নারী পাতার কর্মশালা 

ফেরদৌস ওনুঃ

১৮ নভেম্বর ২০২২ সকাল ১০.৩০ মি: পিআইবি সেমিনার হলে অভূতপূর্ব এক আয়োজন ছিল। পিআইবি প্রশিক্ষক এবং সমন্বয়কারী পারভীন সুলতানা রাব্বী, পরিচালক পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ এবং আরও এক গুণী প্রশিক্ষক মিজানুর রহমান গ্রামসির সরব উপস্থিতিতে আয়োজন ছিল দৈনিক প্রত্রিকার নারীপাতা বিষয়ক কর্মশালার।এদিনের কর্মশালায় দেশের প্রায় সবকটি জাতীয় দৈনিকের নারী বিভাগীয় সম্পাদকের অংশগ্রহন সেমিনারকে অধিক অলংকৃত করেন।
শুভেচ্ছা বক্তব্যের শুরুতেই ওমেন্স নিউজ টুয়েন্টিফোরের সম্পাদক মাহমুদা কর্মস্থলের অসংগতি এবং নিজের কর্মস্থলে লিংগ বৈষম্যের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন সহকর্মীদের সঙ্গে । পরে দৈনিক জনকণ্ঠের নারী বিভাগীয় সম্পাদক নাজনীন সুলতানা দৈনন্দিন কর্মসূচীতে কোন কোন বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেন এর বিবরণ দিয়ে বলেন বর্তমানে ব্রিটিশ আমলের ধর্ষণ মামলার সংশোধন বাংলাদেশে নারী সাফল্যের ধারাবাহিকতায় নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে। নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে ৬৫% সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। অতঃপর বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের স্বনামধন্য সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সিনিয়র সাব-এডিটর /স্টাফ রিপোর্টার এবং একই সঙ্গে জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যাবস্থাপনা কমিটির সংগ্রামী সদস্য শাহনাজ সিদ্দিকী সোমা তার কর্মস্থলের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বক্তব্যে তুলে ধরে বলেন এখনো নারী সাংবাদিকদের বয়সকে বাঁধা করে তাদের অভিজ্ঞতাকে খাটো অবজ্ঞা করে চাকরিতে নিয়োগ দান করা হয়না! প্রশ্ন রাখেন তিনি সংশ্লিষ্ট কি রেসপনসেবলিটি যাদের হাতে রয়েছে – কিভাবে এ খাতের পূরণ সম্ভব? বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের শ্রদ্ধেয় সভাপতি নেত্রী নাসিমুন আরা হকের পরিচয় পর্বে কেউ কেউ এখনো তার দীর্ঘ কর্মময় দক্ষতা ও সাফল্যময় অভিজ্ঞতাকে আড়াল করে প্রধানমন্ত্রীর বান্ধবী বলে পরিচয় প্রদান করেন অথচ তিনি একজন জাতীয় পর্যায়ের সংগ্রামী সাংবাদিক নেত্রী। শাহনাজ সিদ্দিকী আরও বলেন কৃষি ক্ষেত্রে, নিপীড়িত নারী শ্রমিকদের মজুরি প্রদানে এখনো শোষনের বঞ্জনা প্রতিনিয়ত নারীর অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করছে এ বিষয়গুলো অবহেলিত ভাবে নয় গুরুত্বের সাথে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় রিপোর্ট হতে হবে। একে একে বাংলা ভিশনের নারী বিষয়ক সম্পাদক সবুজ ও কালবেলা সম্পাদক নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের এগিয়ে আসতে হবে এবং কর্মযজ্ঞে অংশ গ্রহণ মূলক কাজ করে সাফল্য মন্ডিত করার আশাবাদ ব্যাক্ত করেন। আক্ষেপের সুরে সাবেক ডিআরইউ নেত্রী মানবজমিনের তিক্ত অভিজ্ঞতার পাশাপাশি পুরুষ সহকর্মীদের সহযোগিতার হাতকে প্রসারিত করার আশাবাদ ব্যাক্ত করেন তার বক্তব্যে।

অনুষ্ঠানস্থলে পিআইবি মহাপরিচালক মডারেটর জাফর ওয়াজেদ তার মূল্যবান বক্তব্যে জানান- নারী পাতাগুলোর বর্তমান চিত্র চরিত্র কেমন হওয়া উচিত এবিষয়ে আলোচনার আহবান জানিয়ে বলেন আগেকার আমলে শোষিত সমাজে নারীরা প্রচুর শ্রম ও মেধার বিনিময়ে অর্থনৈতিক মানদণ্ডে আজও প্রতিষ্ঠিত পর্যায়ে উঠে আসতে পারেনি। তা সামগ্রিক ভাবেই। দৈনিক পত্রিকার সংবাদকর্মী হতে যেকোন সেক্টরে নারীরা এখনো হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছে অহরহ মতের অমিল হলেই। জেলা ও মফস্বল পর্যায়ে পৌঁছে দিতে হবে আদিবাসী নারীদের বঞ্চনার তথ্য, ধর্মান্ধতা ও অশিক্ষার প্রভাবে বাল্যবিয়েতে নারীর স্বাস্থ্যহীন ঝুঁকি, কর্মবিমুখ অসচেতন জীবন কিভাবে পর্যায়ক্রমিক প্রক্রিয়া উন্নয়নে জীবনযাপনকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং পিছিয়ে পড়ছে তারা, তাদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট /প্রতিবেদন এবং করনীয় প্রকাশ করতে হবে নারীপাতা গুলোতে।
শ্রদ্ধেয় পরিচালক তার বক্তব্যে আরও যুক্ত করেন চতুর্থ বিপ্লবের পর নারীরা আরও কঠিন বাস্তবতা ও চ্যালেন্জের মুখোমুখি হলে শ্রম ও গৃহস্থালি কাজে তাদের মূল্যায়নের পূর্বশর্ত হতে হবে প্রতিদিনের আর্থিক বরাদ্দ এবং পাপ্য স্বাস্থ্যসেবা সহ অন্যান্য ন্যায্য পাওনা আদায়ে আইনি সহায়তা প্রদানে রাষ্ট্রকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
সম্মানিত প্রশিক্ষক পারভীন সুলতানা রাব্বী এসময়ে তার গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যে যুক্ত করেন মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে নারীদের কথা বলার সুযোগ করে এগিয়ে পথে তাদের প্রতিনিয়ত অন্তরায় গুলোকে সামনে তুলে ধরে দিকনির্দেশনা মূলক পাতা প্রকাশ করতে হবে যাতে পাঠককূল ভুক্তভোগী উপকার ভোগ করে। বিটিভির সিনিয়র রিপোর্টার তার দীর্ঘদিনের কর্ম অভিজ্ঞতা থেকে বলেন এখনো সরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও ইন হাউজ পলিটিক্স এবং প্রচন্ড বৈষম্যের স্বীকারে তিনি ভালো একটি রিপোর্ট মনমতো করার সুযোগ পাননা। নিউজরুমে অসাংবাদিকেরা সেমিনারে সুযোগ পান অথচ আলগা খাতির না রাখায় অনেক সুবিধা বঞ্চিত তিনিও। নারী সম্পাদক বনশ্রী ডলি কর্মদক্ষতা, প্রতিনিয়ত সমস্যা মোকাবিলা, সহিংসতা উপেক্ষা ও সমন্বয় কর্মের মধ্যদিয়ে ক্যারিয়ার এগিয়ে নেওয়ার আশা জাগানিয়া বক্তব্য দেন। দৈনিক সময়ের আলোর নারী পাতার সম্পাদক লাবন্যলিপি তার স্বভাব সুলভ শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর বক্তব্যে বলেন নারীর পথ কখনও মসৃণ ছিলনা তবে অমসৃণ পথ মাড়িয়ে নারীর আজকের সাফল্য গাঁথাও কম নয়। চা শ্রমিক, খুদ্র নৃগোষ্ঠীর অর্জন গুলোকে খাটো করে দেখারও কোন সুযোগ নেই। সমকাল নারী বিভাগীয় সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধার এতিম কন্যা মৃত মুনীয়ার বিপক্ষে একটি নারী বিদ্বেষী দৈনিক সংবাদপত্রের দৈনন্দিন পাতায় প্রতিদিন খুন হওয়া মুনিয়ার প্রতি হিনমন্য নারী বিদ্বেষপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশের পর নৈতিক আদর্শের অবস্থান থেকে কর্মস্থল ত্যাগ করেন চাকরির অভাবের যুগেও। ভিকটিমদের সপক্ষে চিন্তা কাঠামো তৈরি, জনমত গঠন সেল, পত্রিকার স্লটে নারী বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ, ওয়ার্কিং এনভায়রনমেন্ট তৈরীতে সংশ্লিষ্টদের জরুরী ভূমিকা পালনে উদ্ভুদ্ধ করন এবং চলমান ইস্যুগুলোকে সামনের পাতায় প্রকাশ করে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সমাজে আলোর প্রতিবিম্ব হিসেবে দৈনিক সংবাদপত্রের নারী পাতার ভূমিকা টেকসই বাঁধনের উন্নয়নে সামিল করাতে হবে বলে সেমিনারের সর্বশেষ বক্তা পিআইবির গুণী প্রশিক্ষক মিজানুর রহমান গ্রামসি তার অমূল্য নির্দেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ করেন।

Related posts

Leave a Comment