‘মৃত্যু আসলেও ডাক্তার আসলেন না’

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

‘রাতভর হটলাইনগুলোতে ফোন দিয়ে সারা পায়নি। পাওয়া যায়নি সরকারি হাসপাতালগুলোর এ্যম্বুলেন্স। করোনা হয়েছে সেই আতঙ্কে পরশিরাও কেউ এগিয়ে আসেনি। রাস্তায় কোন গাড়ি ঘোড়াও নাই। কোন ভাবেই একা স্বামীকে হাসপাতালে নিতে পারিনি। রাত সাড়ে এগারোটার দিকে নিস্তেজ হয়ে যায় স্বামীর শরীর। ছোট্ট মেয়েটাকে নিয়ে নিথর দেহের পাশে বসে রাত পার করেছি। সে মারা গেছে না বেঁচে আছে বুঝতে পারিনি।
করোনার ভয়ে কেউ কাছেও আসেনি। আল্লাহ তুমি এমন অসহায় করে মৃত্যু দিলে কেন’। এভাবেই কান্না জড়িত কণ্ঠে বললেন বগুড়ার শিবগঞ্জের মৃত্যু ব্যক্তির স্ত্রী।
ওই ব্যক্তি কয়েকদিন আগে গাজীপুর থেকে বাড়িতে ফিরেন। এর পর জ্বর ও সর্দি কাশি দেখা দেয়। শুক্রবার রাতে তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। অসুস্থ স্বামীকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য স্ত্রী প্রথমে প্রতিবেশীদের সহযোগিতা চান। ওই ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে কেউ তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। এরপর স্ত্রী অ্যাম্বুলেন্সের জন্য মোবাইলফোনে যোগাযোগ করেন জেলা ও উপজেলার হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের নম্বরে। ওই রাতে তিনি কারো কাছেই সাড়া পাননি।
ওই ব্যক্তির স্ত্রীর অভিযোগ, তিনি রাতে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) হটলাইনে ফোন দিয়ে কাউকে পাননি। বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের হটলাইনে ফোন করেও সাড়া পাননি।
পরে, শনিবার হটলাইনে বিষয়টি জানার পর বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বিষয়টি জেলা সিভিল সার্জন ও পুলিশ প্রশাসনকে জানান। সকালে স্বাস্থ বিভাগ থেকে একজন গিয়ে ওই ব্যাক্তির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মৃত ওই ব্যাক্তির স্ত্রী জানান, তার স্বামী গত মঙ্গলবার তিনি গাজীরের শ্রীপুর থেকে বাড়িতে আসেন। পরের দিন বুধবার থেকে জ্বর-সর্দি এবং কাশি দেখা দেয়। পল্লী কিচিৎসকের পরামর্শে জ¦র সর্দির ওষুধ খেয়েছিলেন তিনি। শুক্রবার রাতে তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। রাত সাড়ে এগারোটার দিকে এক পর্যায়ে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। সাহায্যের জন্য পরশি এবং হাসপাতালগুলোতে সাহায্য চেয়ে কারো সাড়া পাননি তিনি। ঘরে সাত-আট বছরের এক মেয়েকে নিয়ে তিনি চরম অসহায় হয়ে পড়েন। শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, শিবগঞ্জ থানার পুলিশ, শিবগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসে ফোন দেন সহযোগিতার জন্য। কোনো সাড়া না পেয়ে আইইডিসিআরের হটলাইনে ফোন দেন। কিন্তু লাইন পাননি। পরে ফোন দেন শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের হটলাইনে। শেষ পর্যন্ত মৃত্যু আসলেও ডাক্তার আসেননি তার বাড়িতে।
শিবগঞ্জের ময়দন হাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম রুপম মানবজমিনকে বলেন, মাত্র (দুপুর পৌনে দু’ টা) সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে লোকজন এসেছেন তারা নমুনা সংগ্রহ করবেন। তার পর বোঝা যাবে তার মৃত্যুর কারণ।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলমগীর কবীরের সাথে কথা বললে তিনি বলেন পরীক্ষা নিরীক্ষা জন্য আলামত ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে এরপর জানা যাবে করোনা হয়েছিলো কিনা। তিনি আরো বলেন, মুত্যু ব্যাক্তির বাড়ির আশেপাশের ৮টি বাড়ি লকডাউন করে রাখা হয়েছে। মৃতু ব্যক্তির লাশ করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের মত করেই সৎকার করা হবে।-মানবজমিন

Related posts

Leave a Comment