গাংনীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন

মেহেরপুর প্রতিনিধি:
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটী ইউনিয়নের ধর্মচাকী গ্রামে জমি নিয়ে বি‡রাধের জের ধরে দু’পক্ষের ‡লাকজন পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছে।
শুক্রবার পৃথক সময়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এদিন সকাল ১১টার দিকে ধর্মচাকী গ্রামে সংবাদ সম্মেলনের
আয়োজন করেন ওই গ্রামে আব্দুল লতিফের ছেলে ও দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার প্রতিনিধি লিটন মাহমুদ এবং
তার ‡লাকজন।
সংবাদ সম্মেলন লিটন মাহমুদ বলেন, ধর্মচাকী গ্রামস্থ একটি নালিশি জমিতে বাঁশবাগান রয়েছে। এ বাঁশ বাগান থেকে
বাঁশ চুরির করা হয়েছে এমন মিথ্যা অভিযোগ তুলে গত ১২ ডিসেম্বর ধর্মচাকী গ্রামের বাসিন্দা দিন মজুর রুবেল
হােসেনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরাে বেশ কয়েক জনের নামে গাংনী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়।
অভিযােগটি করেন গাংনী উপজেলার চেংগাড়া গ্রামের বিএনপি নেতা আব্দুল হালিমের ছেলে মাসুদুর রহমান।
মামলার ভিত্তিতে গাংনী থানার এস আই আতিক তদন্ত করে গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বাঁশচুরির ঘটনা
সত্য বলে জানান। সে মােতাবেক ১২ ডিসেম্বর রাতে একটি জি,আর ৩৪৭/২০২৩ মামলা হয় । যার মামলা নং-১৫।
যার ধারা হলাে ১৪৩, ৪৪৭, ৪২৭, ৩৭৯, ৫০৬, ১১৪। মামলা হওয়ার পর থেকে গাংনী থানার এস আই আতিক
আসামী রুবেল হোসেনের বাড়ীতে রাত দিন অভিযান অবাহত রেখেছেন। এছাড়াও আসামীদের হুমকি দিচ্ছেন।
লিটন মাহমুদ আরাে বলেন,এসআই আতিক বাদীর সাথে চুক্তি করে রুবেলসহ আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছেন।
এসআই আতিক শুধু মামলার পরামর্শ দিয়ে ক্ষ্যান্ত হননি। তিনি আমাকে থানায় ডেকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ
করেছেন। যা কােন সভ্য মানুষের আচরণ নয়। জমির প্রকৃত মালিক ধর্মচাকী গ্রামের মৃত আছালত মোল্লা। আছালত
মােল্লার ওয়ারিশ আব্দুল লতিফ। লতিফের ওয়ারিশ সূত্রে আমি জমির মালিক আমি নিজে। ধর্মচাকী মৌজার সি এস
১২৮ খতিয়ানভূক্ত ৪ একর ১০ শতক ও সিএস ১২৯ নং খতিয়ানে ১১ একর ৮১ শতক জমি নামদার মোল্লা বানাত
মোল্লা নামে প্রচলিত থাকা অবস্থায় কিছু জমির এস এ রেকর্ড অন্যদের নামে হয়। সেই সময় আমার দাদা আছালত
মোল্লা বাদী হয়ে ১৯৭৬ সালে গাংনী সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন এবং নিজের পক্ষে ১৯৮৬ সালে রায় পান
। আমার দাদার মৃত্যুর পর আমার বাবা আব্দুল লতিফসহ আমার চাচারা আবারো চেংগাড়া গ্রামের মৃত মসলেম
হোসেনের ছেলে বিএনপি নেতা আব্দুল হালিম এর নামে ভূল রেকর্ডের বিরুদ্ধে সহকারী জজ আদালতে দেওয়ানি
৬০/২০২৩ ও ১৪/২০২৩ মামলা করেছেন। বর্তমান মামলা দুটি বিচারাধীন রয়েছে ।
লিটন মাহমুদ আরও জানান, হঠাৎ গাংনী থানার এস আই আতিক আমাকে বলেন আপনার নামে বাঁশ কাটার
অভিযোগ রয়েছে। আপনি থানায় আসেন। পরের দিন সকালে গাংনী থানায় উপস্থিত হয়ে জানাতে পারলাম আমার
নামেসহ প্রতিবেশী রুবেল হোসেন, মতিয়ার রহমানের নামে আব্দুল হালিমের ছেলে মাসুদুর রহমান অভিযোগ
দিয়েছেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে গাংনী থানার এএসআই আতিক দু’পক্ষের লােকজনকে নিয়ে থানার বসেন। কােদালের ডামাট
করার জন্য ১টি মাত্র বাঁশ কেটেছি বলেও রুবেল স্বীকার করেন। তারপরও আমার নাম জুড়ে রুবেলসহ কয়েকজনের

নামে মিথ্যা মামলা করেন মাসুদুর রহমান। যে বাঁশবাগানের জমি নিয়ে আদালতে বিচারাধীন। কাের্টকে তােয়াক্কা না
করে এএসআই আতিক আমার সাথে মামলার কাগজপত্র চাই। আমি সেসব কাগজপত্র এএসআই
আতিকের হাতে দিলে,কিছু না পড়ে, তিনি কাগজপত্র ছুড়ে ফেলে দেন এবং আমাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ
করেন। সেই সাথে আমাকে চুরির মামলা দিয়ে জেল খাটানাের হুমকি প্রদান করেন। এসময় এস আই আতিক আরাে
বলেন,  এ্যাডিশনাল ডিআইজি জয়নাল স্যারের নির্দেশ আছে। বাদীর পক্ষে স্যার ফোন দিয়েছিলেন। তাই বাদিকেই
গুরুত্ব দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে রুবেল হোসেন বলেন,আমি কোদালের ডামাট করার জন্য একটি চিকন বাঁশ কেটেছিলাম। এজন্য
আমি থানায় ভূল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছিলাম। তার পরেও এস আই আতিকের পরামর্শে আমার নামে মিথ্যা ৬০টি
বাঁশ কাটাসহ ১ লক্ষ টাকার বাঁশ তসরুপাত করার মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করেছেন মাসুদুর রহমান । তাই,
ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাংবাদিকদের মাধ্যমে মেহেরপুর পুলিশ সুপার মহােদয়কে অনুরােধ করছি।
সংবাদ সম্মেলনে ধর্মচাকী গ্রামের মৃত মোজাহার আলী মালিথার ছেলে ফেসেরতুল্লাহ বলেন,বাঁশ বাগানের জায়গাটা
ধর্মচাকী গ্রামের মৃত আছালত মোল্লার বাবা বানাত মোল্লার ছিল। জমিটি নিয়ে মামলার পর আছালত মোল্লা
আদালতের তার নিজের পক্ষে রায় পেয়েছিলেন। তারপরও প্রতিপক্ষরা আবারাে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন।
আছালত মোল্লার মৃত্যুর পর তার ছেলে-মেয়েরা জমি ফিরে পেতে আদালতে মামলা করেছেন। মামলা হওয়ার পর
থেকে কোন পক্ষ বাঁশ বাগানে আসেনা। বাঁশ কাটা বন্ধ রয়েছে । এই বাঁশ বাগান থেকে অল্প দিনের মধ্যে কেউ কোন
বাঁশ কাটেনি। আমি শুনলাম দিনমজুর রুবেলের নামে ৬০টি বাঁশ কাটার মামলা হয়েছে। এই বাঁশ বাগানে ১ বছরের
মধ্যে কেউ বাঁশ কাটেনি। তার নামে যে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। পুলিশের এধরনের মিথ্যা মামলা নেওয়া ঠিক হয়নি।
এদিকে, শুক্রবার বিকেলে গাংনী উপজেলা চত্বরে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন চেংগাড়া গ্রামের
মােসলেম হােসেনের ছেলে আব্দুল হালিম। সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল হালিম বলেন,ধর্মচাকী মৌজায় আমার পিতার
নামে ও আমাদের ওয়ারিশগণের নামে জমি রয়েছে।ওই জমিতে বাঁশবাগান ও মেহগনি বাগান রয়েছে। বিবাদীগণের
বাড়ির কাছে ওই জমি থাকার কারণে,তারা দফায় দফায় বাঁশ কেটে তছরুপাত করে আসছে। বিবাদী ধর্মচাকী
গ্রামের লিটন এর আত্মীয়-স্বজনরা প্রতিনিয়ত বাঁশ কেটে আসছে। সেই সাথে হুমকি প্রদান করে আসছে।
তাই,সাংবাদিকদের মাধ্যমে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সংবাদ সম্মেলন বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Related posts

Leave a Comment