সরকারি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আশঙ্কা! বদলগাছীতে কৃষকেরা গুদামে ধান দিচ্ছেনা, কারন বাজারে ধানের দাম ভাল।

বিশেষ প্রতিনিধিঃ

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় সরকারের নির্ধারিত মূল্য থেকে হাট-বাজারে ধানেরে মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা খাদ্য বিভাগের কাছে ধান  দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন। এ অবস্থায় চুক্তিবদ্ধ মিলাররাও চাল সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এতে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরন হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বদলগাছী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্র জানাযায়, চলতি বোরো মৌসুমে ২৬ টাকা কেজি দরে এক হাজার ৪৩৯ মেট্রিক টন ধান ও ৩৬ টাকা কেজি দরে ৯৭৬ মেট্রিক টন চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়। গত ১৪ মে উপজেলা খাদ্য গুদামে লটারির মাধ্যমে কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় এবং চুক্তিবদ্ধ ২২জন মিলারদের কাছ থেকে চাল ক্রয় কার্যক্রমের উদ্বোধন হয়। লটারিতে নির্বাচিত কৃষকদের নিকট থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত মাত্র ১৪ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হয়েছে। অন্যদিকে মিলাররা বদলগাছী উপজেলা খাদ্যগুদামে ৪০০ মেট্রিকটন চাল সরবরাহ করতে পেরেছেন। ধান-চাল সংগ্রহ চলবে আগামী ৩১ আগষ্ট পর্যন্ত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাদ্য বিভাগ কৃষকের কাছে প্রতিমন ধান এক হাজার চল্লিশ টাকা দরে কিনছে। অথচ উপজেলার হাট-বাজারে বর্তমানে ধান ভেদে প্রতিমন ধান ৯২০ টাকা থেকে এক হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত কেনাবেচা চলছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কৃষক জানান, সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে গিয়ে অনেক হয়রানি ও সময় অপচয় হয়। হাট-বাজারে কোনো হয়রানি ছাড়াই মূল্য বেশি পাওয়া যাচ্ছে। সে তুলনায় হাটে ধান বিক্রি করা লাভজনক। মিঠাপুর ইউনিয়নের উঃ পাকুরিয়া গ্রামের কৃষক সুমন হোসেন জানান, বর্তমানে খোলা বাজারে প্রতি মন মোটা ধান ৯২০ থেকে ৯৫০ টাকা এবং চিকন ধান ৯৫০ থেকে ১,১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে হলে শুকানোর খরচ এবং পরিবহন ব্যয় বেড়ে যায়। এ কারণে তিনি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী নয়। বদলগাছী উপজেলার আহসান হাবীব কোয়েল সহ একাধিক চালকল মালিক জানান, বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী ৯২০ টাকা দরে প্রতি মন ধান কেনার পর তা থেকে ২৫ কেজি চাল বের হয়। এতে প্রতি কেজি চালের মূল্য দাঁড়ায় ৩৬ টাকা ৮০ পয়সা। এছাড়াও পরিবহন ও লেবার খরচসহ প্রতি কেজি চালের মূল্য পড়ে ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা। আর খাদ্য বিভাগ মিলারদের কাছ থেকে চাল ক্রয় করছে ৩৬ টাকা কেজি দরে। এ কারনে চলতি মৌসুমে খাদ্য বিভাগে চাল সরবরাহ করতে চুক্তিবদ্ধ মিলারদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
বদলগাছী খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ করিম বলেন, বর্তমানে খাদ্যগুদাম প্রাঙ্গনে নিরবতা বিরাজ করছে। নির্বাচিত কৃষকেরা গুদামে ধান দিতে আসছে না। সরকারের সংগ্রহ মূল্য থেকে বাজারে ধানের দাম ভাল থাকায় কৃষকেরা গুদামে ধান দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন। তবে আমরা নির্বাচিত কৃষকদের গুদামে ধান দিতে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হবো। বদলগাছী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মোহাজের হাসান বলেন, বর্তমানে খোলা বাজারে ধানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন পর্যন্ত গুদামে কৃষকরা ধান দিতে আগ্রহী নয়। তাই চলতি মৌসুমে ধান-চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরন না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে সরকারি স্বার্থে আমাদের কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে কৃষকদেরকে উন্মুক্ত ভাবে খাদ্যগুদামে ধান দিতে উদ্বুদ্ধ করা হবে।
বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাঃ আবু তাহির জানান, বর্তমানে খোলা বাজার ও হাটগুলোতে ধানের দাম বেশি পাওয়ায় সরকারি খাদ্যগুদামে ধান না দিয়ে বাজারে ধান বিক্রয়ে বেশী আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। ধান-চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Related posts

Leave a Comment