ঘুড্ডি

-কাজী মোঃ হাসান কেমন করে যেন এই হযরত আলীর সাথেই রঞ্জুর ভীষণ খাতির হয়ে যায়। হযরত আলীও তাকে খাস মুরিদ বানিয়ে ফেলে। মনের অজান্তেই দু’জনের সম্পর্কটা গিয়ে দাঁড়ায় কাকা-ভাতিজায়। হেমন্তের শেষ। শীতের পদধ্বনি সবদিকে। প্রায় প্রতিদিনই ভোর রাতের দিকে কায়াশা পড়ছে। মাঝে মাঝে ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে সব এলাকা। তখন কুয়াশার ফাঁক দিয়ে ঝোঁপের মধ্যে টিপটিপ করে জ্বলতে থাকা জোনাকীর আলো ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না। এমনকি, গাছপালা পর্যন্ত আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা যায় না। সকালে ঘুম থেকে উঠলেই দেখা যায়- গাছের পাতা বা ঘাসের ডগায় ঘামের মতো ফোঁটা…

Read More

সাদা ঘোড়া

-কাজী মোঃ হাসান কয়েক দিন পর। আব্বুর কাছে মিষ্টি খাওয়ার বায়না ধরে দু’ভাই। কিন্তু বায়না ধরলেই তো আর হয় না, বাড়িতে মিষ্টি কোথায়? আগে বাজার থেকে আনতে হবে, তারপর মিষ্টি খাওয়া। তাই পরদিনই রঞ্জু আব্বুর সাইকেলের সামনের হেন্ডেলে চড়ে বাজারে গেলো মিষ্টি কিনতে। বাজারে মহাদেব ঘোষের মিষ্টিই সেরা। দোকানে ঢুকতেই এক প্লেট মিষ্টি এনে দিলেন মহাদেব ঘোষ নিজে। রঞ্জু এক বসাতেই টপাটপ গিলে ফেলে তিনটা রসগোল্লা। আর এতেই পেট ভরে একধম ঠাসা। মহাদেব ঘোষ আরও কয়েকটা চমচম ও সন্দেশ এনে দিলেন। কিন্তু রঞ্জুর পক্ষে আর কিছু খাওয়া প্রায় অসম্ভব। তবু…

Read More

জীনের কবলে রঞ্জু

-কাজী মো: হাসান সব বিদায় মূহুর্তই খুব কষ্টের। এতোদিন যাদের সঙ্গে হেসেছে, খেলেছে, সুখ-দুঃখগুলো মিলেমিশে ভাগাভাগি করে উপভোগ করেছে, সেই বন্ধুদের ফেলে রঞ্জুর এই চলে যাওয়াটাও সত্যি খুব কষ্টের। বন্ধুরা অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। রঞ্জু তো নয়-ই, সবার মুখে একটাই কথা- : আবার কবে আসবি? কী করে বলবে সে? রঞ্জু কী জানে, আবার কবে আসবে? পরদিন সকালেই রঞ্জুরা চলে যায় নতুন বাড়িতে। জায়গাটা যে একদম নতুন, এমন নয়! সে বহুবারই এখানে এসেছে। কখনো ঈদ উপলক্ষ্যে, কখনো বা দু’তিন দিনের জন্য বেড়াতে। হয় দাদুর সঙ্গে, নয় আব্বুর সঙ্গে।এখানে বলে…

Read More

কবর জিয়ারত

-কাজী মোঃ হাসান যাওয়ার আগের দিন আম্মু স্থানীয় কবরস্থানে গেলেন মামার কবর জিয়ারত করতে। এখানে দীর্ঘ তিন বৎসর যাবৎ শুয়ে আছেন রঞ্জুর একমাত্র মামা। মামার মৃত্যু, সে এক করুণ কাহিনী। এই ঘটনাটা শুধু রঞ্জুকেই নয়- বাড়ির সব্বাইকে ভীষণ ভাবে নাড়া দিয়ে যায়, দুঃখ দেয়, কাঁদায়। একমাত্র সন্তান রঞ্জুর নানু। খুব বড় লোক না হলেও জমিজমা মন্দ ছিলো না। হেসে খেলেই চলে যেতো তাঁদের সংসার। আশ্চর্যের ব্যাপার, রঞ্জুর মামাও চার বোনের মধ্যে একমাত্র ভাই। আম্মু এবং মামা ছিলেন পিটাপিঠি। তবে মামাই বড়। লেখাপড়া করতেন একই স্কুলে। সারা বৎসর দু’জনে একসঙ্গে ছয়…

Read More

অসুস্থ রঞ্জু

-কাজী মোঃ হাসান   তিন দিন পর। রঞ্জুদের বাড়িটা পূর্বমুখি। বাড়ির সামনে বড় উঠোন। তারপরেই গ্রাম্য রা¯তা। রাস্তাটা সরকার বাড়ির গুদারাঘাট থেকে নদীর তীর ঘেষে সোজা উচিতপুরা বাজার পর্যন্ত গেছে। এর পূর্ব পাশেই রঞ্জুদের ছাড়াবাড়ি, যেটা নদীতে গিয়ে ঠেকেছে। এখানেই রঞ্জুদের শান বাধানো ভাঙ্গা ঘাট। আগে ছাড়াবাড়িটা যত বড় ছিলো এখন ততটা নেই। প্রতি বছরই নদীর দাপটে একটু একটু করে ভাঙ্গছে। আগে এখানে নাকি অনেক বড় বড় গাছপালা ছিলো, ছিলো খেলার মাঠ। সে সব রঞ্জুরা দেখেনি। শুধু শুনেছে। এখন তিনটা নারিকেল, দুইটা তাল এবং ছয়টা আম গাছ ছাড়া কিচ্ছু নেই।…

Read More

নৌকা বাইশ

-কাজী মোঃ হাসান প্রতি বছর ভাদ্র মাসের পয়লা তারিখে নৌকা বাইশ (বাইচ) হয় রঞ্জুদের বাড়ির সামনের নদীটায়। এবারও তার প্রস্তুতি চলছে পুরুদমে। শুনা যায়- কালাপাহাড়িয়া, কদমীরচর, বৈদ্যারবাজার, নবীনগর, শ্রীমদীর ওপার থেকেও বাইশের নৌকা আসবে। তবে যত নৌকাই আসুক খাগকান্দার ধনু বেপারীর নৌকার সঙ্গে এ পর্যন্ত কেউ পারেনি, সামনেও কেউ পারবে বলে মনে হয় না। বেপারীর নৌকাটা লম্বায় ত্রিশ হাত এবং পাশে (প্রস্তে) পাঁচ হাত। সেগুন কাঠের তৈরী। মোট মাল্লা পঁত্রিশ জন। আড়িতে থাকেন তিন জন। মেইন আড়িতে গঞ্জর আলী। একদম সামনের গলুইয়ে বসে বৈঠা টানেন মন্টুর বাপ ফালাইন্যা। এ ছাড়া…

Read More

কুস্তি খেলা

-কাজী মোঃ হাসান সাত সকালেই রিন্টু এসে খবর দিয়ে গেলো আজ রাতে লতিফ পোদ্দারের বাড়ির উঠানে কুস্তি খেলা হবে। ফাইনাল খেলা। হাজির টেকের সঙ্গে মধ্য পাড়ার। রাত আটটায় শুরু হবে। বর্ষায় রাস্তা-ঘাট ডুবে যাওয়ায় ইদানিং সব খেলাই ঐ উঠোনে হচেছ। উঠোনটাও বেশ বড়। অনেক মানুষ ধরে। তবে ফাইনাল বলে আজ কতটা মানুষ ধরবে- সে আল্লাই জানেন! কিন্তু রঞ্জুর ভাবনা অন্য জায়গায়। সে খেলা দেখতে পারবে তো? লেখাপড়া ফেলে রাতের বেলা কিছুতেই দাদু খেলা দেখতে দেবেন না। দাদু কেন, অন্য কেউ-ই এ ব্যাপারে ছাড় দেবে না তাকে। জেঠাজী পর্যন্ত না। এখানে…

Read More

নিরাগ দেখা

-কাজী মোঃ হাসান বর্ষার এই সময়টায় মেঘনা পারের মানুষগুলোর হাতে তেমন কোন কাজ থাকে না। তাই প্রতি বছরই কয়েকজন মিলে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে বড় বড় নৌকা নিয়ে গাড়িয়ালদের মতো উত্তরে ধান কাটতে যায়। বর্র্ষা মৌসুম এলেই হঠাৎ করে পাহাড় থেকে তীব্র বেগে পাহাড়ী ঢল নামে। পথ ঘাট ভাসিয়ে একাকার করে দেয়। তলিয়ে যায় পাকা ধান সহ মাঠের নানা ফসল। ইচ্ছে থাকলেও সমস্ত ফসল কাজের লোকের অভাবে ঘরে তোলা যায় না। ভীন জায়গা থেকে আসা ঐ লোকগুলো টাকার পরিবর্তে অথবা একটা নির্ধারিত পরিমাণ ধানের বিনিময়ে তলিয়ে যাওয়া ক্ষেতের ধান বা…

Read More

জ্যাঠাজি

-কাজী মোঃ হাসান পাঁচ-সাত দিনের মধ্যেই রঞ্জু তার আগের ফর্ম ফিরে পেলো। সকালে মক্তব, রাতে দাদুর পড়া, বিকেলে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা এবং খেলাধুলা সহ সবকিছুই চললো সমান তালে। দ্রুত রোগ মুক্তির কারণে বাড়ির সবাই ভীষণ খুশী। এদিকে জ্যাঠাজি নদী থেকে গোসল করে এসেই রঞ্জুর উদ্দেশ্যে ডাকাডাকি শুরু করে দিলেন- : কই রে আমার খোকা বাবু! এদিকে আয় তো! ডাক শুনে- জে আজ্ঞে! বলে জ্যাঠাজির কাছে ছুটে গেলো রঞ্জু। তাকে কাছে পেয়ে দুই কাঁধ ধরে ঝাকুনি দিয়ে শরীরের বলটা পরীক্ষা করলেন তিনি- : বাহ্! আমাদের খোকা বাবু তো একদম ফিট। হ্যাঁ…

Read More

রঞ্জুর ছেলেবেলা

-কাজী মোঃ হাসান পর্ব-৪ রঞ্জু নিজের অপরাধটা টের পায়। তাই বকুনি ঝকুনি যা-ই ধিক কিছু গায়ে মাখে না। শুয়ে শুয়ে শুধু ব্যথায় নাকি কান্নার মতো গ্যানর গ্যানর শব্দ তুলে। আর দাদীর কোলে মুখ লুকিয়ে দাদুর রোষানল থেকে বাঁচার চেষ্টা করে। দাদী, দাদুর কথা মতো হারিকেনটা আনতে যান মাচানের নীচ থেকে। সলতেটা সামান্য বাড়িয়ে বিছানার পাশে রেখে দেন সেটা। তার পর একটা কাপড়ের কুন্ডলি বানিয়ে হারিকেনের তাপে গরম করে রঞ্জুর কানে সেক দিতে লাগলেন উঠকন্ঠা নিয়ে। এই করতে করতে ফজরের আযান পড়ে যায়। সকাল হতেই ছুটে আসেন সবাই। বড় চাচা, বড়…

Read More