মেহেরপুরে এবার ভুট্টার বাম্পার ফলনে চাষিরা খুশি

মেহেরপুর প্রতিনিধি:
পুষ্টিগুণ ও অর্থকরী ফসল হিসেবে মেহেরপুর জেলায় প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টাচাষ হয়েছে। ৫ হাজার টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
ভুটাচাষের জমিগুলোতে প্রতিটি গাছে ধরা ভুট্টার মোচা পলিথিনে মুড়ে দেয়া হয়েছে পোকা ও পাখি প্রতিরোধে। গাছে ভুট্টার ফলন দেখে চাষিদের চোখে আনন্দের ঝিলিক। প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলন হবে বলে ভুট্টাচাষিরা আশা করছেন।
বিগত কয়েকবছরে ভুট্টাচাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় মেহেরপুরের চাষিরা ঝুঁকে পড়েছেন ভুট্টা চাষে। জেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে মাঠে মাঠে ভুট্টা চাষের সমারোহ। এক সময় যেসব জমিতে ধান, গম, তামাক চাষ হতো এখন সেখানে ভুট্টার চাষ করছেন। ভাল ফলন, ফসলের চাহিদা এবং ভুট্টা গাছ থেকে জ্বালানীর চাহিদা পুরণ হওয়ায় মেহেরপুরের চাষিরা ভুট্টা চাষ করছেন। জেলার তামাক চাষিরা তামাকের আবাদ কমিয়ে ভুট্টা আবাদে জোর দেয়া প্রসঙ্গে ঝাউবাড়িয়া গ্রামের ভুট্টাচাষি জিল্লুর রহমান জানান- তামাক চাষে মাটির উর্বরা শক্তি হ্রাস পাওয়া এবং পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রতিক্রিয়া বুঝতে পেরে তিনি ভুট্টার আবাদ করছেন। দেখা যায় প্রতিটি গাছে ৩-৪ টি করে ভুট্টার মোচা।
সদর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের ভুট্টাচাষি রবকুল হোসেন জানান- বৃষ্টি হলে যেন ভুট্টার পচন না লাগে এবং পাখি ও পোকাতে যেন ভুট্টা খেয়ে ফেলতে না পারে সেজন্য ভুট্টার মোচা ছোট ছোট পলিথিন ব্যাগ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। আর দিন কুড়ি পরেই আগাম চাষ করা ভুট্টা জমি থেকে সংগ্রহ শুরু হবে।
সদর উপজেলার উজ্জলপুর গ্রামের ভুট্টা চাষি আব্দুল কুদ্দুস জানান- বিঘাপ্রতি ভুট্টা চাষে তার খরচ হয় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। ৩৫ থেকে ৪০ মণ ফলন পাবেন বলে ধারণা করছেন তিনি। এ চাষির ধারণা বিঘাপ্রতি তার ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাভ হবে। ভুট্টার গাছ এবং কাঁদি জালানি হিসেবে তিনি ব্যবহার করেন।
সদর উপজেলার বামনপাড়া গ্রামের ভুট্টা চাষি সাদিকুল ইসলাম জানান- ভুট্টার ক্রেতা অনেক। গবাদিপশুর উন্নতমানের খাবার হিসেবে এর চাহিদা বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন কারণে ব্যাপক চাহিদার মুখে তিনি এবার ১০ বিঘা জমিতে ভুট্টাচাষ করেছেন। ক্রেতারা এই ভুট্টা থেকে তাদের নিজেদের ফিড মিল কারখানায় মুরগির বাচ্চার, মাছের, গরুর খাবার তৈরি করে থাকে। এজন্য চাষিরা ভুট্টাচাষে আগ্রহী বেশী।
গাংনী উপজেলার ভোমরদহ গ্রামের ভুট্টাচাষি জাহিদুল হাসান জানান, আমাদের এলাকায় ভুট্টা আবাদের তেমন একটি প্রচলন ছিলনা। বর্তমানে গো-খাদ্য, মাছের খাবার ও পোল্টি খাবার হিসেবে ভুট্টার ব্যাপক চাহিদা। আমি এবছর প্রথম দুইবিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছি। প্রতিটি গাছে ভুট্টার মোচা হয়েছে ৩/৪ টি করে।
জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের মতে, এ বছর ভুট্টার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছেল ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে। সেখানে চাষ হয়েছে ১৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা বিঘা প্রতি খরচ করে ফলন পাওয়া যায় ৩০-৪০ মণ। এক বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদে খরচ হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বিঘায় একজন কৃষকের কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা লাভ থাকছে। তাছাড়া ভুট্টাচাষে খরচ ও ঝুঁকি কম।
সদর উপজেলা কৃষি অফিসার আলমগীর হোসেন জানান- পুষ্টিমান ভুট্টা একটি লাভজনক আবাদ হিসেবে মেহেরপুর জেলায় চাষ হয়ে আসছে। সরকারের বিভিন্ন সহযোগীতা এবং কৃষি প্রণোদনার কারণে এবছর ভুট্টা আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলন ভাল করতে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আশা করি কৃষকরা লাভবান হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান- মেহেরপুর অঞ্চলের মাটি যেকোন চাষের জন্য উর্বর। মেহেরপুরে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ভুট্টার ফলন ভালো হবে বলে তিনি আশা করছেন। ভুট্টা চাষে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। কৃষি বিভাগ থেকে ভুট্টা চাষে চাষিদের সব ধরণের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।

Related posts

Leave a Comment