সীমান্তে সহিংসতা বৃদ্ধির কারণে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ঢাকার তলব

শুভদিন অনলাইন রিপোর্টার:

সীমান্তের ওপারে সহিংসতা বৃদ্ধির কারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে। ওই সহিংসতায় বাংলাদেশের কক্সবাজারে রাতে দু’জন নিহত এবং নতুন করে ১১৬ জনেরও বেশি বার্মিজ সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যের আগমন ঘটে।
কর্মকর্তারা জানান, সোমবার সীমান্তের ওপার থেকে ছুটে আসার মর্টার শেলের আঘাতে বাংলাদেশে দুজন নিহত এবং সীমান্ত এলাকায় সর্বশেষ ওই সহিংসতা সংশ্লিষ্ট ঘটনার বিষয়ে প্রতিবাদ জানাতে ঢাকা মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিয়াও মো-কে তলব করে।
মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানান, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার শাখার মহাপরিচালক মিয়া মো. মইনুল কবির রাখাইন রাজ্যের সহিংসতা সীমান্তের এপারে বাংলাদেশে এসে পড়ায়, বিশেষত ওই সহিংসতায় কক্সবাজারে দুজনের মৃত্যু ঘটার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।’
পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের দিকে সশস্ত্র সংঘাতের কারণে বাংলাদেশে হতাহতের ঘটনা ও বিশৃঙ্খলার পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রদূতের কাছে একটি তীব্র প্রতিবাদ বার্তা হস্তান্তর করা হয়েছে।
মাহমুদ আরো বলেন, আমরা তাকে জানিয়েছি যে, এটা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য।’
কর্মকর্তারা বলেছেন, রাষ্ট্রদূত তার সরকারকে বাংলাদেশের প্রতিবাদ সম্পর্কে অবগত করবেন বলে ঢাকাকে আশ্বাস দিয়েছেন।
এদিকে, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানিয়েছে, আজ সকালে মিয়ানমারের ১১৬ জন সৈন্য তাদের পোস্ট এবং যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এবার তাদের নিয়মিত সেনাও আধাসামরিক বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) এবং কিছু অন্যান্য সরকারি সংস্থার সদস্যের পাশাপাশি কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে।
বিজিবির মুখপাত্র শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সশস্ত্র সংঘর্ষের পটভূমিতে এ পর্যন্ত তাদের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি), নিয়মিত সৈন্য, অভিবাসন কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য ও অন্যান্য সংস্থার ২২৯ জন সদস্য বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।’
তিনি আরো বলেন, তাদের নিরস্ত্র করা হয়েছে এবং নিরাপদ হেফাজতে রাখা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে থাকা অন্য একজন কর্মকর্তা বলেন, সামরিক বাহিনী ও আধাসামরিক সৈন্যদের শনাক্তকরণের বিষয়ে বিস্তারিতভাবে নিশ্চিত করার জন্য একটি শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে, বিজিবি কর্মকর্তারা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল থেকে জানান, আজ সকালে মিয়ানমারের ১১৬ সৈন্য ও অন্যান্য কর্মকর্তা উখিয়া উপজেলার রহমতবিল সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। কারণ, সীমান্তের অপর প্রান্তে সরকারি সেনা এবং আরাকান আর্মির বিদ্রোহীদের মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষের তীব্রতা আরও বেড়েছে।
কর্মকর্তা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১১৬ জন সৈন্যের মধ্যে বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে এসেছে এবং কয়েকজনকে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহীন ইমরান জানান, ক্রমবর্ধমান সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে নাইখ্যংছড়ি, টেকনাফ ও উখিয়ার তিনটি সীমান্ত উপজেলার বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনকে মাঠের পরিস্থিতি বিবেচনা করে উচ্ছেদ শুরু করতে বলা হয়েছে।’
তবে, প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, সীমান্তের ওপারে ক্রমাগত লড়াইয়ের শব্দ অব্যাহত থাকায় অনেক বাসিন্দা ইতোমধ্যেই বেশ কিছু গ্রামের বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে ভয়াবহ লড়াই চলছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরবর্তীতে আরাকান আর্মির সদস্যরা সীমান্তবর্তী এলাকায় সরকারি সামরিক ও অন্যান্য স্থাপনা দখল করে নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।  – বাসস

Related posts

Leave a Comment