রাজধানীর মগবাজার ফ্লাইওভারে গোপন ‘সুড়ঙ্গ’, কী হয় সেখানে

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

রাজধানীর মগবাজার ফ্লাইওভারের একটি গোপন ‘সুড়ঙ্গ’-এর সন্ধান পেয়েছে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। তাদের অভিযানে সেখান থেকে তিন নারী ও এক পুরুষ ছিনতাইকারীকে আটক করা হয়েছে।
আটকের সময় আকবর (১৯) নামে এক ছিনতাইকারী সেখান থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হন।
আহত ছিনতাইকারী ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি জানান, আসলে কী হয় ফ্লাইওভারে সেই গোপন ‘সুড়ঙ্গে’। তিনি বলেন, ‘ওই সুড়ঙ্গে বসে মাদক সেবন করি এবং ছিনতাই করার পর সেখানে লুকিয়ে থাকি।’
এ চক্রের প্রধান আকবর হোসেন। তার সহযোগী রবিউল হোসেন হৃদয়। তবে এ চক্রে আছেন কয়েক নারী ছিনতাইকারী। নারী সহযোগী দুইজনের নাম শেফালী ও মিম।
তারা দিনের বেশির ভাগ সময় থাকতেন সুড়ঙ্গের ভেতর। রাতে সুযোগ বুঝে নারী সহযোগীরা পথচারীকে কথার ফাঁদে ফেলে আটকে রাখতেন। পথচারীর কাছে মূল্যবান কিছু আছে বুঝতে পারলেই এক ধরনের সাংকেতিক শব্দ করলে সুড়ঙ্গ থেকে দেশি অস্ত্র নিয়ে পথচারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তেন সহযোগীরা। পরে ছিনতাই করে নারী সদস্যদের নিয়ে নিরাপদে সুড়ঙ্গে উঠে যেতেন আকবর। সুড়ঙ্গের ভেতর তারা অনৈতিক কাজেও লিপ্ত ছিলেন।
মগবাজার ফ্লাইওভার দিয়ে রাতে হেঁটে ও মোটরসাইকেলে চলাচলকারী পথচারীদের টার্গেট করতেন ছিনতাইকারী চক্রের নারী সদস্যরা। তারা পথচারীদের প্রথমে অনৈতিক কাজের প্রস্তাব দিতেন। কেউ রাজি হলে রশি ও কাঠের মই দিয়ে সুড়ঙ্গের মধ্যে নিয়ে যেতেন। তারপর তার সবকিছু কেড়ে নিতেন। কেউ যেতে রাজি না হলে সাংকেতিক শব্দ (শিস) করে সহযোগীদের ডাকতেন। পরে আকবরসহ তার সহযোগীরা ১০ সেকেন্ডের মধ্যে সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তেন।
পুলিশ বলছে, দিনের পর দিন হাজার হাজার মানুষ মগবাজার ফ্লাইওভার ব্যবহার করলেও কেউ জানতে পারেননি এই গোপন সুড়ঙ্গের কথা। ফ্লাইওভারের মধ্যে অপরাধীদের বিচরণ ক্ষেত্র থাকার কথা ছিল সবার কল্পনার বাইরে। সেখানে ছিনতাইকারীরা টানা সাত দিনও অবস্থান করেছেন। তাদের নারী সহযোগীরা খাবারসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করতেন।
তাদের কাছ থেকে চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে।
হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মো. আওলাদ হোসেন বলেন, ফ্লাইওভারের নিচে পিলারের ওপরে গোপন আস্তানায় তারা ছোট একটি মই, পুরোনো কম্বল ও রশি ব্যবহার করে সুড়ঙ্গে ওঠানামা করতেন। তারা লোকচক্ষুর আড়ালে সেখানে দীর্ঘদিন থেকে ওঠানামা করে আসছেন। এ ঘটনায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পুলিশের মধ্যেই বেশ চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। এই চক্রে আর কারা জড়িত তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
গত বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে একটি ছিনতাইয়ের ঘটনাকে ঘিরে বেরিয়ে আসে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।
আরামবাগের একটি প্রেসের কর্মচারী শামীম আহমেদ মিরপুরের বাসার উদ্দেশে ফিরছিলেন। রাজধানীর মগবাজারের কাছে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের পাশ থেকে ফ্লাইওভারে ওঠার পর তার মোটরসাইকেল নষ্ট হয়ে যায়। উপায়ান্তর না দেখে ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে ঠেলে মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছিলেন। মধ্যরাতে মোটরসাইকেল নিয়ে বিপাকে পড়া শামীমকে সতর্ক হয়ে মোটরসাইকেল ঠেলার পরামর্শ দেন অচেনা দুই নারী। তারা বলেন, রেলিং ঘেঁষে না চললে শামীম দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। কথায় কথায় শামীমের শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে ওঠার চেষ্টা করেন তারা। এরপরই এক ধরনের সাংকেতিক শব্দ করেন দুই নারী। ওই শব্দ পেয়ে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ৩-৪ জন চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শামীমকে ঘিরে ধরেন। ফ্লাইওভারের ওপরেই তাকে কুপিয়ে আহত করে মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেন। শামীম দেখতে পান, তার চোখের সামনেই ছিনতাইকারী চক্রের সবাই ফ্লাইওভারের একটি ‘সুড়ঙ্গে’ লুকাচ্ছেন।
শামীমের কাছ থেকে এ অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযানে যায় পুলিশ।

সূত্র : চ্যানেল২৪ এর প্রতিবেদন

Related posts

Leave a Comment