করোনায় রাউন্ড দ্যা ক্লক টাস্কফোর্স জুরুরি

মোঃ সাখাওয়াত হোসেন, এসিএস

করোনা যুদ্ধে সম্মুখ ভাগের লড়াইটা ডাক্তারকেই করতে হবে। সাথে থাকবে নার্স ও টেকনোলজিস্ট। চিকিৎসকরাই নেতৃত্ব দিবেন। বাকি সবাই তাদেরকে সাপোর্ট দিবেন। কারন এই যুদ্ধ অস্ত্রের নয়। প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী সবাই একই সাথে তাদের সহযোগীতায় কাজ করবেন। পৃথিবীজুড়ে ডাক্তার নার্স থেকে অ্যাম্বুলেন্স চালক, এক কথায় চিকিৎসা সেবায় জড়িত কর্মীরাই লড়ছেন। ইতালি থেকে আমেরিকা প্রতিটা আক্রান্ত দেশে লড়তে লড়তে ক্লান্ত অবসন্ন দেহে চিকিৎসক, নার্সরা হাসপাতালের মেঝেতে একজনের গায়ে আরেকজন শুয়ে পড়ছে। কিন্তু আমাদের দেশের চিত্রটা ভিন্ন। এখানে পুলিশ প্রশাসন সেনাবাহিনীকেও মাঠে অনেক পরিশ্রম করতে হচ্ছে। কারন এই দেশের অসচেতন অনিয়ন্ত্রিত জনগনকে ঘরে ঢুকানোই সবচাইতে কষ্টের। তাছাড়া সরকারি ত্রান পৌছে দেওয়ার কাজটাও তারা করছেন।

ডাক্তার রা নিজের জীবনকে ঝুঁকিতে দিয়ে লড়ছে। পরিবার সন্তান প্রিয়জন সব ভুলে! অনেকে লড়াইয়ে ভয়ঙ্কর ছোয়াঁচে জীবাণু করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। WHO এর হিসেবে প্রতি ১০ জন সংক্রমণে ১ জন ডাক্তার আক্তান্ত হয়েছেন। তবু সতীর্থরা দমে যাননি। লড়ছেন অদম্য মনোবলে। পৃথিবীজুড়ে কান্না আর লাশের মিছিল! লাশ রাখার জায়গা নেই। এমন মর্মান্তিক মৃত্যু যেনো প্রিয়জনের মৃত্যুতেও কান্নারও সুযোগ নেই। সন্তানের কাছে মা যায় না। দাফনে এতো আত্মীয় বন্ধু পরিচিতজন কেউ নাই! অপরিচতরাই শেষ বিদায় দিচ্ছেন।

বাংলাদেশও আক্রান্ত বিশ্ব মহামারিতে।
এখানে চিকিৎসকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিতর্ক হচ্ছে। দেশের সব হাসপাতাল-ক্লিনিকে মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে না এমন অভিযোগ দেশজুড়ে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন! আমি নিজেও ক্ষুব্ধ ছিলাম। চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে করোনার আক্রমণের মুখে পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারায়। ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পুরো সত্য নয়। অনেকে কাপুরুষের ভূমিকা রাখলেও সবাই নয়। আর নয় বলেই চিকিৎসক নার্সরা লড়াই করছেন। মৃত্যু ভয়কে তোয়াক্কা না করেই। সন্তানকে রেখে যখন বাইরে যান তারা জানেন বুকটা কেমন মোচড় দেয়।
আমরা শুরুতেই পরীক্ষার কিট, ল্যাব, পিপিই পর্যাপ্ত দিতে পারিনি। এই দোষ কার??
অনেকে বলেন চিকিৎসকরা প্র্যাকটিসে এক রাতে দু’শ রোগী দেখেন! প্রাইভেট হাসপাতাল গুলো টেস্টের নামে জবাই করে। কসাই সবাই নয়। একাংশ, এদের কেউ কেউ ডাকাতও। এদের মানবসেবার ধর্ম নেই। এরা দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, যৌননিপীড়ক চিকিৎসক কর্মকর্তা। সব পেশায় এরকম আছে। কিন্তু প্রকৃত চিকিৎসকদের তাদের দলভুক্ত করলে, ভয় দেখালে তারাও দেশ ছেড়ে দেবে। চিকিৎসকদের সংখ্যাগরিষ্ঠরা সেবা দেন মানুষের জীবন রক্ষার।

কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এই অবস্থা কেন?? দেশে ১৮ কোটি জনগণের চিকিৎসক মাত্র ১ লাখ। এরমধ্যে ৩০ হাজার সরকারি হলে বেসরকারি ৭০হাজার। জিডিপির ১ ভাগ চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ। এরমধ্যে সরকারি স্বাস্থ্য সেবার সঙ্গে জড়িত মন্ত্রী থেকে আমলা চিকিৎসক কর্মকর্তা কর্মচারীরা। কি পরিমাণ অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার হয় তার কোন হিসেব নেই । অর্থ অপব্যবহারের কারনে  চিকিৎসার বরাদ্দ মানুষের সেবায় কোন কাজে লাগেনি। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে সিভিল সার্জন কার্যালয় হয়ে সরকারি হাসপাতালের কর্মচারীরা বিশাল অসংগতির সাথে অভিশপ্ত। বেসরকারি হাসপাতাল গুলো সেবার নামে লাগামহীন বানিজ্য করছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় এর কোন তদারকি নাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনা পরবর্তী  সময়ে আপনি এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবেন আশা করি।
করোনার ভয়াবহতায় আজকের বাংলাদেশ এখন কঠিন বিপর্যয়ের মুখে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা ভরসা পাই। তার ভাষণে আশা সাহস শক্তি যুগিয়েছেন বাংংলাদেশে প্রতিটি মানুুষের মাঝে। তার পরিকল্পনা প্রণোদনা উজ্জ্বীবিত করেছে। আপনার উপর মানুষের শতভাগ আস্থা আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি একমাত্র ভরসারআ শ্রয়স্থল। দেশের বিশেষজ্ঞসহ সবাইকে নিয়ে অবিলম্বে যুদ্ধকালীন টাস্কফোর্স বা জাতীয় দুর্যোগ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করুন। হোয়াইট হাউসের আদলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে রাউন্ড দ্য ক্লক এটি সচল থাকবে।

আমাদেরকে আরো কঠিন আরো সময়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।
১। অবিলম্বে প্রয়োজনীয়  ভেন্টিলেটর আমদানির ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সারাদেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে আইসিইউ বেড তৈরির জরুরি উদ্যোগ নেওয়া ।
২। সারাদেশে হাসপাতালগুলোতে  করোনা চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড করতে হবে। প্রচুর কিট সরবরাহ ও টেস্ট করার ব্যবস্থা নেওয়া।
৩। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল কে সমন্বয় করে কোভিড ও ননকোভিড রোগী  আলাদা চিকিৎসার জন্য নির্দেশনা দিতে হবে।
৪। নতুন হাসপাতাল এর চিন্তা বাদ দিয়ে কিছু বেসরকারি হাসপাতাল সরকারের তত্ত্বাবধানে নিয়ে আসতে হবে।
৫। হাসপাতাল গুলোর আশে পাশে সব আবাসিক হোটেল গুলোকে রিজার্ভ রাখতে হবে যাতে প্রয়োজনে কাজে লাগানো যায়। বিশেষ করে ডাক্তার নার্সদের থাকার জন্য।
৬। কোভিড চিকিৎসায় বিশেষ ট্রেনিং সারা দেশের সব ডাক্তার নার্সদের অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া যেতে পারে

৭। প্রয়োজনে সারাদেশে নুন্যতম ৩০-৫০ হাজার সেচ্ছাসেবক বাছাই করে ট্রেনিং দিয়ে রাখুন যাতে কোভিড চিকিৎসায় প্রয়োজনে ভূমিকা পালন করতে পারে। ( বিশেষ করে মেডিকেল ও ননমেডিকেল ছাত্রদের নিয়ে)।

আমরা চাইনা আমাদের এমন কঠিন সময় আসুক। কিন্তু আমাদের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে যাতে আমরা মোকাবেলা করতে পারি।
আল্লাহ আমাদের দেশকে করোনার কঠিন থাবা থেকে হেফাযত করুক।
সবাই ঘরে থাকুন। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বের হবেন না। ঘরে থেকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করুন। ডাক্তার ও প্রশাসন কে সহযোগীতা করুন।

Related posts

Leave a Comment