বাজেট অধিবেশন কাল, স্বাস্থ্য সুরক্ষা জোরদার

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

নানান সতর্কতা সত্ত্বেও একের পর এক সংসদ সদস্যরা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। ইতোমধ্যে আটজন সংসদ সদস্যসহ বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্যরা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছেন সংসদ সচিবালয়ের ৪৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এনিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। এই অবস্থায় আগামী বাজেট অধিবেশনকে সামনে রেখে স্বাস্থ্য সুরা জোরদার করা হচ্ছে। ওই অধিবেশনে দায়িত্ব পালনের জন্য ইতোমধ্যে ৩০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে করোনা টেস্ট করানো হয়েছে। প্রবীণ সদস্যদের অধিবেশনে না আসার জন্য উদ্বুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সংসদ সদস্যদের মধ্যে সর্বশেষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য রনজিত কুমার রায়। গত সোমবার রাত পৌনে ১২টার দিকে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারে নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে তার। এরপর তাকে যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন পার্বত্য বান্দরবান আসন থেকে নির্বাচিত বীর বাহাদুর উশৈসিং। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী উশৈসিং গত শনিবার নিশ্চিত হন তিনি করোনা আক্রান্ত। জ্বরসহ করোনা উপসর্গ দেখা দেওয়ার কারণে ৩ জুন তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। গত শনিবার তাকে করোনা পজেটিভ বলে জানানো হয়।
এরপর রবিবার দুপুরে তাকে হেলিকপ্টারে বান্দরবান থেকে ঢাকায় এনে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়।
করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন। গত পহেলা জুন নিউমোনিয়া জনিত সমস্যা নিয়ে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হন এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা করা হলে ফলাফল পজিটিভ আসে।
এদিকে প্রথম করোনা আক্রান্ত সংসদ সদস্য নওগাঁর-২ আসনের মো. শহীদুজ্জামান সরকার ইতোমধ্যে পুরোপুরি সুস্থ্য হয়েছেন। প্রথমে পজেটিভ আসলেও দ্বিতীয় দফা টেস্টে নেগেটিভ এসেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার-৫ আসনের এবাদুল করিম বুলবুল ও চট্টগ্রাম-৬ আসনের এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর। এছাড়া জামালপুর-২ আসনের ফরিদুল হক খান দুলাল ও চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালি) আসনের মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী চিকিৎসাধীন থাকলেও অনেকটা সুস্থ্য বলে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, সংসদ সদস্য ছাড়াও সংসদের ৪৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। যাদেরকে আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে। যে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করোনা পজিটিভ এসেছে তাদের অনেকের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, প্রধান হুইপসহ ভিআইপিদের রুমে আসা যাওয়া ও বিভিন্ন কাজে পাশে ছিলেন। এছাড়া পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের বাসায় কর্মরত চারজনসহ বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যের পরিবার, সংসদ সচিবালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবার এবং সংসদ নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ ও আনসার বাহিনীর প্রায় দুশো সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। করোনা সংক্রমণের এই ঘটনায় সংসদ ভবন জুড়ে আতংক ও উদ্বেগ বিরাজ করছে। এরমধ্যে আগামীকাল ১০ জুন বিকেল ৫টায় বসছে বাজেট অধিবেশন। তাই করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে কঠোর সতর্কতা অবলম্বনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, করোনা সতর্কতার অংশ হিসেবে অধিবেশন সংক্ষিপ্ত করার কথা জানানো হয়েছে। এবারো অধিবেশনের আগে সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠক হচ্ছে না। এরআগে সাংবিধানিক বাধ্য-বাধকতার কারণে গত ১৮ এপ্রিল এক দিনের জন্য বসা সংসদের সপ্তম অধিবেশনের আগেও কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠক হয়নি। আর সংসদ অধিবেশনে উপস্থিতি একশো জনের কম রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে প্রবীণ ও অসুস্থ্যদের না আসার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিষয়টি সমন্বয় করার জন্য হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এছাড়া ইতোমধ্যে সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ উদ্যোগে করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন। আর সংসদ সচিবালয়সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রায় ৫০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর করোনা ভাইরাস টেস্ট করানো হয়েছে। করোনা ভাইরাস নেগেটিভ নিশ্চিত হয়ে তাদেরকে আগামী অধিবেশনে সংসদ ভবনে দায়িত্ব পালনে পাঠানো হবে। ইতোমধ্যে যাদের নেগেটিভ এসেছে, তাদেরকে সংসদ সচিবালয়ের তত্ত্বাবধানে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।
সংসদের প্রধান হুইপ নূর-এ আলম চৌধুরী লিটন জানান, করোনা পরিস্থিতিতে ঝুঁকি ও আতংক থাকলেও তা মোকাবেলার জন্য কঠোর সতর্কতাও অবলম্বন করা হচ্ছে। বাজেট অধিবেশন থেকে যাতে নতুন কেউ সংক্রমিত না হন, সে বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রবীণ ও অসুস্থ এমপিদের অধিবেশনে না আসার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
এদিকে নতুন বছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের উপর মাত্র ৫দিন আলোচনা হবে। আর পুরো বাজেট পাসের প্রক্রিয়া ব্যয় হবে ১০দিন। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ঘন্টা বাজেট আলোচনা হতে পারে। গত বছর প্রায় ৬০ ঘন্টা আলোচনা হয়েছিলো। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত এই আলোচনা চলবে। আগামী ২৯ জুন অর্থবিল ও ৩০ জুন মূল বাজেট পাস হবে। মাত্র ১২ কার্যদিবসে আগামী ৯ জুলাই শেষ হতে পারে দেশের ইতিহাসের সংক্ষিপ্ততম বাজেট অধিবেশন।

Related posts

Leave a Comment