ড. ইউনূসের আবেদন খারিজ, দিতে হবে দানকর

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টাঃ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আরোপিত দানকর বৈধ ঘোষণা করা রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে (লিভ টু আপিল) ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বিভাগ শুনানি শেষে আজ এই আদেশ দেয়।
এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন আদালতের আদেশের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, লিভ টু আপিল খারিজ হওয়ায় দানকর আরোপ বৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রইল। আয়কর হিসেবে এনবিআর এর দাবি করা টাকা এখন তাকে দিতে হবে।
নিজ নামে প্রতিষ্ঠিত তিনটি ট্রাস্টে দান করা অর্থের বিপরীতে তিন করবর্ষে আয়কর কর্তৃপক্ষের দানকর আরোপ বৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আনা পৃথক তিনটি লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) খারিজ করে দিয়েছেন আজ আপিল বিভাগ। আয়কর হিসেবে এনবিআর এর দাবি করা ১৫ কোটির বেশি টাকার মধ্যে আপিল দায়েরের শর্তানুযায়ী ড. ইউনূস ইতিমধ্যে তিন কোটি টাকা দিয়েছেন। এখন বাকি প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা তাকে দিতে হবে। ট্রাস্ট তিনটি হলো-প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট, ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট ও ইউনূস সেন্টার ট্রাস্ট। এই তিন ট্রাস্টে ড. ইউনূস দান করেন। তিন ট্রাস্টে দান করা অর্থের বিপরীতে আয়কর কর্তৃপক্ষের দানকর আরোপ করে। এর বিরুদ্ধে ড. ইউনূসের করা পৃথক তিনটি আবেদন খারিজ করে গত ৩১ মে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে তিনটি ট্রাস্টে তিন কর বর্ষে ড. ইউনূসের দেওয়া উপহারের (দান) বিপরীতে কর আরোপকে বৈধ বলা হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে গত ২০ জুন আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৃথক তিনটি লিভ টু আপিল করেন ড. ইউনূস। এর সঙ্গে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চাওয়া হয়। তিনটি লিভ টু আপিল আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত হয়ে আজ আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।
আজ আদালতে আপিলকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সরদার জিন্নাত আলী। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সুমাইয়া ইফরিত বিনতে আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
মামলা থেকে জানা যায়, ১৯৯০ সালের দানকর আইন অনুযায়ী ২০১১-২০১২ করবর্ষে মোট ৬১ কোটি ৫৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা দানের বিপরীতে প্রায় ১২ কোটি ২৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকা কর দাবি করে নোটিশ পাঠায় এনবিআর। ২০১২-২০১৩ করবর্ষে আট কোটি ১৫ লাখ টাকা দানের বিপরীতে এক কোটি ৬০ লাখ ২১ হাজার টাকা দানকর দাবি করা হয়। আর ২০১৩-২০১৪ করবর্ষে সাত কোটি ৬৫ হাজার টাকা দানের বিপরীতে এক কোটি ৫০ লাখ ২১ হাজার টাকা কর দাবি করে নোটিশ দেয় এনবিআর।
দানের বিপরীতে কর দাবি করে এনবিআরের এসব নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আপিল ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ড. ইউনূস। তার দাবি, আইন অনুযায়ী দানের বিপরীতে এনবিআর এ কর দাবি করতে পারে না। এরপর ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর তার আবেদন খারিজ করে দেয়া হয়। এরপর ২০১৫ সালে তিনি হাইকোর্টে তিনটি আয়কর রেফারেন্স মামলা করেন। মামলাগুলোর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে দানকর দাবির নোটিশের কার্যকারিতা স্থগিত করে ২০১৫ সালে রুল জারি করে হাইকোর্ট।
ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে মৃত্যু ও পরিবারের সদস্যদের কল্যাণ চিন্তা করে নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত তিনটি ট্রাস্টে যে টাকা দান করেছেন, সেই দানের বিপরীতে এনবিআরের আরোপ করা দানকর বৈধ ঘোষণা করে গত ৩১ মে রায় দেন হাইকোর্ট।
এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস তিন প্রতিষ্ঠানে ৭৭ কোটি টাকা দান করেছিলেন। তিনি বলেন, এর বিপরীতে কর দিতে হবে না। আমরা বলেছি দিতে হবে, এ কারণে এনবিআর তাকে নোটিশ দিয়েছিল। পরে তিনি হাইকোর্টে তিনটি রেফারেন্স মামলা করেছিলেন। হাইকোর্ট রেফারেন্সগুলো ঠিক বলেছেন। আবেদনগুলো খারিজ করে দিয়েছেন। এর বিরুদ্ধে আনা আবদেনও আজ খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এখন এনবিআরের দাবি করা কর দিতে হবে।বাসস

Related posts

Leave a Comment