নিউ মার্কেটে হামলার নেপথ্যে চাঁদাবাজি, ৩য় পক্ষের ইন্ধন দেখছেন গোয়েন্দারা

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

নিউমার্কেট থানা এলাকায় নিউমার্কেটসহ ২২টি মার্কেট রয়েছে। সেখানে বিশাল ফুটপাত জুড়ে হকারদের দোকানপাটও রয়েছে। সংসারের প্রয়োজনীয় সুই-সুতা থেকে শুরু করে রান্নাবান্নার সামগ্রী, কাপড়, তৈরি পোশাক, জুতা-স্যান্ডেল, কসমেটিকস, খেলনা, বিয়ের অনুষ্ঠানের সামগ্রী, গৃহের সৌন্দর্যবর্ধনের সামগ্রীসহ নানা জিনিস পাওয়া যায় এসব মার্কেটে। মার্কেটের অনেক দোকানের সামনের অংশ আলাদাভাবে ভাড়া দিয়ে দোকান বসানো হয়।
নীলক্ষেত, নিউমার্কেট ও সায়েন্স ল্যাব এলাকার প্রধান সড়কের দুই পাশের ফুটপাত চাঁদাবাজির অন্যতম বড় স্পটে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ফুটপাতের হকারদের কাছ থেকে ব্যবসার ধরন অনুযায়ী প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা চাঁদা তোলা হয়, প্রতিদিন যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২০ লাখ টাকা। মাসে ফুটপাত থেকে নূন্যতম ৬ কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়। বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীদের হাত ঘুরে চাঁদাবাজির একটি অংশ স্থানীয় কতিপয় নেতার পকেটে যায়। এর একটি ভাগ যায় পুলিশের কাছেও। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে ফুটপাতের এই চাঁদাবাজি। বিএনপি সরকারের আমলে একইভাবে চাঁদা স্থানীয় দলীয় নেতাদের পকেটে যেত। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শুধু ব্যক্তি পরিবর্তন হয়েছে। স্থানীয় একাধিক নেতার পকেটে যাচ্ছে এই চাঁদা।
সম্প্রতি এই এলাকার একজন রাজনৈতিক নেতার হাতে চাঁদাবাজির পুরো নিয়ন্ত্রণ চলে যায়। আগে স্থানীয় লাইনম্যান, দলীয় কর্মী ও বিভিন্ন গ্রুপের হাত ঘুরে চাঁদাবাজির টাকা ভাগাভাগি হতো। বর্তমানে ঐ নেতার হাতে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ পুরো চলে যাওয়ায় বঞ্চিত নেতারা ক্ষুব্ধ হন।
সোমবার নিউমার্কেটের দুই ফাস্টফুড দোকানের কর্মচারীদের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে চলা সংঘর্ষ কয়েক ঘণ্টা পর মালিক সমিতির মধ্যস্থতায় ঐ রাতেই সমাধান হয়। পরদিন ব্যবসায়ীরা যে যার মতো দোকানপাট খুলবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু রাতেই একটি গ্রুপ খবর প্রচার করে যে ঘটনার প্রতিশোধ নেবেন দোকানদার ও হকাররা। তারা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন। এই অপপ্রচার বঞ্চিত নেতাদের পক্ষ থেকে হয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে জানা যায়। পরদিন বেলা ১১টার দিকে দোকানদার ও হকাররা নিউমার্কেটের সামনে লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল বের করেন। এ সময় চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণকারী ঐ নেতার নাম উল্লেখ করে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয়। ওই নেতার বিরুদ্ধে স্লোগান শুনে অনেকেই হতবাক হয়ে যায়। কতিপয় শিক্ষার্থী জানান, এই সহিংস ঘটনার নেপথ্যের কারিগর চাঁদাবাজিতে বঞ্চিত ঐ নেতারা। তাদের সঙ্গে যোগ দেন একাধিক ছাত্রনেতা। তারাও চাঁদার ভাগ থেকে বঞ্চিত। উভয় পক্ষ পরিকল্পিতভাবে পরদিন ঐ ঘটনা উসকে দেয়।
ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, সাংবাদিক ও অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা কোনো ছাত্র বা ব্যবসায়ীর কাজ হতে পারে না। এখানে তৃতীয় পক্ষ থাকতে পারে। ঢাকা কলেজ কতৃ‌র্পক্ষও সংঘর্ষের পেছনে উসকানির কথা বলেছেন।
এই তৃতীয় পক্ষ কারা, কার নির্দেশে তারা হামলায় অংশ নিয়েছে—এসব বিষয়ে জানতে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণ করে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। অতি উত্সাহী হামলাকারীদের পরিচয় নিশ্চিত হতে কমপক্ষে ১০ ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ফুটেজ দেখে কয়েক জন হামলাকারীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা দোকানদার নাকি হকার, নাকি বহিরাগত, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি নিউমার্কেটে ফাস্টফুড দোকানের ঘটনায় মারধরের শিকার হওয়ার পর ক্যাম্পাসে ফিরে মিথ্যা তথ্য প্রচার করে উত্তাপ সৃষ্টি করা তিন ছাত্রকেও চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ঘটনাটি আমরা তদন্ত করছি। এ পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হবে। মামলায় ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Related posts

Leave a Comment