সিরাজগঞ্জে গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় বিপাকে খামারিরা

মো: দিল. সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:

সিরাজগঞ্জে গত কয়েক মাসে দফায় দফায় বেড়েছে গো-খাদ্যের দাম। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন জেলার গো-চারণ ভূমি খ্যাত শাহাজাদপুর উপজেলার ছোট বড় সব ধরনের খামারি। এভাবে খাদ্যের দাম বাড়তে থাকলে অচিরেই খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সিরাজগঞ্জে ১৩ হাজার ৪০০টি গাভীর খামার রয়েছে। এসব খামারে গবাদিপশু প্রায় ১০ লাখ ৪৯ হাজার। এ ছাড়াও ১৩ হাজার ২০০টি ষাড় গরুর খামার আছে। এসব গবাদিপশুর জন্য প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ গো-খাদ্য প্রয়োজন। বর্তমানে গো-খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে খামারিরা বিপাকে পড়েছেন। এই খাতকে বাঁচাতে হলে এখনই বিকল্প খাদ্যের উৎস খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা।
ব্যবসায়ীদের দাবি, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাজারে সরবরাহ কমেছে গো-খাদ্য কাঁচামালের। ফলে এ ব্যবসায় এখন ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।
সরজমিনে জেলার বিভিন্ন খামার ঘুরে দেখা যায়, দানাদার খাবারের পরিবর্তে ঘাস জাতীয় খাবার দেয়া হচ্ছে গবাদিপশুকে। আবার অনেক জায়গায় বন্যার পানি উঠে ঘাসের জমি তলিয়ে যাওয়ায় দানাদার খাদ্য দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে গবাদিপশু দ্রুত বেড়ে উঠতে ও লালন পালনে সমস্যা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারিরা।
স্থানীয় বাজার পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, ৩৭ কেজি ওজনের এক বস্তা গমের ভূষি বিক্রি হচ্ছে ১৬৫০ টাকায়, ৪০ কেজি ওজনের এক বস্তা ধানের তুষ ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, ৭৪ কেজি ওজনের এক বস্তা তিলের খৈল ৩২০০ টাকা, ৩০ কেজি ওজনের এক বস্তা মুসুরের ভূষি ১০০০ থেকে ১০৫০ টাকা, ২৫ কেজি ওজনের এক বস্তা খেসারির ভূষি ১১৫০ টাকা, ২৫ কেজি ওজনের এক বস্তা ভুট্টার ভূষি ৮০০ টাকা। এ ছাড়া ৭৪ কেজি ওজনের এক বস্তা সরিষার খৈল ৩৫০০ টাকা এবং এক মুঠি খড় বিক্রি হচ্ছে ৮-১০ টাকায়।
শাহাজাদপুর উপজেলার রাউতারা গ্রামের এলিজা ডেইরি ফার্মের মালিক মোছা. এলিজা বেগম বলেন, সারা দেশের দুধের চাহিদা মেটাতে আমাদের শাহজাদপুরের বিভিন্ন খামার থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ লিটার দুধ সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে গো-খাদ্যের দাম অনেক বেশি। এ ছাড়া খৈলের দামও বেড়েছে। গরুর চাহিদামতো আমরা খাবার দিতে পারছি না। যার কারণে দুধও এখন কম হচ্ছে।
রেশমবাড়ি গ্রামের সৌরভ ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো. সালাম ব্যাপারী জানান, আমার খামারে বর্তমানে ২৫০-৩০০টি গরু আছে। খামার থেকে যা দুধ উৎপাদন হয় তা মিল্কভিটা কোম্পানিতে দিই। কিন্তু কাঁচা ঘাস ও দানাদার খাদ্য পর্যাপ্ত পরিমাণ না থাকায় দুগ্ধ উৎপাদন কমে গেছে। তা ছাড়া ষাঁড়, বাছুর গরু স্বাভাবিক বৃদ্ধি পাচ্ছে না। বাজারে গোখাদ্যের দাম এ পরিমাণ বেড়েছে যে আমার খামার টিকিয়ে রাখাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। এখন একমাত্র বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছি।
শাহাজাদপুর উপজেলার গোখাদ্যের পাইকারি বিক্রেতা তুহিন ট্রেডার্স এর স্বত্বাধিকারী লুৎফর রহমান বলেন, বর্তমানে ভূষি, ফিড, খৈল, সয়াবিনসহ সব ধরনের খাবারের দাম বেড়েছে। আমরা যেমন দামে কিনে আনছি তেমন দামেই বিক্রি করছি। খাদ্যের দাম কমলে তখন কম দামে বিক্রি করবো এক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করার নেই।
এ বিষয়ে জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বাজারে দানাদার খাদ্য যেমন খৈল, ভূষি, সয়াবিন জাতীয় খাদ্যের দাম বেড়েছে। তাই দানাদার খাদ্যের উপর নির্ভরশীল না হয়ে গবাদিপশুকে জমিতে লাগানো কাঁচা ঘাস খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এতে দেশীয় খাবারেই গবাদিপশুর পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা যাবে। এ ছাড়া কোনো অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের জন্য বাজারে কারসাজি করার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Related posts

Leave a Comment