ইনসানে কামেল

– ডাঃ মৌলভী কাজী আবদুর রহমান

তাওহীদে এলাহী (আল্লাহ পাকের একত্ববাদ)

 

এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ এক, তিনি অদ্বিতীয় ও অতুলনীয়- এই বিশ্বাসের নাম তাওহীদ। তাওহীদ শব্দের অর্থ একত্ববাদ। ইলসামের পরিভাষায় একমাত্র আল্লাহ তায়ালাকেই সৃষ্টিকর্তা, পালন কর্তা, ইবাদত বা আনুগত্যের যোগ্য এবং তাঁকে একক সত্তা হিসাবে স্বীকার ও বিশ্বাস করাকেই তাওহীদ বলে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন-

“আসমান ও জমীনে যদি এক আল্লাহ ব্যতীত একাধিক ইলাহ্ থাকতো তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেতো।” (সুরা আল-আম্বিয়া- ২২)

তাওহীদে ইলাহীকে আবার ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন:-
১। তাওহীদে রাবুবিয়াত ২। তাওহীদে উলুহীয়াত বা এবাদত এবং ৩। তাওহীদে আসমা ওয়াস সীফাত।

১। তাওহীদে রাবুবিয়াত:-
মনে প্রাণে এই কথা বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ পাকই এক মাত্র সৃষ্টি কর্তা, রিজিকদাতা, জীবনদাতা, ইজ্জতদাতা এবং ইজ্জত কেড়ে নেয়ার মালিক। তিনি হাসাতে পারেন, কাঁদাতে পারেন, রাতকে দিন করতে পারেন, আর পারেন দিনকে রাত করতে। পাহাড় ভেঙ্গে দরিয়া এবং দরিয়াতে পাহাড় তৈরী করতে পারেন। তাঁকে ছাড়া এই বিশ্ব-ভ্রহ্মান্ডের সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী আর কেউ নেই। এক কথায়, দোজাহানের একচছত্র অধিপতি, মালিক ও সর্বময়কর্তা তিনি। আর এই মাখলুক সবই তার গোলাম।
সৃষ্টির মধ্যে যে যা করে, যেমন ঃ- চলা, ফেরা, বলা, যোগ্যতা ও ক্ষমতা সব কিছু ঐ এক আল্লাহর দান। কেউ কোন কিছু নিজ শক্তিতে করতে পারে না। আল্লাহ ছাড়া কেউ কোন কিছু করেছে, করছে বা করতে পারে এমন ভাবনাও যদি কেউ করে, তবে সে মুশরিক হয়ে যাবে। আর তাকেই বলা হয় “শিরক ফিল রাবুবিয়াত”।

২। তাওহীদে উলুহীয়াত বা তাওহীদে এবাদত:-
প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য সকল প্রকার এবাদত কেবল মাত্র এক আল্লাহর জন্যই একক ভাবে সুনির্দিষ্ট। এবাদতের ব্যাপারে তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরিক করা যাবে না। এছাড়া মনে এমন দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে যে কোন ফেরেশতা, জ্বীন, এমন কি নবী রাসুল, পীর পয়গম্বর কোন ভাবেই আল্লাহর এবাদতে শরিক নয়। আর তাদের কোন নিজস্ব^ ক্ষমতা আছে, তারা কোন গোপন বিষয় জানে বা দেখে, তারা ইচছা করলে যার সন্তান নেই তাকে সন্তান দিতে পারে, যাদের ধন নেই তাদের ধন দৌলত দিতে পারে, মোকদ্দমায় জয়ী করে দিতে পারে, পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দিতে পারে, এমনটি বিশ্বাস করলেও ঈমান হারাতে হবে। একে শিরক ফিল উলুহীয়াত (এবাদত) বলে।

৩। তাওহীদে আসমা ওয়াস সিফাত:-
আল্লাহ পাক নিজ সত্তার জন্য যে নাম সাব্যস্ত করেছেন অথবা আল্লাহর রাসুল (সাঃ) আল্লাহর শানে যে সকল নাম বা গুণাবলীর উল্লেখ করেছেন, সে সব নামকেই তাওহীদে আসমা ওয়াস সিফাত বলা হয়।
আর যে সব নাম আল্লাহ পাকের সত্তা ও শানের উপযোহী নয় সেগুলোকে অবশ্যই স¤পর্ণ ভাবে পরিত্যাগ করতে হবে, অস্বীকার করতে হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাকের গুণাবলীর সঙ্গে অন্য কোন গুনের তুলনা নেই, সাদৃশ্য নেই বা হতে পারে না। তিনি নিশ্চয়ই অতুলনীয়, নজীরবিহীন, সর্বগুণের আকর, সর্ব ক্ষমতার অধিকারী- লাশারীকা লাকা।
আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা যেমন ফরজ, তেমনি ঈমানকে রক্ষা করা, অন্তরে মজবুত ভাবে ধারণ করা, ঈমানকে হেফাজত করা, ঈমান সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা, নিজের উপর ঈমানকে প্রতিষ্ঠিত করা, এক কথায় ঈমানের গন্ডির মধ্যে আমল করাও ফরজ। তাই ঈমান নষ্ট হতে পারে এমন সব কার্যকলাপ, কথাবার্তা, আচার আচরণ করা অবশ্যই বর্জনীয়। কারণ, ঈমান ও এখলাস বিহীন এবাদত আল্লাহর দরবারে মোটেই গ্রহন যোগ্য নয়।

(চলবে………..)

Related posts

Leave a Comment