার্শে¦ ড্রেনের প্রচন্ড দুর্গন্ধে শিক্ষার্থীরা অসুবিধার মধ্যে ক্লাস করছেন। এসব স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য আব্দুর রহিম নামে এক ব্যক্তি প্রথমে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পরে জেলা পর্যায় আবেদন করেন।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবু তাহের বলেন, দোকানগুলো বিদ্যালয়ের জমির উপর রয়েছে। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অসুবিধা হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, বিদ্যালয়টির পশ্চিম পার্শ্বে ড্রেনের দুর্গন্ধে শিক্ষার্থীরা খুবই অসুবিধায় রয়েছেন এর একটি ব্যবস্থা হওয়া দরকার।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মোঃ ইউনুস আলী বলেন, প্রায় ৫ থেকে ৬মাস আগে অভিযোগের প্রেক্ষিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়টি কি অবস্থায় আছেন আমাদের কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলেন।
আমরা একজন সার্ভেয়ার দিয়ে জরিপ করে রিপোর্ট দিয়েছি। বিদ্যালয়ের সীমানার ভিতরে দোকানঘর স্থাপিত করা হয়েছে আর কিছু দোকান সড়ক ভবনের জায়গায় রয়েছে। এ ব্যাপারে সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ জাকির হোসেন বলেন, ‘প্রসেসিং এ আছে, একটি রিপোর্ট পাব, পেলেই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

Related posts

Leave a Comment